যে ভবনে শুরু হয়েছিলো আওয়ামী লীগের যাত্রা
প্রকাশিত : ১৮:৪০, ২৩ জুন ২০১৯
রাজধানীর টিকাটুলি এলাকায় কে এম দাস লেনে নান্দনিক স্থাপনা ‘রোজ গার্ডেন প্যালেস’। যেখানে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন একটি রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে এ দলের নতুন নাম হয় ‘আওয়ামী লীগ’। প্রথম সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক।
জানা যায়, ১৯৩১ সালে প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর বাগানবাড়িটি নির্মাণ করেন ব্যবসায়ী হৃষিকেশ দাস। পশ্চিমমুখী ওই দোতলা বাড়ির চারপাশ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা দুর্লভ প্রজাতির গোলাপের বাগানে সাজিয়ে তোলেন তিনি। সেই থেকে এর নাম হয় ‘রোজ গার্ডেন। বেহিসাবি জীবনযাপনের কারণে একপর্যায়ে দেউলিয়া হয়ে যান রোজ গার্ডেনের মালিক হৃষিকেশ দাস। ১৯৩৬ সালে ব্যবসায়ী খান বাহাদুর মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছে এ সম্পত্তি বিক্রি করে দেন তিনি। কাজী আবদুর রশীদ সেখানে গড়ে তোলেন প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরি। মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছ থেকে ১৯৬৬ সালে রোজ গার্ডেনের মালিকানা পান তার বড় ভাই কাজী মোহাম্মদ বশির (হুমায়ুন)। এর সুবাদে ভবনটি হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি’ নামে পরিচিতি পায়। ১৯৭০ সালে রোজ গার্ডেন প্যালেসের ইজারা নেয় বেঙ্গল স্টুডিও ও মোশন পিকচার্স লিমিটেড। ১৯৯৩ সালে রোজ গার্ডেনের অধিকার ফিরে পান কাজী আবদুর রশিদের মেজ ছেলে কাজী আবদুর রকীব। ১৯৯৫ সালে কাজী রকিবের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী লায়লা রকীব রোজ গার্ডেনের সম্পত্তির মালিক হন। এর নিচতলায় রয়েছে একটি হলরুম, আটটি কক্ষ ও করিন থিয়ান কলাম। ওপর তলায় আরেকটি হলসহ আরো পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। প্রাসাদের সামনে বাগানে আছে মার্বেলের তৈরি কয়েকটি সুদৃশ্য মূর্তি।
এই ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন গত বছর কিনে নেয় বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে সম্পত্তির বর্তমান মালিক ও তার সন্তানদের কাছ থেকে এ সম্পত্তি ক্রয়ের রেজিস্ট্রিকৃত দলিল গ্রহণ করেন। ‘সরকারি ক্রয় আইন’ অনুযায়ী ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকার বিনিময়ে বর্তমান মালিকের কাছ থেকে এ স্থাপনাটি কেনা হয়। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে এটিকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ সময় প্রধানমন্ত্রী একটি চেক এবং ঐতিহাসিক ভবনের বিনিময়ে রোজ গার্ডেনের মালিককে নগরীর গুলশানে ২০ কাঠা জমিসহ একটি একতলা ভবন বিক্রির একটি রেজিস্ট্রিকৃত দলিল হস্তান্তর করেন।
ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরান ঢাকার ইতিহাস তুলে ধরতে ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনকে জাদুঘরে পরিণত করা হবে। রোজ গার্ডেনের একটি ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। কেননা দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এখান থেকেই যাত্রা শুরু করে।
তিনি বলেন, এই দলের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। এই ঐতিহাসিক ভবনটি যথা যথভাবে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন স্থাপনা নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। সরকার এর আগে নগর ভবনে একটি জাদুঘর স্থাপন করেছে। তবে এখন সেই জাদুঘরটি রোজ গার্ডেন ভবনে স্থানান্তর করা হবে। তিনি ভবনটির মূল কাঠামো অপরিবর্তিত রেখে এটি সংস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত দলটি গঠনের পর এর কার্যালয় ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকার ৫৬, সিমসন রোডে স্থানান্তর হয়। এর পর ১৯৬৪ সালে ৯১ নবাবপুর রোডে। এরপর সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলি। পুরানা পল্টনে কার্যালয়ের স্থান স্থানান্তরিত হয়েছে কয়েকবার। এরপর যায় সার্কিট হাউস রোডে। ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের হাল ধরলে দলটির কার্যালয় হয় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে।
এনএম/আরকে