মিলছে না বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১২:৫০, ৩০ নভেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১২:৫১, ৩০ নভেম্বর ২০২২
অবসরে যাওয়ার পরও মিলছে না বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মানুষগুলো চিকিৎসা, সন্তানের বিয়ে, ঋণ পরিশোধসহ পারিবাহিক নানা প্রয়োজন পুরণ করতে না পেরে আছেন সংকটে। অবসর সুবিধা বোর্ড বলছে, তহবিলে প্রতিমাসে ৪৫ কোটি টাকার ঘাটতি থাকায় আবেদন নিষ্পত্তি সম্ভব হচ্ছে না।
জহুর উদ্দিনের ঘরে বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে, বন্ধক আছে ফসলি জমি। বয়সের ভারে অসুস্থ থাকতে হয় প্রায়ই।
নেত্রকোনো জেলার ইচুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দপ্তরি পদ থেকে অবসর নিয়েছেন বছর চারেক আগে। অবসর সুবিধা পেতে আবেদন করলেও আজও পাওনা বুঝে পাননি জহুর উদ্দিন।
অবসরপ্রাপ্ত দপ্তরি জহুর উদ্দিন বলেন, “টাকা পেলে মেয়েকে বিয়ে দিতাম। আমার যে জমাজমি ছিল তা বন্ধক অবস্থায় আছে, তা ছাড়াতে চাই। কিন্তু টাকা তো পাচ্ছি না।”
আবেদন করে গেলো তিন-চার বছর অবসর সুবিধা বোর্ডের দরজায় ঘুরছেন, এমন আরও বহু শিক্ষক-কর্মচারী।
তারা জানান, তিন বছরের মধ্যে কোনো খোঁজ-খবর নেইনি। দেড়ি হবে বলে এ জন্য খোঁজ-খবর নেয়া হয়নি। গত বছর থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের টাকার পর থেকে খোঁজ-খবর নিচ্ছি।”
শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন থেকে কেটে রাখা হয় ৬ শতাংশ টাকা। এ থেকে প্রতিমাসে বোর্ডের কোষাগারে জমা পড়ছে ৬৭ কোটি টাকা। তবে বর্তমানে আবেদন জমা আছে প্রায় ৩৩ হাজার। প্রতিমাসে যোগ হচ্ছে ৮শ’ থেকে সাড়ে আটশ’ নতুন আবেদন। এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রতিমাসে প্রয়োজন ১১০ কোটি টাকা।
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী বলেন, “২২ হাজার স্কেলে যারা সিনিয়র শিক্ষক, তাদের সংখ্যাটা অনেক বেশি। প্রতিমাসে যে কর্তন করে রাখা হয় ৩০ বছরে কতো টাকা লাগে সেই হিসাব করে দেখা গেছে তিনি আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা জমা করেন কিন্তু তিনি টাকা পাবেন ১৫ লাখ টাকার উপরে। একজন অধ্যক্ষের জমা পরিমাণ ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা, তিনি পাচ্ছেন ৩৭ লাখ টাকা। এই কারণে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।”
তবে অবসর সুবিধা পেতে এর আগে শিক্ষক-কর্মচারীদের ৫ বছরেরও বেশি সময় লাগতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ খাতে ১৫শ’ ৫৭ কোটি অনুদান দেন, যা থেকে ২২ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়। বর্তমানে আরও ৩ হাজার ৫০০ কোটি বরাদ্দ পেলে এই সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব বলে জানান সচিব।
অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী আরও বলেন, “সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা অবসরের পর ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে তাদের টাকা পেয়ে যান। তবে বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ৩ বছরেও তাদের টাকা পাই না। এই বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি সদয় দৃষ্টি দেন তাহলে অবশ্যই সারাদেশে যেখানে ৯৫ শতাংশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী, তারা উপকৃত হবেন।”
এছাড়া, বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অনুদান পাওয়া গেলে এই সংকট থাকবে না বলে মনে করে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড।
এএইচ