করোনায় দেউলিয়া যারা
প্রকাশিত : ১৭:১৭, ১৯ জুন ২০২০
করোনা মহামারির ধাক্কায় বিপর্যস্ত বিশ্ব বাণিজ্য। নিরবে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট কোম্পানিগুলো। এমনকি অনেক বড় প্রতিষ্ঠানও নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করছে। এমন পরিস্থিতে কারা টিকে থাকবে আর কারাই বা হারিয়ে যাবে এসব তথ্য তুলে ধরেছে ডয়চে ভেলে।
কারা টিকে থাকছে
অনেক জায়গাতেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দুয়ার এখনও বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে কত প্রতিষ্ঠানে চিরতরে হারিয়ে যাবে আর কতগুলো শেষ পর্যন্ত ফিরবে তা অনিশ্চিত। এই মুহূর্তে দেউলিয়া ঘোষণা করার আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছে না অনেকেই। বলা হচ্ছে বিশ্ব এখনও এই সংকট পরিস্থিতির মাঝামাঝিতে অবস্থান করছে। পুরো পরিস্থিতি অনুধাবন আর আসল ধাক্কাটি সম্ভবত টের পাওয়া যাবে আগামী বছরে।
ছোটরা বেশি বিপদে
করোনার কারণে সবচেয়ে বড় লোকসান পড়েছে খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলো। যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যাশন পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান জে ক্রু নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। হংকং এবং জার্মান ভিত্তিক ফ্যাশন পণ্য বিক্রেতা এসপ্রি বলেছেন, এশিয়া থেকে সব স্টোর তারা গুটিয়ে নিবে। অনলাইন বেচাকেনা জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় কোভিড-১৯ এর ধাক্কা লাগার আগে থেকেই অবশ্য এই কোম্পানিগুলো অস্তিত্ব সংকটে ভুগছিল। মহামারি তা আরো ত্বরান্বিত করছে মাত্র।
নড়বড়ে বড়রাও
দেউলিয়া আইনে সুরক্ষা পেতে আবেদন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিম্যান মার্কাসের মতো বৃহৎ ডিপার্টমেন্ট স্টোর। মে মাসেই ‘চাপটার ইলেভেন ফাইল’ করেছে জেসি পেনি। ১১৮ বছর বয়সী প্রতিষ্ঠানটির স্টোর আছে ৮০০ টি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা এই তালিকায় এমন নামীদামি কোম্পানির নাম সামনের দিনে যোগ হবে আরও। এমনকি জার্মানির সবচেয়ে বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর গ্যালারিয়া কার্স্টার্ড কাউফহফ’র মত প্রতিষ্ঠানও সেই পথে হাঁটছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে কে বাঁচাবে
যুক্তরাজ্যে এক জরিপে দেখা গেছে চলতি বছর প্রতি দশটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের একটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাদের সেবার চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে অথচ তহবিল আগের চেয়ে কমে গেছে। আর এক্ষেত্রে সামাজিক সহযোগিতা কিংবা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে যারা কাজ করে তারাই পড়ছে সবচেয়ে বিপাকে। এমনকি ন্যাশনাল ট্রাস্ট এর মত খ্যাতনামা গ্রুপও এই ধাক্কা অনুভব করছে।
রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় ধ্বস
বিভিন্ন জায়গায় রেস্টুরেন্টগুলো তাদের চেয়ার গুটাতে শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত এই ব্যবসায় শুধু দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক চেইনগুলোই হয়তো টিকে থাকবে। তবে কিছু বড় চেইনও নড়বড়ে অবস্থানে রয়েছে। যেমন ভাপিয়ানোর মত জনপ্রিয় চেইনটি জার্মানিতে দেউলিয়া আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মারিদো নামের আরেকটি কোম্পানি তাদের তৃতীয় রেস্টুরেন্ট বন্ধ করেছে।
পর্যটনে বেঁচে থাকার লড়াই
আমেরিকার গাড়ি ভাড়া দেয়া প্রতিষ্ঠান হার্তজ। গত মাসে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী বিদায় নিয়েছেন। দেউলিয়াত্বের আবেদন করেছে তারা। উত্তর আমেরিকাজুড়ে ছাঁটাই করেছে ১০ হাজার কর্মী। পর্যটন খাতে জড়িত বাকিরাও স্বস্তিতে নেই। জার্মানির বিমান প্রতিষ্ঠান লুফটহানসা সরকারের কাছ থেকে ৯০০ কোটি ইউরোর সহায়তা তহবিল নিয়েছে। ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া কোন রকমে টিকে আছে ‘ভল্যানটারি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের’ অধীনে।
পেট্রোলিয়ামের কদর নেই
চাহিদা কমে যাওয়া বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম তলানিতে ঠেকেছে। এর সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলোর এখন ত্রাহি পরিস্থিতি। এপ্রিলে ডায়মন্ড অফশোর ড্রিলিং, হোয়াইটিং পেট্রোলিয়াম, আল্ট্রা পেট্রোলিয়াম ফিল্ড যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের কাছে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণার আবেদন জানিয়েছে। তবে তারা যে একে বারে বিদায় নিচ্ছে তা নয়। পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটলেই এই প্রতিষ্ঠাগুলো ব্যবসায় ফিরবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মাঠে যখন দর্শক নেই
দর্শকের বদলে খেলোয়াড়রা, শিল্পীরা নিজেদের নৈপুণ্য দেখাচ্ছেন ক্যামেরার সামনে। তাতে কি ক্ষতি পোষাবে? এর সঙ্গে জড়িত ক্লাব, কর্তৃপক্ষ আর বিভিন্ন কোম্পানি বঞ্চিত হচ্ছে টিকিট আর বিজ্ঞাপনের টাকা থেকে। জার্মানির পেশাদার ফুটবল দল কাইজার্সলাউটার্ন দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তালিকা সামনের দিনে ক্রমশ লম্বা হবে।
আসল পরিস্থিতি সামনে
বিরাট অঙ্কের আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে উন্নত দেশগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আসল পরিস্থিতি ধরা দিবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে। কেননা ততদিনে অনেকেরই প্রণোদনার টাকা ফুরাতে শুরু করবে। কোম্পনিগুলো দেউলিয়া ঘোষণার জন্য আদালতপাড়ায় লাইন ধরবে, বাড়বে কর্মহীন মানুষের বহরও। এমন আভাসই দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
দেউলিয়া হলে কি সব শেষ?
দেউলিয়া হয়ে যাওয়া কারো কাছে গর্বের, কারও কাছে লজ্জার। অনেক ক্ষেত্রে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া কোম্পানি বা ব্যক্তি নতুন প্রস্তুতি নিয়ে আরও শক্তিশালী রূপে ফিরে আসতে পারে। হেনরি ফোর্ড তার কোম্পানি শুরুর আগে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দায় জিএম, ক্রাইসলারের মত কোম্পানিও দেউলিয়াত্বের আবেদন করেছিল। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতেও এমন কিছু খারাপ খবর আসবে যা হয়তো পরবর্তীতে ভাল কিছুর জন্ম দিবে।
এমএস/এসি