১ সপ্তাহে টন প্রতি রডের দাম বাড়ছে ৮০০০ টাকা
প্রকাশিত : ২৩:৪৫, ২০ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১০:৫৪, ২৮ মার্চ ২০১৮
নির্মাণ সামগ্রীর প্রতিটি পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ব্যবধানে বিভিন্ন মানের রডে টন প্রতি দাম বাড়ছে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। সরকারের পক্ষে থেকে নির্মাণধীন সমগ্রীতে কোন ধরনের চার্জ বা কর আরোপ করা হয়নি, বাড়েনি রড তৈরির কাচঁমালের দাম। তবুও আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামাল বিলেট ও স্ক্র্যাপের দাম বেড়ে যাওয়ার দোহাই দিয়ে প্রতিনিয়ত রডের দাম বাড়ছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)র হিসাবে এক সপ্তাহ আগে ৬০ গ্রেডের রডের টন প্রতি বাজার মূল্য ছিল ৫৯ থেকে ৬০ হাজার টাকা। ৪০ গ্রেডের রডের টন প্রতি বাজার মূল্য ৫০ থেকে ৫১ হাজার টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বর্তমানে ৬০ গ্রেডের প্রতি টন রডের বাজার মূল্য প্রায় ৬৮ থেকে ৭০টি হাজার টাকা। আর একবছর আগে ৬০ গ্রেডের রডের বাজার মূল্য ছিল ৫২ থেকে ৫৩ হাজার টাকা। ৪০ গ্রেডের রডের প্রতি টনের বাজার মূল্য ছিল ৪২ থেকে ২৩ হাজার টাকা।
দাম দৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডে আরাফাত এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার আব্দুল মান্নানের একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, “গত এক সপ্তাহ ব্যবধানে রডের মূল্য ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা বেড়েছে। হঠ্যাৎ করে রডের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ি আমরা। কারণ রডের দাম বাড়লে বিক্রি কম হয়।”
তিনি বলেন, কাঁচামালের দাম কিছুটা বেড়েছে, তাই আমাদেরকে কিনতে হচ্ছে বেশি দাম দিয়ে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে রডের পরিবহন খরচ। আগে এক ট্রাকে যে পরিমাণ রড আনা যেত এখন তা আনা যায় না। ফলে রডের পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে।
রড বিপণনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সাধারণ গ্রেডের এমএস রডের। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি সাধারণ গ্রেডের (৪০০ ওয়াট) এমএস রড বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। গত এক সপ্তাহ আগে একই মানের রডের দাম ৫২ থেকে ৫৬ হাজার টাকার মধ্যে ছিল। সে হিসাবে এক সপ্তাহে ব্যবধানে প্রতি টন সাধারণ গ্রেডের রডের দাম ৮ হাজার টাকা বেড়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রিয়েলে এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, আবাসন খাত যখন ঘুরে দাড়াচ্ছে তখন নির্মাণ সামগ্রীর এমন অযৌক্তিক দাম বৃদ্ধির ফলে খাতটি আবারও বড় ক্ষতির মধ্যে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির যথাযথ কারণ খুঁজে বের করে দ্রুত সরকারের সহযোগিতা কমনা করছি। তা না হলে আবাসন খাত ভয়াবহ সংকটে পতিত হবে। এখাতে বিনিয়োগকারীরাও বিপাকে পড়বে।
নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বর্তমানে এমএস রডের উৎপাদন ও বিপণনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, আমাদের দেশের নির্মাণ সামগ্রীর দাম নির্ধারণ হয় বিশ্ববাজারের উপরে নির্ভর করে। কারণ আমরা আমাদের সিমেন্ট ও রড উৎপাদনের ব্যবহারিক কাচাঁমাল বিদেশ থেকে নিয়ে আসতে হয়। একারণে আমরা বিদেশ থেকে যে দামে কাচঁমাল নিয়ে আসা হয় তার সঙ্গে তাল মিল করে দেশে রড সিমেন্টের দাম নির্ধারণ করতে হয়। সিমেন্ট উৎপাদনের ব্যবহৃত কাচঁমাল (ক্লিংকার) চীন থেকে আমরা আমদানি করতাম। সেই চীন এখন তাদের দেশের পরিবেশ দূর্ষণের দোহায় দিয়ে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। এমন চলতে থাকলে কিছু দিন পর চীন অন্য দেশ থেকে ক্লিংকার আমদানি করবে। এভাবে যদি সব দেশে ক্লিংকার উৎপদান বন্ধ করে দেয় তাহলে কোন একসময় বিশ্ববাজারে প্রভাব পরবে বাংলাদেশে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ভিয়েতমানের কাছ থেকে ক্লিংকার নিয়ে আসে। এখন চীনও ভিয়েতনাম থেকে ক্লিংকার নিয়ে আসা শুরু করছে। যার কিছু প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। ৪০ডলারের ক্লিংকার এখন কিনতে হচ্ছে ৬৩ ডলার দিয়ে। এছাড়া আরও পাচঁটি কাচাঁমালের দাম একইভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ করণে ক্লিংকার উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশের এখন সিমেন্ট ও রড তৈরির কাচাঁমালের একটি নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। চীন তাদের ক্লিংকার উৎপাদন বন্ধ রাখায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এছাড়া সারাবিশ্বে রড তৈরির কাচাঁমালে সংকট দেখা দিয়েছে। যার প্রভাবে রডের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে সিমেন্ট ও রডের দাম বাংলাদেশে বাড়েনি।
তিনি আরও বলেন, স্টিল তৈরিতে যে কাচঁমালা ব্যবহার করা হয়। তার ৮০ শতাংশ বিদেশ থেকে নেওয়া হয়। আর ২০ শতাংশ কাচাঁমাল দেশে উৎপাদন করা যায়। তবে বিশ্ববাজারে সিমেন্টের কাচঁমালের মতো স্টিলের তৈরির কাচঁমালের সংকট তৈরি হয়েছে।
টিকে