দুই বন্দর থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা লুটেন সোহায়েল
প্রকাশিত : ১১:১৬, ২২ আগস্ট ২০২৪
দখল, লুটপাট, নিয়মবহির্ভুত ব্যবসা, কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকার মালিক নৌবাহিনী থেকে সদ্য বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল। পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের চেয়ারম্যান থাকাকালে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সাথে যোগসাজসে অবৈধভাবে অর্জন করেন এই অর্থ।
এছাড়া র্যাব ও ডিজিএফআইয়ে থাকা অবস্থায় ২শ’ বিচারবর্হিভুত হত্যার অভিযোগও রয়েছে সোহায়েলের বিরুদ্ধে।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ উপার্জনসহ সব অপকর্মই করেছেন নৌবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল। দখল, লুটপাট, বন্দরকেন্দ্রিক কমিশন বাণিজ্য, মামলার তদন্ত ধামাচাপা দেয়া এ সবই ছিল তার নেশা।
বাহিনীর সুনাম-মর্যাদার কথা তিনি কখনো ভাবেননি। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুহাতে কামিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল মো. আহসানুল্লাহ (অব.) বলেন, “৫ জন মানুষের নাম উল্লেখ করে কেস দেওয়া হলে তার সঙ্গে আরও ২-৩ হাজার নাম ঢুকিয়ে দিত বাণিজ্য করার জন্য।”
সোহায়েলের ক্ষমতার দাপট দেশবাসী প্রথম দেখেছে যখন তিনি র্যাবের মুখপাত্র। পরে ডিজিএফআইয়ে যোগ দিয়ে হয়ে ওঠেন আরও ভয়ঙ্কর। ২০০ বিচারবর্হিভুত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সোহায়েলের বিরুদ্ধে। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও নিরীহ মানুষকে আটক করে অর্থ আদায়ের অভিযোগও বিস্তর। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত বাধাগ্রস্তের অভিযোগ আছে সোহায়েলের বিরুদ্ধে।
এসব অপকর্ম করে দ্রুতই শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কোনো জাহাজ বা ঘাঁটি কমান্ড কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কোর্স না করেই পান একের পর এক পদোন্নতি। সাথে প্রাইস পোস্টিং।
পায়রা সমুদ্র বন্দরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর অর্থের নেশা আরও বেড়ে যায় সোহায়েলের। অভিযোগ রয়েছে, অনিয়ম আর লুটপাটের মাধ্যমে এখান থেকেই কামিয়েছেন প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
এরপর সোহায়েলের সামনে আরও বড় সুযোগ আসে। রিয়ার এডমিরাল হয়ে ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন তিনি। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সাথে যোগসাজসে বন্দরকেন্দ্রিক সব ধরনের ব্যবসা, চুক্তি, ঠিকাদারি, নিলাম সবই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন সোহায়েল। অবৈধ কারবারিদের সহায়তায় কাস্টমসের কর্মকাণ্ডেও হস্তক্ষেপ করতেন তিনি। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অর্জন করেন ১২ হাজার বেশি টাকা।
সোহায়েলের অর্জিত বেশিরভাগ অর্থই পাচার হয়ে গেছে। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দুবাইসহ আরও কয়েকটি দেশে রয়েছে তার সম্পদ।
নিজ এলাকা ময়মনসিংহে বড় ভাই সাবেক যুগ্ম সচিব গোলাম কিবরিয়া ও আরেক ভাই শহিদের নামেও করেছেন বিস্তর সম্পদ। ব্রহ্মপুত্র পাড়ে ২শ’ একর জমি দখলে করেছেন সোহায়েলের পরিবারের সদস্যরা। যার মূল্য অন্তত ৪শ’ কোটি টাকা।
এসব সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখার তাগিদ টিআইবির।
ময়মনসিংহ টিআইবি সভাপতি শরীফুজ্জামান পরাগ বলেন, “যারাই দুর্নীতি করেছে এবং এদের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিল তাদেরকে অবশ্যই একটি যৌক্তিক বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।”
হাসিনার পতনের পর গত ১৯ আগস্ট বাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলকে। এরপর ২০ আগস্ট বনানী এলাকা থেকে গ্রেফতার হন তিনি।
দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে সোহায়েলের নামে ২০ হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়েছে।
এএইচ