ঢাকা, সোমবার   ০৪ নভেম্বর ২০২৪

রনাঙ্গণের যোদ্ধাদের শক্তি যোগায় গান-কবিতা (ভিডিও)

আদিত্য মামুন

প্রকাশিত : ১১:০৫, ১৭ মার্চ ২০২২

১৯৭১ সালে গান-কবিতা গুলির চেয়েও শক্তিশালী অস্ত্র হিসাবে কাজ করেছে। তৎকালীন সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রাই বাংলাদেশ নামে অসাম্প্রদায়িক সার্বভৌম রাষ্ট্র সৃষ্টিতে রেখেছে ঐতিহাসিক ভূমিকা।

হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, অসাম্প্রদায়িক চেতনা আর মায়ের ভাষা- এসবই বাঙালির আত্মজ। যুগে যুগে বেনিয়া শাসকগোষ্ঠির হাতে ভুলণ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রাও। তারই সর্বশেষ পেরেক ঠুকেন ভারত ভাগের পর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। 

এরপরই আত্মঅধিকার আদায়ে একাত্ম হয় বাঙালি, ঝাঁপিয়ে পড়ে মাতৃভূমি রক্ষায়। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের কবি-লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের অপ্রতিরোধ্য কর্মকাণ্ড শক্তি যুগিয়েছে রনাঙ্গণের যোদ্ধাদেরও।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১, এই সময়েই বাঙালির সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞান আর পরম্পরাই আজকের বাংলাদেশ। পাক শোষকরা বাউলের এই চারণভূমিতে দমিয়ে দিতে চেয়েছিল রবীন্দ্রনাথকেও। কী ছিল স্বাধীনতা-পূর্ব সাংস্কৃতিক আবহ! বলছেন এই নাট্যজন।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, “৭১ এর এই মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে শিল্পী-সাহিত্যিকরাও একজোট হয়েছিলেন। লেখক সংগ্রাম শিবির গঠন করা হয়েছিল, অন্যরা করেছিলেন বিক্ষুব্ধ শিল্পী সংগ্রাম পরিষদ। সেটা দিয়ে শিল্পীদেরকে উদ্বুদ্ধ করা, খোলা ট্রাকে করে বিভিন্ন জায়গায় পথনাটক ও অভিনয় করা হয়।”

শোষিত বাঙালি ৫২ সালেই পেয়ে যায় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’র মতো অমর পঙতি। একে একে মাহবুবুল আলম চৌধুরীর ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’, আব্দুল লতিফের ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইর‌্যা নিতে চায়’ কিংবা শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’,  যা ছিল প্রারম্ভিক আন্দোলনের সূতিকাগার, বলছেন এই গেরিলা যোদ্ধা।

গেরিলাযোদ্ধা ও নাট্যজন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “সংস্কৃতির সেই সঙ্গীতগুলোকে শরীরে নিয়েই আমরা ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে শামিল হয়েছিলাম।”

মুনীর চৌধুরী জেলে বসেই রচনা করেন ‘কবর’ নাটক। বসে ছিলেন না অন্য কবি-সাহিত্যিকরাও। একেকটি কবিতার চরণ তখন স্লোগান হিসাবে কাঁপিয়েছে রণাঙ্গণ। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’র মতো গান ছিল বড় অস্ত্র। কখনও কাজ করেছে মুক্তিযোদ্ধার সাংকেতিক বার্তা হিসেবেও।

নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “আকাশ বাণী কোলকাতা থেকে একটি গান বাজল “আমার পুতুল আজকে যাবে শ্বশুরবাড়ি’। এই গানটি বাজার সাথে সাথে আমাদের গেরিলা নৌ কমান্ডাররা নদীতে, সমুদ্রে সব জায়গায় বিপদসঙ্কুল সাঁতার কেটে বুকে মাইন নিয়ে জাহাজের সঙ্গে লাগিয়ে দিয়ে চারটি জায়গায় একসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটায়।”

লাখো শহীদের রক্তে কেনা এই দেশ কোনও ধর্ম নয়, বরং ভাষা ও সংস্কৃতি দিয়েই এগিয়ে যাবে- এমনই প্রত্যাশা সাংস্কৃতিক পুরোধাদের।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি