ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত : ১৭:১৯, ১৭ মে ২০১৯

১৯৮১ সনের ১৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে থাকা অবস্থায় জননেত্রী শেখ হাসিনা খবর পান, ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে এবং এর এক সপ্তাহ পরে আওয়ামী লীগের সেই সময়ের শীর্ষ নেতারা দিল্লি যান তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে। অবশেষে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

সেদিন প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে তাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত এলাকাজুড়ে লাখো জনতার ঢল নামে। বাবা-মা-ভাইসহ পরিবারের সব সদস্যের রক্তে ভেজা বাংলার মাটি স্পর্শ করে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই সময় জনতা সামরিক শাসক জিয়ার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিভিন্ন স্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে। ঝড়-বৃষ্টির আকাশ কাঁপিয়ে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকের চার পাশে স্লোগান ওঠে-

পিতৃ হত্যার বদলা নিতে/লক্ষ ভাই বেঁচে আছে, শেখ হাসিনার ভয় নাই/রাজপথ ছাড়ি নাই।

তিল ধারণের জায়গা ছিল না সেদিন কুর্মিটোলা থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত। লাখ লাখ লোকের সংবর্ধনায় তিনি জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।” “আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই।”

 ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছিলেন কেবল একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে নয়, জাতীয় রাজনীতির হাল ধরতে, সেনাশাসনের কবল থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে এবং অগোছালো আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্যে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের পর এবং শেখ হাসিনার দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এতটাই অগোছালো ও কোন্দল ছিল যে দলটি নানা উপদলে বিভক্ত ও নেতৃত্ব শূন্য ছিল। তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ, নেতাকর্মী সবার মধ্যে একটা ধারণা ছিল যে, আওয়ামী লীগের পরিণতি মুসলিম লীগের মতো হবে। তার ওপর এই দলটির বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা এতোটাই তীব্র ছিল যে, এসবকে প্রতিহত করে রাজনীতির মাঠে নতুনভাবে দাঁড়ানো মোটেও সহজ কাজ ছিল না।

এর ওপর শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত ও একটি ঘোলাটে সামরিক শক্তি নতুনভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠার সময়ে শেখ হাসিনা দলের হাল ধরলেন। নতুন করে সবকিছু গোছাতে লাগলেন, অভিজ্ঞতার অবস্থানটিও তখন তার ছিল যৎসামান্য, দলের রণনীতি, রণকৌশল নির্ধারণ, দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সামরিক শাসন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজালকে ছিন্ন করে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তখন পর্যন্ত বেশ জটিল এবং দুরুহ কাজ ছিল। অধিকন্তু পিতার মতো বরাবরই তিনিও ছিলেন ঘাতকের ষড়যন্ত্রের টার্গেট। একবার নয়, দুইবার নয়, শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছিল।

গোটা আশির দশক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সর্বাধিক ত্যাগ স্বীকার করার পরেও ৯১`এর নির্বাচনে পরাজয় অপ্রত্যাশিত ছিল। সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচিত হয় এবং ২৩ জুন ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা।

সব মিলিয়ে মোট ৩৮ বছর আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ১৯৮১, ১৯৮৭, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০২, ২০০৯, ২০১২ সালের কাউন্সিলে তিনি সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এবারও অষ্টমবারের মতো নির্বাচিত হলেন তিনি। এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বাংলাদেশে এর আগে কেউ এত বছর সরকারপ্রধান হতে পারেননি। এর বাইরে ১১ বছরেরও বেশি সময় তিনি ছিলেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। 

১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার দুঃসাহসী সিদ্ধান্তের কারণেই আওয়ামী লীগ আজ দল হিসেবে অনেক অনেক শক্তিশালী। দলটি আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামরিক শাসনের স্মৃতি পেছনে ফেলে দেশকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছে।  আপনার দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে, জাতি হিসেবে বাঙালিকে এবং দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে এক ভিন্ন উচ্চতায়। আপনি দীর্ঘজীবী হউন হে মহান নেত্রী। আজ দলটির একমাত্র কাণ্ডারি এবং বাঙালির শেষ আশ্রয়ের নাম- শেখ হাসিনা।

 লেখক: সাবেক প্রভোস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি