ঢাকা, শনিবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বাঙালি সংস্কৃতিতে বড়দিন উত্সব

প্রকাশিত : ১৭:২৫, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৭:৫২, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

বড়দিন সারা বিশ্বের খ্রিষ্টানদের জন্য একটি বিশেষ উত্সবের দিন। এই উত্সব ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে এবং মানুষ ও মানুষের মধ্যে মিলনের উত্সব। এই মিলন উত্সবে মানুষ স্বর্গীয় দূত বাহিনীর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়ে উঠে, ‘জয় জয় উর্ধ্বলোকে পরমেশ্বরের জয়, ইহলোকে নামুক শান্তি তাঁর অনুগৃহীত মানবের অন্তরে’ (লুক ২:১৪)। ঈশ্বরপুত্র যীশু পিতা ঈশ্বরের এক মহা দান। দানু দাতাকে ঘিরে খ্রিষ্টভক্তগণ উত্সবে মেতে উঠে আর প্রকাশ করে তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। বড়দিন উত্সব অর্থপূর্ণভাবে উদ্যাপন করার জন্য বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর খ্রিষ্টানগণ নিজ নিজ কৃষ্টি ও সংস্কৃতি অনুসারে আধ্যাত্মিক ও বাহ্যিক প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন।

এদেশের খ্রিষ্টানেরা সারা বছর ধরে প্রতীক্ষা করতে থাকে এই বিশেষ দিনটির জন্য। দিনটি উদ্যাপনের জন্য খ্রিষ্টভক্তগণের মধ্যে বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিকভাবে মানসিক প্রস্তুতি চলতে থাকে। গৃহের সংস্কার সাধন, নতুন জিনিসপত্র ক্রয়, ঘরবাড়ি সজ্জিতকরণ, ঝাড়গোছ শুরু হয়ে যায় প্রায় এক মাস আগে থেকেই। কোনো কোনো পরিবার বিবাহের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেয় এ বড়দিনের সময়কে, যা বড়দিনের উত্সবে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। পরিবার, সমাজ, গীর্জাকে কেন্দ্র করে বড়দিনের প্রস্তুতি চলতে থাকে প্রায় একমাস ধরে। শহরে বসবাসকারী সন্তানসন্ততি, আত্মীয়-স্বজন নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে চলে আসে এ বিশেষ দিনটি উদ্যাপনের জন্য। বড়দিনকে ঘিরে ঘটে যায় পারিবারিক মিলনমেলা।

দিনটি উদযাপিত হয় আঞ্চলিক, জাতিসত্তাগত বৈশিষ্ট্য, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে। বাঙালিরা সকলে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দিনটি উদযাপন করার চেষ্টা করেন। নতুন পোশাক পরিচ্ছদ, নতুন আসবাবপত্র, গৃহ মেরামত, রকমারি পিঠা তৈরির ধূম, পোলাও-কোর্মা, মাছ-মাংসের রকমারি রান্না ইত্যাদির মাধ্যমে দিবসটির তাত্পর্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। সকল আত্মীয়-স্বজন বছরে একবার হলেও বড়দিন উপলক্ষে পরস্পরের বাড়িতে বেড়াতে যায় এবং পরস্পরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে, আনন্দের ভাগাভাগি করে নেয়। বড়দিনকে কেন্দ্র করে কোথাও মঞ্চ নাটক, কোথাও কীর্তনের প্রতিযোগিতা, কোথাও মেলা, কোথাও আবার প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়ে থাকে। কোথাও কোথাও হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকেরা ঢোল, করতাল বাঁশি ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বাড়ি বাড়ি বাজিয়ে পয়সা আদায় করে। সেটা খ্রিষ্টানদের জন্য উপভোগ্য হয়। এভাবেই গ্রাম বাংলায় বড়দিন একটি আনন্দ মুখর উত্সবে পরিণত হয়।

সংস্কৃতিমনা মান্দি কৃষ্টিতে বড়দিন এক অনাবিল আনন্দ ধারা বয়ে নিয়ে আসে। বড়দিনকে আরও বেশি উত্সবমুখর, তাত্পর্যপূর্ণ করার জন্য তারা সভা করে। প্রীতিভোজ, চাঁদা সংগ্রহ, কীর্তন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, লটারি ইত্যাদি আনন্দ উত্সবের আয়োজন করা হয়। সকলে সাধ্যমত নতুন পোশাক, বাড়িতে ক্রিস্টমাস ট্রি বা তারা দিয়ে বাড়ি সাজায়। বাড়ি বাড়ি পানীয় তৈরির প্রস্তুতি ইত্যাদির মাধ্যমে বড়দিনকে তারা উত্সবমুখর করে তোলার চেষ্টা করে। এছাড়া রকমারি পিঠা, কেক, সুস্বাদু রান্নাবান্না তো থাকেই। এভাবে পারস্পরিক মিলন উত্সবের মাধ্যমে বড়দিন উদযাপন করে।

উরাঁও সংস্কৃতিতে যে কোনো উত্সবের পূর্বে ‘ভাজন’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রচলিত বিষয়। সেক্ষেত্রে বড়দিন অগ্রগণ্য। বাইবেলের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে ভক্তি ভরে সংগীত পরিবেশন করে খ্রিষ্টের আগমন বার্তা প্রচার করা হয়। সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে। কাদামাটি দিয়ে ঘরবাড়ি লেপন করা, ঘরের দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের নকশা আঁকা, ঐতিহ্যবাহী হাড়িয়া তৈরি করা ইত্যাদির মাধ্যমে বড়দিনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। যীশু বাড়ায় বরমর্দন, সারারাত ধরে নাচ গান ইত্যাদির মাধ্যমে তারা বড়দিন উদযাপন করে।

এভাবে পরিবার, সমাজে বড়দিন উদযাপিত হয় সঙ্গে সঙ্গে আধ্যাত্মিকভাবে গীর্জার বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন মিশা, পাপস্বীকার, গানের প্রস্তুতি, গীর্জাঘর সাজানো, গোশালাঘর সাজানো ইত্যাদির মাধ্যমে তারা শিশু যীশুকে বরণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

লেখক :অধ্যক্ষ, নটরডেম কলেজ, ঢাকা


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি