বাইক আর গাড়ি প্রদর্শনীতে নারী
প্রকাশিত : ২০:৩১, ২৪ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ২৩:৫৭, ২৪ মার্চ ২০১৮
রাজধানীর পূর্বাচলে চলছে তিন দিনব্যাপী ঢাকা মোটর শো-২০১৮। দেশী বিদেশী অটো মোবাইলস প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্যের পসরা বসিয়েছেন এখানে। কিন্তু নারীদের ‘ব্যবহার’করে প্রদর্শনীতে আকর্ষণ বাড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন মেলায় আগত সাধারণ দর্শনার্থীরা।
বসুন্ধরা ইনটারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের চারটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ মোটর শো। আজ এগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি স্টল আর প্যাভিলিয়নেই গাড়ি, মোটর বাইক এবং প্রদর্শনীতে থাকা অন্যান্য পণ্যের সাথে ‘শো-পিস’আকারে রাখা হয়েছে একজন করে নারী এক্সিবিটরকে (প্রদর্শক)।
বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা গেল, এসব নারী এক্সিবেটরদের ‘ব্র্যান্ড প্রোমোটর’ বা বিপি নামে ডাকা হয়। এরা কেউ ঐ সব প্রতিষ্ঠানের খণ্ডকালীন অথবা পূর্ণ কালীন কর্মী না। বরং মেলা উপলক্ষ্যে তিন দিনের জন্যই এদেরকে নিয়োগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
কাওয়াসাকি, টিভিএস, হোন্ডা, উত্তরা মটরস, টয়োটা, হ্যাভাল, এজি অটোমোবাইল, নাভানা-টয়োটা, সুজুকি, লিফান, আকিজ মোটরস, পাঠাও, মুভসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের চিত্র মোটামোটি একই রকমের। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের পণ্যগুলোর পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এসব নারী কর্মীদের। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে মোটর বাইকের ওপরে চড়ে বসে থাকতেও দেখা যায় তাদের।
একটি প্রতিষ্ঠানের এমন নারী বিপির সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। মোটর বাইকের ওপরেই কেন চড়ে আছেন? এতে করে কেউ একজন এই বাইক দেখতে চাইলেও ভাল করে দেখতে পারছে না-এমন প্রশ্নের জবাবে বিপি পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক নারী বলেন, “আমাদেরকে এই কাজটিই করতে বলা হয়েছে। যেমন আমাকে বলা হয়েছে এই বাইকটির (যেটাতে বসা ছিলেন) ওপর বসে থাকতে। যদি কোন গ্রাহক আসে তাহলে তিনি কোন প্রশ্ন করলে আমরা উত্তর দেই।”
পণ্য প্রদর্শনী এবং গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য এসব নারী বিপিদের নিযুক্ত করা হলেও অনেকেই অটো মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য জানেন না।
অন্য এক প্রতিষ্ঠানের বিপি’র কাছে প্রশ্ন ছিল যে, আপনি তো মোটর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন না। তাহলে আপনি কি আপনার পণ্যের বিষয়ে ভালো করে তথ্য জানেন? কেননা আপনার প্রশ্নের উত্তরের ওপর নির্ভর করে একজন গ্রাহক পণ্যটি কিনবেন। প্রথমে উত্তর দিতে না চাইলেও প্রতিষ্ঠান এবং তার পরিচয় প্রকাশ করা হবে না এমন শর্তে তিনি বলেন, “আমাদেরকে মেলার আগে এসব বিষয়ে কিছুটা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপরেও বেশিরভাগ গ্রাহকদের প্রশ্নের উত্তর প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কর্মকর্তারাই দিয়ে থাকেন”। তাহলে আপনাদের মূল দায়িত্বটা কী? পণ্যের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া ভিন্ন কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
মেলায় আগত ই-কমার্স ব্যবসায়ী ইটিসি ওয়্যারহাউসের কর্ণধার আমিন উদ্দীন সাগর বলেন, “আসলাম গাড়ি-বাইকের মেলা দেখতে। দেখতেছি শুধু গ্ল্যামারাস মেয়েরা। আমরাও তো ব্যবসা করি। আমরা তো নারীদের এভাবে পণ্য বানাই না।”
এসব নারী বিপিদের ওয়েস্টার্ন পোশাক নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন খোদ নারীরাই। ইডেন কলেজের এক ছাত্রী মিথিলা ইটিভি অনলাইনকে বলেন, “আমরা নারীদের সমঅধিকার নিয়ে কথা বলি। দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশের পক্ষে আর বিদেশী অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে কথা বলি। কিন্তু এখানে যেভাবে নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে তো নারীদেরকেই পণ্য মনে হচ্ছে। আর তারা যদি অন্তত আমাদের দেশের সংস্কৃতির সাথে মানানসই এমন পোশাক পরতেন তাহলেও মেনে নেওয়া যেত। সবাই ওয়েস্টার্ন জামা কাপড় পরা। নারীদের এভাবে প্রদর্শন না করলে কী ব্যবহা হয় না? আমরা নারীরাই আসলে নিজেদের সম্মান ধরে রাখতে পারতেছি না।”
এ বিষয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউই। কিন্তু নারীদের প্রদর্শিত করে ব্যবসার আকর্ষণ বাড়ানোর অভিযোগ মেনে নিতে নারাজ তারা। তবে হোন্ডা বাংলাদেশের সিনয়র সহকারী বিপণন ব্যবস্থাপক এবং মেলা স্টলের দায়িত্বে থাকা গিয়াস উদ্দীন সজীব এই প্রতিবেদককে বলেন, “হোন্ডার স্টলগুলোতে নারী ও পুরুষ কর্মীদের একটি ভারসাম্য রাখা হয়েছে। প্রতিটি বাইকের সামনে একজন পুরুষ আর পেছনে একজন নারী কর্মী রাখা হয়েছে। আবার বাইরে আমাদের সিবি হরনেট বাইকের ‘টেস্ট ড্রাইভ’দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেখানে দেখবেন সকল কর্মীই পুরুষ।”
“আমরা একটি সমীক্ষায় দেখেছি যে, একটি মোটর সাইকেল একজন পুরুষ চালালেও সেটি কেনার পিছনে তার সহধর্মিণী বা বাগদত্তার অথবা বান্ধবীর মতামত অনেকটা কাজ করে। অনেকেই আবার দেখতে চান যে, তার বাইকের পিছনে তার বান্ধবী বা স্ত্রী বা বোন বসলে বাইকে তার গ্ল্যামারটা কেমন লাগে। সেই বিষয়ে গ্রাহক যেন একটি ধারণা পান সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েও আমরা নারী কর্মীদের এখানে নিয়োগ দিয়েছি”।
তিন দিন ব্যাপী মোটর শো-২০১৮ এর আজ ছিল সমাপনী দিন। রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী এলাকা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
টিকে