বাড়ছে পরকীয়া ভাঙছে সংসার
প্রকাশিত : ১৫:১৭, ১৯ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ২১:১৫, ২০ মার্চ ২০১৮
প্রতিকী ছবি
বাবা মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে স্ত্রী-সংসার নিয়ে সুখে-শান্তিতেই দিন কাটছিল শাহিনের (ছদ্মনাম) । বিয়ের পর চাকরির সুবাধে বউ শারমিনকে (ছদ্মনাম) নিয়ে চলে আসে ঢাকায়। ব্যাংকে চাকরির কারণে দিনের অধিকাংশ সময় শাহিনকে পার করতে হয় বাসার বাইরে । বউ বাসায় একা একা দিন পার করেন। তেমন কোনো কাজ না থাকায় সারাদিন ব্যয় করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। হঠাৎ ফেসবুকে শারমিনের পরিচয় হয় জাহাঙ্গীর আলম বাপ্পী নামের এক ছেলের সঙ্গে। প্রথমে পরিচয় এরপর চ্যাটিং পরণতি প্রেম পর্যন্ত গিয়ে গড়ায়। দিনে দিনে এর গভীরতা বাড়তে থাকে। কর্মব্যস্ততা শেষ করে শাহিন বাসায় এলে শারমিন ঠিকমতো কথাও বলতে চান না। কোনো কিছু জানতে চাইলেও উত্তর দিতে চান না। সারাক্ষণ ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কার সঙ্গে এত কথা জানতে চাইলে স্বামীকে ছয়-নয় বোঝানোর চেষ্টা করেন শারমিন। এভাবে বেশকিছুদিন চলতে থাকে।
হঠাৎ বউয়ের এমন পরিবর্তন শাহিনের মনে সন্দেহের দানা বাঁধে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন স্ত্রী একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। নির্দোষ শাহিন স্ত্রীর কাছ এমনটি কখনোই আশা করেনি। তাই মেনে নিতে পারেনি স্ত্রীর পরকীয়া। এর জেরে শাহিন শারমিনের সোনালী সংসার ভেঙে খান খান হয়ে যায়। শুধু শাহিন-শারমিন নয়, প্রায় প্রতিদিনই পরকীয়ায় ভাঙছে হাজারো ঘর। আর এসবের জন্য দায়ী প্রযুক্তি অপপ্রয়োগ এবং তরুণ-তরূণীদের নৈতিক অবক্ষম। মুঠোফোনে ইন্টারনেটের সুবাধে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সহজলভ্য হওয়ায় তরুণরা ঝুঁকছে নানা অপকর্মে। এমনকি পাশে স্ত্রীকে রেখে স্বামী অন্যের স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক যোগাযোগ করছে। পরকীয়ায় জড়াচ্ছে। এতে বাড়ছে দাম্পত্য কলহ। সুখ উড়াল দিচ্ছে জানালা দিয়ে। শুধু দম্পত্তি নয়, উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরাও প্রচুর সময় ব্যয় করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুক নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ছে বহু তরুণ। এভাবে দিনের পর দিন পার করায় নৈতিক মূল্যবোধ বিদায় নিচ্ছে তাদের মধ্য থেকে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ সালে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে অভিযোগ পড়েছে ৯৩১টি। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের একজন শুনানি কর্মকর্তা বলেন আমাদের এখানে নারী নির্যাতনের যত অভিযোগ আসে তার মধ্যে বেশির ভাগই স্বামীর পরকীয়ার অভিযোগ। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সব স্তরেই পরকীয়া বেড়ে গেছে। দেখা যায় স্ত্রী তার স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ করেছে। কিন্তু শোনানিতে এসে স্বামী তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ করছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, মানুষের নীতি-নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ নষ্ট হওয়ার কারণে পরকীয়া, খুন হত্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে আত্মীয়তার সর্ম্পক। অপসংস্কৃতি চর্চায় মানুষের চাহিদা দিনে দিনে বৃদ্দি পাচ্ছে। ফলে স্বামী-স্ত্রীরা বিদ্যমান সর্ম্পকের বাইরে গিয়ে অন্য মানুষের সঙ্গে সর্ম্পকে তৈরি করছে। ফলে সোনালী সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে। এর থেকে বের হয়ে আসার উপায় সম্পর্কে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের নৈতিক শিক্ষার শিক্ষিত করে তুলতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধ শেখাতে হবে। ইন্টারনেটের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পাঠ্যবইয়ে নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
/ এআর /