ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪

মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

চাকরির সুযোগ হচ্ছে সোয়া লাখ লোকের

প্রকাশিত : ১৮:৪১, ২৮ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ০০:০৯, ২৯ মার্চ ২০১৮

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আশার আলো দেখছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। দীর্ঘ দিনের জনবল সংকট দূর করতে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। যা বাস্তবায়ন হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে প্রায় সোয়া লাখ নতুন পদ সৃষ্টি হবে। এতে শিক্ষক-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ লোকের নতুন করে কর্মসংস্থান হবে।

সংশ্লিষ্ট অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে নতুন করে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি যথাযথ বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দূর হবে দীর্ঘদিনের জনবল সংকট। এমনকি ইতোমধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮` চূড়ান্ত করা হয়েছে।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জনবল প্যাটার্ন অনুযায়ী নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে বাংলা, ইংরেজি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে একজন করে শিক্ষকে পদ আছে। কমিটি প্রত্যেক বিষয়ের জন্য পৃথক শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব করেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে বাংলা, ইংরেজি, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ের তিনজন শিক্ষকের পদ রয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ের জন্য নতুন করে আরো একজনসহ মোট চারজন শিক্ষকের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। গণিতের জন্যও আলাদা পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্তমান সরকারী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শারীরিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং চারু ও কারুকলা বিষয় চালু করলেও কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়নি। বর্তমানে অন্য বিষয়ের শিক্ষকরা বিষয়গুলো পড়িয়ে থাকেন। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শরীর চর্চা শিক্ষকরা শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক হবেন। অন্য দুই বিষয়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল এবং দাখিল ও আলিম পর্যায়ের মাদ্রাসায় বিজ্ঞানের একজন শিক্ষক শিক্ষকের পদ রয়েছে। তিনি একই পদার্থ, রসায়ন, জীববিদ্যা ও উচ্চতর গণিত পড়াতেন। নতুন প্রস্তাবনায় ভৌত বিজ্ঞান এবং জীববিজ্ঞানের জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্কুল ও মাদ্রাসায় কৃষি এবং গার্হস্থ্য আলাদা বিশেষায়িত বিষয়। কিন্তু একজন শিক্ষককে বিষয় দুটি পড়াতে হয়ে। নতুন নীতিমালায় গার্হস্থ্য বিষয়ের জন্য আলাদা শিক্ষকের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে বালিকা বিদ্যালয়ে বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেসব দাখিল মাদ্রাসায় বর্তমানে কম্পিউটার শিক্ষার শিক্ষক নেই, সেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। আলিম মাদ্রাসার ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ  বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ একুশে টিভি অলনাইনকে বলেন, ২০১২  সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে আইসিটিসহ বেশকিছু নতুন বিষয় চালু হয়েছে। অথচ এমপিওভুক্তির জনবল কাঠামোয় ওইসব বিষয়ের শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। এতে শিক্ষক সংকটের কারণে দেশব্যাপী মানসম্মত পাঠদান বিঘ্নিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জনবল কাঠামো সংশোধন করা হচ্ছে। শিক্ষক সংকটের কারণে বর্তমানে এক বিষয়ের শিক্ষক অন্য বিষয়ও পড়াচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীরা গুণগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে নতুন জনবল কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

তিনি জানান, শিগগির নতুন জনবল কাঠামো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরিতে প্রবেশের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই।  তাই বয়সের বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়েছে। জাবেদ আহমেদ বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন নীতিমালা অনুমোদন দিলে সারাদেশে ২৬ হাজার ৯০টি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে আরও সোয়া লাখ শিক্ষক-কর্মচারী নতুন করে এমপিওভুক্ত হবেন।

অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা, বিষয় ও বিভাগ খোলার নিয়ম : নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকলে অতিরিক্ত শাখা খোলা যাবে। নতুন শাখায় অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। পরে প্রতিটি শাখা খুলতে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী থাকতে হবে। নতুন শাখায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি/গার্হস্থ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিভাগ খুলতে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। মাধ্যমিকে শাখা খুলতে নিম্নমাধ্যমিক স্তরের মতোই নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিকে বিভাগ খুলতে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। নতুন বিষয় খুলতে ২৫ জন শিক্ষার্থীসহ ওই বিভাগে ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। স্নাতক (পাস) পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে নতুন বিষয় খুলতে হলে ২৫ জন শিক্ষার্থী ও বিভাগে ৭৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। শিফট খুলতে হলে শ্রেণিভিত্তিক দেড়শ` শিক্ষার্থী থাকতে হবে। নতুন শিফটে প্রতিটি শ্রেণিতে ৫০ জন শিক্ষার্থী হলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হবে। মাধ্যমিক স্কুলে বিভিন্ন ধর্মের ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকলে একজন ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে।

চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা ৩৫ : নতুন নীতিমালায় শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। তৃতীয় বিভাগ বা সমমানের ডিগ্রিধারী শিক্ষক নিয়োগে কোনো বিধিনিষেধ নেই। নতুন নীতিমালায় সর্বশেষ ডিগ্রি ছাড়া শিক্ষা জীবনে একটি তৃতীয় শ্রেণিপ্রাপ্তরা আবেদন করতে পারবেন। বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগে ৩০০ নম্বরের স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে।

আগের নীতিমালায় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। নতুন নীতিমালায় তা স্পষ্ট করা হয়েছে। স্নাতক (পাস) স্তরে তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগের দীর্ঘদিনের দাবি এবারও উপেক্ষিত হয়েছে। মাধ্যমিক স্কুল কলেজে উন্নীত হলে প্রধান শিক্ষক স্বপদে সবেতনে বহাল থাকবেন। কলেজ স্তর এমপিওভুক্ত না হলে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য হলে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া যাবে না। তবে এমপিও হলে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া যাবে। নীতিমালা অনুযায়ী প্রথমবারের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বার্ষিক মূল্যায়ন করা হবে। অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো এসিআর চালু হবে।

গ্রেডিংয়ের মাধ্যমে এমপিওভুক্তি : ১০০ নম্বরের গ্রেডিংয়ের মাধ্যমে এবার প্রায় দেড় হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতিতে ২৫ নম্বর (প্রতি দুই বছরের জন্য পাঁচ নম্বর। ১০ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৫ নম্বর)। শিক্ষার্থীর সংখ্যার ওপর ২৫ নম্বর (নির্দিষ্ট সংখ্যার জন্য ১৫ নম্বর। এরপর ১০ শতাংশ বৃদ্ধিতে পাঁচ নম্বর)। পরীক্ষার্থীর সংখ্যার জন্য ২৫ নম্বর (নির্দিষ্ট সংখ্যার ক্ষেত্রে ১৫ ও পরবর্তী প্রতি ১০ জনের জন্য পাঁচ নম্বর)। পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের জন্য ২৫ নম্বরের (নির্দিষ্ট হার অর্জনে ১৫ নম্বর ও পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশ পাসে পাঁচ নম্বর) গ্রেডিং করা হবে। প্রভাষকদের এমপিওভুক্তিতে বিষয়ভিত্তিক ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগে তা ১৫ জন করা হয়েছে। নতুন জনবল কাঠামোয় সৃষ্টপদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা দেওয়া হবে না। তবে নতুন পদে এমপিওভুক্ত করা হবে। নতুন জনবল কাঠামোর বাইরে কর্মরত পদ শূন্য হলে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। যারা এমপিওভুক্ত নন;  কিন্তু বৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের নতুন পদে পদায়ন করতে হবে।

শাখা বন্ধ: নীতিমালা জারির পরে অনুমোদিত ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য ক্যাম্পাস ও শাখা (ব্রাঞ্চ) চালানো যাবে না। অনার্স-মাস্টার্স কলেজ, অনার্স ও কামিল মাদ্রাসা, সঙ্গীত কলেজ, শরীরচর্চা কলেজ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ ও নৈশকালীন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই নীতিমালায় আনা হয়নি। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও বা সরকারি বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হবেন।

১৯৯৫ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারীদের এমপিও এবং জনবল কাঠামো নীতিমালাটি তৈরি করা হয়। এরপর ২০১০ এবং ২০১৩ সালে তা দুই দফায় সংশোধন করা হয়।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি