হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কী, আগুনের মাত্রা কীভাবে বাড়ায় এটি?
প্রকাশিত : ১১:০৭, ৬ জুন ২০২২
সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাসায়নিক থাকার কারণে সেখানে এতো বড় বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
আগুন লাগলেই সেটা নেভানোর জন্য প্রথমেই পানির কথা মাথায় আসে। কিন্তু পানি দিয়েই সব আগুন নেভানো সম্ভব হয় না। আগুন লাগলেই কিন্তু পানি সবসময় সমাধান নয়।
সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর এই আলোচনা আবারও সামনে এসেছে।
এই হাইড্রোজেন পার অক্সাইড আসলে কী?
হাইড্রোজনের পার অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ যার সংকেত এইচ২ও২ (H2O2)। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটা বর্ণহীন তরল।
বিশেষজ্ঞরা হাইড্রোজেন পার অক্সাইডকে বর্ণনা করেন অক্সিডাইজিং এজেন্ট হিসেবে। সাধারণভাবে একে বলা যায় ব্লিচিং এজেন্ট। সরাসরি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার বিপজ্জনক। তাই নিরাপত্তাজনিত কারণে সবসময় এর জলীয় দ্রবণ পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করা হয়।
এটি নিজে দাহ্য পদার্থ না হলেও আগুন বা দাহ্য পদার্থের আশেপাশে রাখলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাসায়নিক থাকার কারণে সেখানে এতো বড় বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে তারা ধারণা করছেন।
কোথায় ব্যবহৃত হয়?
বাংলাদেশে অনেক কোম্পানি এখন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড উৎপাদন করে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পর্যায়ে এর ব্যবহার আছে , যেমন -
•ব্লিচিংয়ের জন্য টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি বিশেষ করে ডাইং ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার করা হয়।
•অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে বহুল ব্যবহৃত হয় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড
•লেদার ইন্ডাস্ট্রিতেও এর ব্যবহার হয়।
•ওয়াটার ট্রিটমেন্টে ব্যবহার করা সহ বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির কাজে ব্যবহৃত হয়।
•এছাড়া বাথরুম পরিষ্কার, কাপড় ধোয়াসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যেও ব্যবহৃত হয় এটি।
নানা কাজে এর ব্যবহার হলেও সঠিকভাবে সঠিক তাপমাত্রায় এটি ব্যবহার না করলে বিপজ্জনক হতে পারে।
কতটা বিপজ্জনক হাইড্রোজেন পার অক্সাইড?
হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের স্ফুটনাঙ্ক পানির তুলনায় ৫০ ডিগ্রি বেশি। সে কারণে বেশি তাপমাত্রায় এটা বিপজ্জনক হতে পারে। এর উচ্চ ঘনত্ব বেশ বিপজ্জনক।
এরকম রাসায়নিক যেন চোখ আর ত্বকের সংস্পর্শে না আসে সেজন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
•এটা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। ত্বকে ও চোখে জ্বালাপোড়া হতে পারে। সে কারণে চোখ বা ত্বকের সংস্পর্শে আসলে তাড়াতাড়ি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
•শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড প্রবেশ করলে মাথাব্যথা, নাক জ্বলা বা বমিও হতে পারে। অতিরিক্ত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ফুসফুসেও সমস্যা তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন এটা শীতল, শুষ্ক, ভালোভাবে বাতাস চলাচল করে এরকম জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত। বিশেষ করে ফ্লেমেবল কেমিকেল অর্থাৎ দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এটা রাখা বিপজ্জনক।
দাহ্য পদার্থ থেকে দূরে এটাকে সংরক্ষণ করা উচিত। কারণ কোন দাহ্য পদার্থের কাছে থাকলে বা আগুন লাগার জায়গায় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকলে আগুন বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে , বিস্ফোরণও ঘটতে পারে।
আগুনের মাত্রা কীভাবে বাড়ায় এটি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিপার্শ্বিক অনেকগুলো অবস্থার উপর নির্ভর করে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বিস্ফোরিত হবে কিনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড: ইজাজ হোসেন বলছেন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল। এটা খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হয়। এটা রাখার জন্য কনটেইনার আছে আলাদা। আলাদাভাবে রাখতে হলে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখতে হবে।
রাসায়নিক সংরক্ষণের ম্যাটারিয়াল সেইফটি ডেটশিট অনুযায়ী হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রাখতে হবে গ্লাস, স্টেইনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম অথবা প্লাসিক কনটেইনারে। অন্য কোনো ধাতুর সংস্পর্শ পেলে এটা বিক্রিয়া করে।
ড: ইজাজ হোসেন বলছেন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড যেখানে রাখা আছে তার আশেপাশে কী আছে, কতদিন ধরে কীভাবে রাখা আছে -এসব অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে এটা কী আচরণ করবে।
তাছাড়া উচ্চ তাপে এটা বিস্ফোরক আচরণ করতে পারে। এটা দাহ্য পদার্থ না হলেও এটা অক্সিডাইজিং এজেন্ট। অর্থাৎ এটা অক্সিডাইজার হিসেবে কাজ করে।
আর একটা অক্সিডাইজার অক্সিজেন বা ফ্লোরিন বা ক্লোরিনের মতো পদার্থ যুক্ত থাকে যা দাহ্য পদার্থের মতো আচরণ করতে পারে। তার মানে হলো আগুন লাগলে তার আশেপাশে কোন অক্সিডাইজিং এজেন্ট থাকলে সেটা আগুনের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দেয়, পর্যাপ্ত তাপ ও জ্বালানি পেলেই আগুনের তীব্রতায় এবং এই তীব্রতায় বিস্ফোরণও ঘটতে পারে।
পানির সংস্পর্শে এলেও বিস্ফোরক আচরণ করতে পারে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। এটি যেহেতু রাসায়নিক যৌগ সেই কারণে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কারণে কোন আগুন লাগলে সেটি পানি দিয়ে নেভানো যায় না।
এ ধরনের আগুন নেভাতে হয় অন্য কৌশলে। ফগ সিস্টেমে এ ধরনের আগুন নেভানো সম্ভব।
এছাড়া ফোম বা ড্রাই পাউডার জাতীয় অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র দিয়ে এমন আগুন নেভাতে হয়। সূত্র: বিবিসি
এসি