ঢাকা, শুক্রবার   ০৭ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

করোনায় বেকার ডেকোরেটর কর্মী, লোকসানে কমিউনিটি সেন্টার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৩৩, ১৩ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১৪:৫৬, ১৩ জুলাই ২০২০

Ekushey Television Ltd.

করোনা দুর্যোগের কারণে পুরো দেশ এখন বিপর্যস্ত। প্রতিদিনই আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলছে। ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সকল প্রকার সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধ বললেই চলে। তিন/চার মাস ধরে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের কাঁধে চেপে বসেছে লোকসানের বোঝা। এক কথায় করোনাকালে লোকসানের মুখে ডেকোরেটর ব্যবসা। 

জানা গেছে, গত চার মাসে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় তিনশ’ ডেকোরেটর। একই চিত্র সাউন্ড সিস্টেম সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেরও। ব্যাবসায়ীরা বলছেন, অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাতো দূরের কথা, নিজেদের টিকে থাকাটাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।

করোনার এই ক্রান্তিকালে গত প্রায় চার মাস নেই কোন বিয়ের অনুষ্ঠান। নেই সাংস্কৃতিক কোনো আয়োজনও। রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশও থামিয়ে দিয়েছে এই করোনা। তাই ভীষণ দুঃসময় যাচ্ছে ডেকোরেটর ও মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর। 

টানা বন্ধে ডেকোরেটর সরঞ্জামগুলো গোডাউনে পড়ে পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাজ না থাকায় মাসে মাসে লোকসান গুণতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। দেশের ৫ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠানের চিত্র এরকমই। এরইমধ্যে লোকসান গুনতে গুনতে বন্ধ হয়েছে প্রায় ৩শ’ প্রতিষ্ঠান। অনেকেই পেশা পরিবর্তনও করেছেন। এ অবস্থায় কিছু দাবিও আছে ডেকোরেটরস মালিক সমিতির। 

দেশের বহুল পরিচিত ‘কল-রেডি’ প্রতিষ্ঠানটি নিজেই একটি ইতিহাস। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৬’র ঐতিহাসিক ৬ দফা, ৬৯’র গণআন্দোলণের উত্তাল দিনগুলোর সাক্ষী এই ‘কল-রেডি’। ৭ মার্চ বজ্রকন্ঠে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন ‘কল-রেডি’তে। অথচ গত তিনমাসে কোনও আয় নেই তাদের, এ সময়ে লোকসান দিতে হয়েছে ৩২ লাখ টাকা। 

শুধু কল রেডি নয়, গোডাউন ভাড়া, কর্মীদের বেতন আর আনুসাঙ্গিক ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সারাদেশের এমন প্রায় ৭ হাজার প্রতিষ্ঠান। রক্ষণাবেক্ষনের অভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ইলেকট্রনিক মেশিনারিজগুলো। 

বেশ কয়েকজন ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনার প্রার্দুভাবে দীর্ঘদিন ধরে সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেশ ক্ষতির মুখোমুখি তারা। দীর্ঘমেয়াদী এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা তাদের পক্ষে সহজ নাও হতে পারে।

এ বিষয়ে রোকিয়া সাউন্ড সিস্টেম ডেকোরেটরের মালিক ফজলুল করিম জানান, দুর্যোগের আগে আমাদের প্রতি মাসে প্রায় দুই লাখ টাকা আয় হতো। কিন্তু করোনাকালীন এই সময়ে একটি টাকাও আয় নাই। বরং প্রতিমাসে পনেরো হাজার টাকা দোকান ভাড়া দিতে হয়। এছাড়াও নিজেদের বাসা ভাড়া, খাওয়া দাওয়া খরচ তো আছেই।

এ যাবৎ কোনো সরকারি অনুদান পাইনি। বরং নিজের সাধ্যমত আমাদের কর্মচারিদের সাহায্য করছি। নিজের পরিবারের খরচ মেটাতে এখন চায়ের দোকান দিয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে সব মালামাল বিক্রি করলেও দেনা মেটানো সম্ভব হবে না। এমনকি এ অবস্থায় মালামাল কেনার কোনো ক্রেতাও পাওয়া যাবে না। করোনার এই ক্রান্তিকালে আমরা ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি। ঘর ভাড়া, গোডাউন ভাড়া, শ্রমিকদের খরচ এবং দৈনন্দিক সংসার খরচ চালানো আমাদের দ্বারা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ডেকোরেটর ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সারাদেশের ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের প্রায় তিন শ’ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। মানবেতর জীবন যাপনকারী অসহায় ডেকোরেটর মালিক ও পঁচিশ লক্ষ শ্রমিকদের ডেকোরেটর ব্যবসা চালু না হওয়ায় অসহায় জীবনযাপন করছেন তারা।

এদিকে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে মাসিক ভিত্তিতে অনুদানের আবেদন জানিয়েছে ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা।

ব্যাংক ও এনজিও থেকে গ্রহণ করা ঋণের কিস্তিসহ সুদ আদায় বন্ধ, জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় প্রণোদনা ও বিভিন্ন ধরণের আর্থিক ঋণের সুবিধা চালু করণসহ পাঁচদফা বাস্তবায়নের দাবিতে কোথাও কোথাও মানববন্ধন, পথসভা, র‌্যালি ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

অপরদিকে, রাজধানীর পুলিশ কনভেনশন হল, জিনজিয়ান, সেনা মালঞ্চ, সেনা কুঞ্জ, গল্ফ গার্ডেন, পল্লবী, রুপালী, ময়ুরী, আনন্দ কমিউনিটি সেন্টার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেক ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠান ও তাদের কর্মীরা। বিয়ে ও জন্মদিন পালনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মিরপুর ১০ থেকে ১২ নম্বর পর্যন্ত রয়েছে প্রায় ১৮ থেকে ২০টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি সেন্টার ও চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। এছাড়াও এলাকাটিতে নিউপল্লবী, গাউসিয়া, লিটন ও মুন্না ডেকোরেটরসহ প্রায় অর্ধশত ছোট ডেকোরেটর কোম্পানি রয়েছে। যারা ব্যাক্তিগত অর্ডারে কাজ করে থাকে।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে প্রতিটি ডেকোরেটর কোম্পানিতে গড়ে ১৫ জন কর্মী রয়েছে। অর্থাৎ মিরপুরে কর্মী সংখ্যা প্রায় ৭৫০ জন। কোভিড সংকটে ২০ মার্চ থেকে কমিউনিটি সেন্টার ও কনভেনশন হলগুলো বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়ে এসকল কর্মীরা। 

পুলিশ কনভেনশন হল কর্তৃপক্ষ জানায়, হলটিতে প্রতিমাসে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫টি অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তবে ২০ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে কার্যক্রম।

রুপালি কমিউনিটি সেন্টারের মালিক মতিউর রহমান বলেন, প্রতিমাসে ভাড়া এবং স্টাফ কর্মী বাবদ লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে হয়তো ১ বছর সময় লাগতে পারে। 


এসএ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি