ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

২০ বছর ধরে কুকুর-বিড়ালদের খাবার তুলে দেন বিলাইদাদী

নীলফামারী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১২:১৮, ৫ অক্টোবর ২০২১

সবাই তাকে ডাকে বিলাইদাদী। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ফরিদা বেওয়া তার উপার্জিত টাকার বেশিরভাগ অংশ ব্যয় করছেন বেওয়ারিশ কুকুর ও বিড়ালের খাবারের পেছনে। তারাই এখন তার সঙ্গী। হৃদয়ের সমস্ত স্নেহ-মমতা আর ভালোবাসা দিয়ে তিনি পশুদের আঁকড়ে ধরায় ভালোবেসে তাকে এই উপাধি দেয় স্থানীয়রা।

ফরিদা বেওয়া, রান্না করে আনা খাবারগুলো পরম মমতায় তুলে দেন রাস্তার কুকুর-বিড়ালদের। দূর থেকে তাকে দেখে, কখনো তার কণ্ঠ শুনে ছুটে আসে অন্য কুকুরগুলোও। গেলো ২০ বছর ধরে এই কাজটি করছেন তিনি।

প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০টি কুকুর-বিড়ালকে খাবার দেন ফরিদা। এই পশুপ্রেমের কারণে সবাই তাকে ডাকে বিলাইদাদী।

নীলফামারীর সৈয়দপুর হাতিখানার রেললাইনের পাশে জরাজীর্ণ একটি ঘরে ভাড়া থাকেন তিনি। স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় বিশ্বাস করে ৪ লাখ টাকা দিয়েছিলেন একজনকে। সেখানে প্রতারিত হন। এরপর বিভিন্ন হোটেলে দিনমজুরি করে সংসার চালান। স্বামী ইসমাইল মারা যায় ৩০ বছর আগে। এরপর দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে মারা যায়, আরেকটি যায় হারিয়ে। এরপর থেকেই তিনি আঁকড়ে ধরেন এসব প্রাণীদের।

ফরিদা বেওয়া বলেন, ‘নিজের ইতিহাস নিজেই ভোগ করছি। নিজেরটা কুকুর-বিড়ালকে খাওয়াচ্ছি, মানুষের কাছে না বলে নিজেরটা নিজের হজম করা ভালো। এখন আমার উপলক্ষে ওরা খাচ্ছে, আমি না থাকলে ওদেরকে আল্লাহ দেখবে।’

বিলাই দাদীর ঝুপড়িতেও ৪/৫টি বিড়াল সব সময় থাকে। হোটেল মালিক জানান, মজুরীর টাকা দিয়েই তিনি পশুসেবা করেন। 

হোটেল মালিক আশরাফ বলেন, যে বেতন পায় তা তিনি কুকুর-বিড়ালের পেছনে শেষ করে দেন।

ফরিদা বেওয়ার কাজটি সবার জন্য অনুকরণীয় হতে পারে বলেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, সব পশু-পাখির উপর তার মায়া খুব বেশি। বিড়াল ধরেই শুয়ে থাকে সে। প্রতিদিনই বেড়াল বাচ্চাগুলোকে দুধ খাওয়ায়। আমরা চাই, সৈয়দপুরে যারা বিত্তবান আছেন তারা যেন সাহায্য-সহযোগিতা বাড়িয়ে দেন।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধন যুব উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, তিনি পশুপ্রেমের যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন, আসলে এটা অনুকরণীয়।

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরের আওতায় ফরিদাকে অন্তর্ভূক্তি করা হবে, বললেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম হুসাইন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের যে কাজ চলমান রয়েছে সেখানে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।

সমাজে ফরিদা বেওয়ার মতো মানবিক মানুষের সংখ্যা বাড়লে পশু-পাখিরা থাকতে পারে নির্ভয়ে।

ভিডিও-

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি