বঙ্গবন্ধুর সমাজতান্ত্রিক বলিষ্ঠ কর্মসূচি অভিনন্দিত
প্রকাশিত : ১১:২৪, ২৭ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১১:৪৯, ২৭ মার্চ ২০২০
১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ ব্যাংক-বীমা ও বৃহৎ শিল্প জাতীয়করণের যে ঘোষণা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছিলেন তা দেশের রাজনৈতিক, ছাত্র, বাণিজ্য, শ্রমিক সংগঠনগুলো অভিনন্দিত করেছেন। বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়ে ন্যাপ নেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার একটি প্রথম কার্যকরী পদক্ষেপ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ করবেন বলে তিনি আশা করেন।
শ্রমিক অধিকার বিষয়ে
১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, আমি খুব শিগগিরই শ্রমিক প্রতিনিধিদের একটি সভা করছি। সেই সভায় শ্রমিক সংক্রান্ত সরকারের নীতি এবং আমাদের বিপ্লবী নীতিগুলো বাস্তবায়িত করতে তাদের যে পূর্ণ সহযোগিতা লাগবে সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এ ব্যাপারে পূর্ণ মতৈক্যে পৌঁছানোর পরে আমি আশা করবো যে শ্রমিক নেতারা আমার সরকার ও আমার সঙ্গে একযোগে কাজ করবেন এবং এই বিপ্লবী নীতিগুলো সরাসরি শিল্প এলাকায় কার্যকরী করবেন। তদুপরি শ্রমিকদের গুরুদায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে।
ছাত্রদের কর্তব্য
বঙ্গবন্ধু বলেন, আমার ছাত্র ভাইয়েরা যারা মুক্তিসংগ্রামে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তাদের প্রতি আমি আহ্বান জানাচ্ছি যে তারা যেন আমাদের বিপ্লবের লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য তাদের কাজ করে যেতে থাকে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বিপ্লব সাধনের উদ্দেশ্যে একটি পরিকল্পনা তৈরি নির্দেশসহ আমি একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করতে চলেছি।
কৃষক পৃষ্ঠপোষকতা
আমাদের সমাজে চাষিরা হল সবচেয়ে দুঃখী ও নির্যাতিত। নারী এবং তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য আমাদের উদ্যোগের বড় অংশ অবশ্যই তাদের পিছনে নিয়োজিত করতে হবে। সম্পদের স্বল্পতা থাকা স্বত্বেও আমরা চাষিদের স্বল্পমেয়াদি সাহায্য দানের জন্য ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি বলেও বঙ্গবন্ধু ভাষণে উল্লেখ করেন। এরপর তিনি তার উদ্যোগগুলো বিষয়ে জানান। তিনি বলেন, ২৫ বিঘা জমি যাদের আছে তাদের খাজনা চিরদিনের জন্য মওকুফ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে সমস্ত বকেয়া খাজনা মাফ করা হয়েছে। সারা বছর ধরে সেচের কাজ চালানো উন্নতমানের বীজ বপন সার কীটনাশক ঔষধ এবং প্রতিটি চাষীকে পর্যাপ্ত ঋণ দানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ভূ-মালিকানার ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের বৈষম্য দূরীকরণের জন্য পারিবারিক ও ব্যক্তিগত মালিকানার পরিধি কমিয়ে এনে পরিবার পিছু একশ বিঘা আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই উচ্চসীমা আরও কমিয়ে আনা যায় কিনা সেটা বিবেচনা করে দেখা হবে। ছোট ছোট চাষিদের অবশ্যই উৎপাদন করে তুলতে হবে।
দেশে বিদেশে সফরসূচি
বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে দেশের ভিতরে বা বাইরে খুব বেশি সফর করেননি। ৩ মাসে কেবল ভারত সফর করেছেন। এবং দেশের ভেতরে হাতে গোনা কয়েকটি জেলা শহরে গিয়ে বক্তৃতা করেছেন। তার বেশিরভাগই ছিল অস্ত্র জমা সংক্রান্ত। এবার তিনি জাপান ও দেশের ভেতরে আরও কয়েকটি সফর নির্ধারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন যে আসন্ন জাপান সফরের সময়ে সেখানে জাপানের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা করবেন। জাপানের একটি জাতীয় দৈনিকে এই খবর প্রকাশিত হয়। জাপানি সংবাদপত্রের এক প্রতিনিধি সঙ্গে ঢাকায় এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সেই বছরে জুন মাসে অথবা তারপরে তিনি জাপান সফরে যাবেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ৩১ মার্চ খুলনা সফর নিয়ে জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু হয়। ১৯৭২ সালের এই দিনে পত্রিকার খবরে বলা হয়, জাতির পিতা খুলনা যাবেন। তাকে বিভিন্নভাবে সংবর্ধনা জানানোর জন্য একটি সর্বদলীয় অভ্যর্থনা কমিটিও গঠন করা হয়। সেখানে অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধু একটি জনসভায় ভাষণ দেওয়ার কথা। রাজনৈতিক শ্রমিক ও ছাত্রলীগের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠকে মিলিত হবেন বলে জানানো হয়। অভ্যর্থনা কমিটির চেয়ারম্যান ও সম্পাদক বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী আব্দুল আজিজ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন বলেও দৈনিক বাংলার খবরে বলা হয়।