ঢাকা, শুক্রবার   ২৮ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

করোনায় বাড়ছে বাল্যবিবাহ, শিশু ও নারী নির্যাতন

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

প্রকাশিত : ১১:২৮, ২৫ জুলাই ২০২০

(প্রতিকী ছবি)

(প্রতিকী ছবি)

Ekushey Television Ltd.

করোনা মহামারীর সময়ে নারী-শিক্ষা নির্যাতন ও বাল্যবিবাহের সংখ্যা বেড়েই চলছে। একই সঙ্গে চলমান সময়ে এ বিষয়টি কম গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে করোনাকালে আশংকাজনকভাবে নারী নির্যাতন এবং বাল্যবিবাহ বেড়েছে। নির্যাতনের শিকার বেশিরভাগ নারী এই সময়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারছে না। স্থানীয় থানায় এই বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্ব কম পাচ্ছে। আদালতের কার্যক্রম সীমিত পরিসরে থাকায় নারীরা মামলা দায়েরের সুযোগ কম পাচ্ছেন। প্রয়োজনে যথাযথ সময়ে মামলা না করতে পারায় সহিংসতার শিকার নারীরা দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। সম্প্রতি এসব অভিযোগ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কর্ম এলাকায় জুন মাসে ৪৬২ জন কন্যাশিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। বাল্যবিয়ে বন্ধ করা গেছে ২০৭টি। বাল্যবিবাহের সংখ্যা মে মাসে ছিল ১৭০ এবং বন্ধ করা হয়েছিল ২৩৩টি। করোনা ভাইরাসের বিস্তারের পর মে মাসের পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিচারে নারী নির্যাতন কিছুটা কমলেও জুন মাসে শিশু নির্যাতন বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে।

সংস্থাটির তথ্য বলছে, জুন মাসে ৫৩টি জেলার মোট ৫৭ হাজার ৭০৪ জন নারী ও শিশুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৭৪০ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছেন। নারীর সংখ্যা ৯ হাজার ৮৪৪ জন আর শিশুর সংখ্যা ২ হাজার ৮৯৬ জন। শিশুদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ১ হাজার ৬৭৭, অর্থাৎ শতকরা ৫৮ ভাগ, আর ছেলেদের সংখ্যা ১ হাজার ২১৯, অর্থাৎ শতকরা ৪২ ভাগ। মে মাসে ২ হাজার ১৭১ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। জুন মাসে ৪৮ শতাংশ শিশু অর্থাৎ ১ হাজার ৩৭৬টি শিশু নতুনভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে শতকরা ৬১ ভাগ শিশু। জুন মাসে মোট ১২ হাজার ৭৪০ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ হাজার ৩৩২ জন নারী ও শিশু এর আগে কখনোই সহিংসতার শিকার হয়নি।

ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, জুন মাসে ১ হাজার ৭৬৪টি শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৯২ শিশু। ধর্ষণ করা হয়েছে ৯ জনকে এবং ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৯৯ জন শিশুকে যাদের মধ্যে ৮৬ জন মেয়ে। হত্যা করা হয়েছে ৪১ জনকে, অপহৃত হয়েছে ১০ জন, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে আরও ১২ জন। অন্যদিকে মাসটিতে মোট আক্রান্ত নারীদের মধ্যে নতুন করে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা ১ হাজার ৯৫৬ জন বা ২০ শতাংশ। 
নারীদের শতকরা ৯৮ ভাগ অর্থাৎ ৯ হাজার ৬৯৩ জন পারিবারিক সহিংসতার শিকার। পারিবারিক সহিংসতার মধ্যে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪ হাজার ৬২২ জন। অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার ৩ হাজার ৯ জন, শারীরিক নির্যাতনের শিকার ১ হাজার ৮৩৯ জন, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৩৫ জনকে, হত্যা করা হয়েছে ১৪ জনকে এবং ত্রাণ আনতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৫জন। 

এমজেএফ কর্ম এলাকায় করোনাকালে নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ে গত এপ্রিল মাস থেকে ধারাবাহিকভাবে টেলিফোন জরিপ করছে। এমজেএফের সঙ্গে বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পের ১০৬টি সহযোগী সংগঠন এ জরিপে সহায়তা করেছে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে পরিবারে যে সংকট দেখা যাচ্ছে আর্থিক মানষিক এবং নানা ধরনের যে দুর্যোগ আসছে এটা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মেয়েশিশুরা ঘরে বন্দী হয়ে আছে। বেশির ভাগের কোনো কাজও নেই। অভিভাবকেরা মেয়েকে ঘরে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে চাইছেন না। ঘরে-বাইরের যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা করতেও মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছেন।’

সিরাজগেঞ্জের বেলকুচির দৌলতপুরের বওড়া গ্রামের রাজিয়া খাতুন বাল্যবিবাহের স্বীকার হয়েছেন। রাজিয়া বলেন, ‘আমাকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছে। স্বামীর কোন কাজ নাই এখন অনেক কষ্ট হচ্ছে।’ তবে ‘নাবালক’ মেয়েকে নিরুপায় হয়ে বিয়ে দিয়েছেন বল দাবি করেন রাজিয়ার মা। আর্থিক টানাপোড়নের কথাও তুলে ধরেন তিনি। 

জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ’র শিশু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ (চাইল্ড প্রটেকশন স্পেশালিষ্ট) সাবনাজ জেহেরিন বলেন, ‘করোনাকালিন সময়ে শিশুদের উপর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স বেড়ে গেছে।’

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অভিযোগ, সেবাদানকারী/ বেসরকারী সংগঠনসমূহের কর্মতৎপরতা সীমিত হয়ে পড়েছে। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারসহ সরকারী অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রেও নির্যাতনের শিকার নারীরা আশ্রয় পাওয়ার সুযোগ থেকে অনেকক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের কাজকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন না। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার ইতিমধ্যে গৃহীত কর্মকান্ড কম গুরুত্ব পাচ্ছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি তার দায়িত্ব পালন করছেন না। বিভিন্ন জেলা শাখার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কার্যক্রমের প্রতিবেদন এসেছে।

ঘরে-বাইরে নারী বিভিন্ন অসমতা বা বৈষম্যের শিকার হন। নারীকে সম্মান করা হয় না। নারীর কাজের যে অবদান তার স্বীকৃতি নেই। এই বিষয়গুলো নারী নির্যাতনকে সব সময় উসকে দেয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনার সময়ে এসব পরিস্থিতির সঙ্গে মানুষের কাজ না থাকা, অভাব প্রকটতর হওয়াসহ অন্য চ্যালেঞ্জগুলো যোগ হচ্ছে। এতে নারী ও শিশুরা বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তারা।  

এমএস/এমবি


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি