ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪

পদ্মা সেতুর বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পাইলিং (ভিডিও)

মুহাম্মদ নূরন নবী, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:২৪, ২১ জুন ২০২২ | আপডেট: ১৩:২৭, ২১ জুন ২০২২

পদ্মা সেতু নির্মাণে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পাইলিং। কিছু জায়গায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দৈর্ঘে্যর পাইল দিয়েও মাটির নীচে শক্ত স্তর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না শক্ত স্তর। পরে স্কিন গ্রাউটিং প্রযুক্তির মাধ্যমে বসানো হয় এসব পাইল। মজার বিষয় হলো, এই প্রযুক্তি বিশ্বের কোথাও প্রয়োগ হয়নি, এমনকি কোনো পাঠ্য বইয়েও নেই। 

প্রমত্তা পদ্মা কতটা ভয়ঙ্কর জানে এদেশের মানুষ। তাইতো এখানে কেউ সেতু নির্মাণের কথা কখনো ভাবেনি।

প্রতিটি সেতু বেস গ্রাইটিং বা ভিত্তির উপর নির্ভর করে নির্মাণ করা হয়। যাতে, সেতু দেবে না যায়। পদ্মা সেতুতেও প্রথমে তেমনটাই ভাবা হয়। 

দৃশ্যমান এই সেতুতে ৪২টি পিলারের উপর বসেছে ইস্পাতের ৪১টি স্প্যান। আবার, প্রতিটি পিলারের নীচে ৬২ মিলিমিটার পুরুত্ব তিন মিটার ব্যাসার্ধের পাইল রয়েছে কমপক্ষে ৭টি। 

সর্বোচ্চ ১২৫ দশমিক ৪৬ মিটার গভীরতা নিয়ে পাইল বসেছে ২শ’ ৬৪টি। প্রতিটি পাইল ৮ হাজার ২শ’ ৫০ টন ভার বহনে সক্ষম। 

এতো গভীরে পাইল বসাতে আনা হয় ১ হাজার ৯শ’ থেকে সাড়ে তিন হাজার কিলোজুল ক্ষমতার হাইড্রোলিক হ্যামার।  

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম সাইফুল আমিন বলেন, “পৃথিবীর সর্বশক্তিমান হ্যামার দিয়ে সেই পাইল ড্রাইপ করতে যেয়েও দেখা যায় সমস্যাটা সমাধা করতে পারছি না। এক্ষেত্রে আমাদেরকে কিছু নতুন টেকনিক অ্যাপ্লাই করতে হয়েছে। যেটাকে আমরা বলি স্কিল ফিকশন ইপ্রুভ টেকনিক। যেটা স্টিল পাইলের ক্ষেত্রে পৃথিবীর কোন টেক্সট বুকে নাই।”

বলা হয়ে থাকে পদ্মা হলো আনপ্রডিক্টেবল রিভার। যার কূল-কিনারা কেউ কখনও মূল্য করতে পারেনি। যেটা দেখেছে এই নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থাকা দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা। পাইলিং করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকমের মাটি, নদীর বিভিন্ন রূপে কারণে মূল নকশ করতে হয়েছে, পরিকল্পনা করতে হয়েছে।

নানান প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে অবশেষে নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতুটি। কিন্তু নির্মাণের কোন অংশে এর মানের সাথে কখনই আপোষ করা হয়নি। রক্ষা করা হয়েছে বিশ্বমান দণ্ড।

সাধারণত মাটির গভীরে পাথর বা মাটির শক্ত স্তর না পাওয়া পর্যন্ত পাইলিং করতে হয়। কিন্তু মাওয়া প্রান্তে ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিতে পাইল করতে গিয়ে পাওয়া যায় মাটির নরম স্তর। ফলে এ প্রান্তে কাজ বন্ধ রাখে নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা। 

পদ্মা সেতুর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, “সেতুর ভিত্তি নির্মাণ করতেও কষ্টকর হয়েছে। তারপরে মাটির নীচে কি ধরনের মাটি আছে সেটা আমরা জানতাম না। আমরা কিছুটা ধরা খেয়েছি। নীচে ক্লেস হল চলে আসার জন্য।”

পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা যখন দেখলাম সয়েলের ভিন্নতা পাওয়া গেল। তো আমরা যে ডিজাইন করেছিলাম সে ডিজাইন ২২টা পিয়ালে ভারবহন নিতে পারছে না এবং এই ডিজানটার মোটিফেকেশনের প্রয়োজন হল।”

এভাবেই ১৪টি পাইলের নীচে মেলে নরম মাটি। এমন প্রেক্ষিতে পিলারের গোড়ায় খাজকাটা পাইল দিয়ে অতিমিহি সিমেন্টের মিশ্রণে নরম মাটি শক্ত করার প্রযুক্তি স্কিন ফ্রিকশন গ্রাউটিংয়ের সিদ্ধান্ত আসে স্থপতি জামিলুর রেজা চৌধুরী ও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। 

অধ্যাপক ড. এএফএম সাইফুল আমিন বলেন, “যত বেশি লেভিতে পাইলিং দিতে পারবো ততো আমি স্কিন ফ্রিকশন ক্যাপাসিটিটা বেশি পাব। কিন্তু বেশি লেন্থের পাইল দেয়ার কারিগরি সীমাবদ্ধতা বর্তমানে আছে। স্কিন ফ্রিকশন ক্যাপাসিটিটা বাড়ানোর জন্য কিছু কিছু পাইলে গ্রাউটিং করতে হয়েছে। তিন পাইলের মধ্যে এ ধরনের স্কিন গ্রাউটিং করাটা একদম নতুন ছিল।”

কোথাও কোথাও বসানো হয় অতিরিক্ত পাইল। মূল সেতুর ২২টি পিলারে বসে ৭টি করে পাইল। 

পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, “আসলে একটা ১০ ফুট বাই ১০ ফুটের রুম বিশিষ্ট ৪০ তলা বিল্ডিং যেরকম হয় একটা পাইল এ রকমই।”

পাইলিং জটিলতায় পিছিয়ে যায় কাজ। পরে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর শুরু হয়ে পাইলিং শেষ হয় ২০১৯ সালে। আর পিলার বসানো শেষ হয় ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি