ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

অগ্নিঝরা ১৫ মার্চ: সরকারি-বেসরকারি ভবনে ওড়ে কালো পতাকা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৩২, ২০ মার্চ ২০২০

Ekushey Television Ltd.

অগ্নিঝরা মার্চের ১৫তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে সারা বাংলার অফিস-আদালতে পূর্ণ কর্মবিরতি চলে। রাজধানী ঢাকায় দিনব্যাপী সভা ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

সরকারি ও বেসরকারি ভবনের শীর্ষে এবং যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। আন্দোলন অস্তিত্বের লড়াইয়ে পরিণত হয় মুক্তিকামী বাঙালির কাছে। প্রতিপক্ষের আঘাতের জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত সবাই।

একাত্তরের এদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করতে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান কড়া নিরাপত্তার মধ্যে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। বিমানবন্দরে সামরিক গভর্নর লে. জেনারেল টিক্কা খান তাকে স্বাগত জানান। তবে কোনো সাংবাদিক ও বাঙালিকে এ সময় বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

এদিন কবি সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে তোপখানা রোডে মহিলাদের এক সভা হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেতার ও টিভি শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে গণসঙ্গীত, পথনাটক পরিবেশন করেন। নতুন সামরিক বিধি জারির প্রতিবাদে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে ছাত্র সভার আয়োজন করে।

সভায় ছাত্র নেতারা অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান।

দেশবাসীকে তাদের অধিকার বঞ্চিত করার প্রতিবাদস্বরূপ শিল্পী-বুদ্ধিজীবীরা তাদের খেতাব বর্জন অব্যাহত রাখেন। চারদিকে শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়।

শিল্পাচার্য জয়নুলের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন ও অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী তাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব বর্জন করেন। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে খেতাব বর্জনের বিষয়টি ব্যাপক সাড়া ফেলে।

খুলনার হাদিস পার্কের জনসভায় বাংলা জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান বলেন, বাংলার প্রতিটি মানুষ আজ বঙ্গবন্ধুর পেছনে একতাবদ্ধ। তিনি বলেন- রেডিও, টিভি, ইপিআর, পুলিশ বাহিনী, সেক্রেটারিয়েট প্রভৃতি আজ আওয়ামী লীগ প্রধানের আজ্ঞাবাহী।

পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নতুন দাবি উত্থাপন করে বলেন, কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির সমন্বয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হবে।

করাচিতে এক জনসভায় কয়েকজন প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা বলেন, ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অনেক কথাই বলেছেন। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন তার পিপলস পার্টি এ অঞ্চলে শতকরা আটত্রিশ ভাগ ভোটও পায়নি। তারা বলেন, ক্ষমতা লাভ করার জন্য আওয়ামী লীগই একমাত্র দল। রাতে ঢাকায় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ বিবৃতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ব্যাখ্যা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ আহ্বানে জনগণের নিরঙ্কুশ সাড়া পাওয়া গেছে।

১৯৭১ সালের মার্চে সারা দেশে চলছিল টানা অসহযোগ আন্দোলন। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না- এটি বুঝতে অসুবিধা হয়নি পাক সামরিক জান্তার। কূটকৌশল নিয়ে করাচি থেকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঢাকায় এলেও বাঙালিরা স্বাধীনতার দাবি থেকে এক চুলও সরেনি।

বরং এ দাবিতে সারা দেশ ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠছিল। বিভিন্ন শহরে সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং চলতে থাকে। এদিন নেত্রকোনায় সুইপার ও ঝাড়ুদাররা ঝাড়ু, দা, লাঠি ও কোদাল নিয়ে মিছিল করে। বগুড়া, খুলনা, রংপুর, লাকসাম, কুমিল্লা ও কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনতার পক্ষে মিছিল-সমাবেশ হয়।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি