ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪

জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিন মেধাবী শিক্ষার্থী, অপেক্ষায় স্বজনেরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:০৮, ২৯ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ০০:১৬, ৩১ মার্চ ২০১৮

নিজের জীবনের বদৌলতে সন্তানের প্রাণভিক্ষা চেয়ে আঁচল পেতে বসে আছেন শাহীনের বিধবা মা। চোখের সামনে সন্তানকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে দেখে  কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সংগ্রামী এই মমতাময়ী মা। দিনরাত অবিরত চোখের জলে হাত ভেজাচ্ছেন তাঁর নাড়িছেঁড়া ধনকে  মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনতে। প্রবল আত্মবিশ্বাসে বসে আছেন আইসিইউ বাহিরে। এই ভেবে যে তাঁর সন্তান আপন বুকে ফিরে আসবে। কিন্তু তাঁর বেঁচে থাকা এখন শুধুই নিয়তির উপর নির্ভর করছে।

শরীরের ৮৩ শতাংশ পুড়ে যন্ত্রণায় দগ্ধ শাহীন জীবন মৃত্যুর একেবারেই সন্ধিক্ষণে। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শুধুই তাঁর প্রাণ প্রদীপ নিবুনিবু আলোর মতই ক্ষীণ। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই সে একাই করছে না; সঙ্গে আছে তার আরও দু’জন সহপাঠী হাফিজুর এবং দীপ্ত। তাদের অবস্থাও সংকটাপন্ন।

বারবার আল্লাহর দরবারে হাত তুলে হৃদয় নিংড়ানো ফরিয়াদ করে বলছেন “আমি আঁচল পেতে আছি। বেটা আই ফিরে আয়। আমার সোনার ছাওয়াল, আমার বুকে ফিরে আয়। কলিজায় আই। বেটা তুই আমার আগে যেতে পারিস না। কথা বল শাহীন, সোনা আমার!”

 যে মা আশায় আশায় বুক বেঁধে ছিল যে তার সন্তান মাস পেরোলেই ইঞ্জিনিয়ার হবে, বাড়ি ফিরবে। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মা সাফিয়া বেগমকে ছুটে আসতে হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। তাও আবার গজ কাপড়ে মোড়ানো  ব্যান্ডেজে! আগুনের লেলিহান শিখায় ঝলসে গেছে তাঁর মুখ।

আইসিইউর বাহিরে  অপেক্ষমাণ মানুষের সারিতে নিশ্চুপ হয়ে বসে সময় পার করছেন দীপ্ত সরকারের ভাই নারায়ণ এবং মামা সমীরণ। তাদের বিশ্বাস দীপ্ত ফিরে আসবে আবার! দীপ্তের মঙ্গল কামনায় তাঁর গ্রামের বাড়ির মন্দিরে মন্দিরে চলছে প্রাথনা।

নির্বাক হয়ে অকূলের পানে চেয়ে আছে হাফিজুরের বড় ভাই রবিউল এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা। বেদনায় সহপাঠীদের চোখে রাখা যায় না তাদের পোড়া চোখে।

বেদনার নোনাজলে স্বজন সহপাঠীদের চোখ জল শুন্য! মনকে মানাতে না পেরে একটু পরপর আইসিইউর পোশাক বদলে বদলে তারা  দেখে আসছেন বিছানায় শুয়ে থাকা তাদের প্রিয় তিন সহপাঠীদর। চিকিৎসকদের চোখ এখন শুধুই তাদের শ্বাস প্রশ্বাসের উঠা-নামার দিকে।

হতাহত শিক্ষার্থীদের সহপাঠী তুষার জানান, “আজকে তাদের শারীরিক অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। তবে তাদেরকে রক্তের শ্বেত কণিকার (সাদা অংশ) পরিবর্তে স্বাভাবিক রক্ত দেওয়া হয়েছে। আমরা দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই যেন আমাদের প্রিয় তিন সহপাঠী আবার আমাদের মাঝে ফিরতে পারে। একই সাথে তাদের বাঁচাতে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি।”

কান্না ভেজা চোখে হতাহত শিক্ষার্থীদের সহপাঠী ইমরান জানান, যত দিন যাচ্ছে ততই আমাদের ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। কি বলব? কি উত্তর নিয়ে আমরা বাড়ি ফিরবো। তাদের চিকিৎসার খরচ বেড়ে চলছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের পাশাপাশি সকলের উদার সহযোগিতা কামনা করছি।

এই তিন শিক্ষার্থী বার্ন ইউনিটের রেড ইউনিটের প্রধান অধ্যাপিকা ডা. রায়হানা আওয়াল সুমির তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

অগ্নিদগ্ধ তিনজন শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনজনেরই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। শাহীন মিয়ার শরীরের ৮৩ শতাংশ হাফিজুর রহমানের ৫৮ শতাংশ আর দীপ্ত সরকারের ৫৪ শতাংশ পুড়ে গেছে। এদের তিনজনকেই কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।

কর্মজীবনে প্রবেশ করে পরিবারের হাল ধরবে এমন আশায় সবাই স্বপ্ন বুনেছিল। কিন্তু আগুনে নিভতে বসেছে মেধাবী তিন শিক্ষার্থীর জীবনের সম্ভাবনার সবটুকুন আলো। আগুনের লেলিহান শিখায় নিভে গেছে তাদের আরেক সহপাঠী বন্ধু তৌহিদুল ইসলামের জীবন প্রদীপ। একই সাথে নিভতে বসেছে বাকি তিনজনের।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বস্ত্র প্রকৌশল বিভাগের তিন ছাত্র। তারা হলেন নওগাঁর হাফিজুর রহমান (২৩), সিরাজগঞ্জের শাহীন মিয়া (২৩) ও মাগুরার দীপ্ত সরকার (২২)। এই তিনজনই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা সম্ভাবনার আলো। তাদের প্রতিভার আলোয় উদ্ভাসিত হতে যাচ্ছিল পরিবার, সমাজ ও দেশ। ঠিক তার আগেই তাদের স্বপ্ন পুড়ে গেছে আগুনের লেলিহান শিখায়। এই দগ্ধ শরীর নিয়ে বার্ন ইউনিটের বিছানায় তাদের নিস্তব্ধতা যেন ভারী করে রেখেছে পুরো চারপাশ।

শিক্ষাজীবনের শেষের দিকে এসে কুয়েটের এই চার মেধাবী ছাত্র ময়মনসিংহের ভালুকার স্কয়ার ফ্যাশন কারখানায় শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ওই পোশাক কারখানার পাশে মাস্টারবাড়ি এলাকার একটি ভবনের তিনতলায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন তারা।

উল্লেখ্য ২৪ মার্চ শনিবার রাতে ময়মনসিংহের ভালুকায় স্কয়ার ফ্যাশন কারখানার পাশে মাস্টার বাড়ি এলাকার একটি ফ্ল্যাটের নিচ তলায় গ্যাস বিস্ফোরণে মারা যান তৌহিদুল ইসলাম। এই ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হলে ওই রাতেই  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তিনজনেরই জীবন এখন সংকটাপন্ন।

এই শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসুন-
ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড
খুলনা শাখা, ব্যাংক হিসাবের নাম- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হিসাব নং- ১২০.১১০.২৬৪৩৭
জানতা ব্যাংক লিমিটেড
কুয়েট কর্পোরেট শাখা, হিসাবের নাম- জরুরি সাহায্য তহবিল, হিসাব নং- ০১০০০১৯২৮৬৩৮৪

কেআই/টিকে

এ সংক্রান্ত আরও খবর 

নিভে যাচ্ছে সম্ভাবনার সব টুকুন আলো


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি