টিকিট সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা
প্রকাশিত : ২০:২৪, ৪ জানুয়ারি ২০২৩
আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে এয়ার লাইনস্ টিকিট সিন্ডিকেট। আঙুল ফুলে কলা গাছ হলেও টিকিট সিন্ডিকেটগুলোর দিকে নজর দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই কর্তৃপক্ষের।
টিকিট সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় মালয়েশিয়াস্থ প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক, ছাত্র-ছাত্রী ও কলিংয়ে মালয়েশিয়াগামী ব্যক্তিরা। বিমানের অসাধু কর্মকর্তারা ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সঙ্গে যোগসাজশে এই সিন্ডিকেট করলেও যেন দেখার কেউ নাই।
জানা গেছে, মালয়েশিয়া থেকে ছুটিতে দেশে যেতে টিকেট কাটতে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। ছুটিতে দেশে যেতে নির্দিষ্ট বাজেটে টিকিট না পেয়ে বেকায়দায় পড়ে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে বেশি দামে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আবার বাজেটের অতিরিক্ত দামে টিকিট কেটে এক প্রকার খালি হাতে ছুটিতে যাচ্ছেন অনেক প্রবাসী।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় করোনা পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ লকডাউনে অধিকাংশ প্রবাসী আর্থিক সমস্যার কারণে দেশে যেতে পারেন না গত তিন বছরের বেশি সময়। পরবর্তীতে করোনার ধকল কাটিয়ে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি ছুটিতে গেছেন দেশে। যাওয়ার টিকিট কম দামে কেটে গেলেও আসার টিকিটের বর্তমান দাম ৪/৫ গুণ বেশি হওয়ায় স্বজনদের কাছে ধার দেনা করে টিকিট কেটে মালয়েশিয়া আসতে বাধ্য হচ্ছেন।
এছাড়া মালয়েশিয়ায় অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি কোম্পানি থেকে ছুটি মিললেও টিকিটের দামের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন। মালয়েশিয়া থেকে দেশে যাওয়ার টিকিট কম দামে মিললেও বাংলাদেশ থেকে আসার টিকিটের দাম ৪/৫ গুণ বেশি হওয়ায় চিন্তার ভাজ পড়েছে কপালে।
ইসলামী ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার স্টুডেন্ট তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, টিকিটের লাগাম ছাড়া মূল্য দেখার কেউ নাই, এটার কারণ কি? কলকাতা থেকে কয়ালালামপুরের বিমান ভাড়া ৩৬০ রিংগিত বা ৮,৬৪০ টাকা। অথচ ঢাকা থেকে কয়ালালামপুরের বিমান ভাড়া ২,০০৫ রিংগিত বা ৪৮,১২০ টাকা অথচ একই দিনের ফ্লাইট সমান দূরত্ব শুধু দেশ ভিন্ন।
ঢাকা-কুয়ালালামপুর ফ্লাইটে অনেক ছাত্র, ছাত্রী ও শ্রমিক ভাইয়েরা আসে, সবার জন্য বিমান ভাড়া (অতিরিক্ত) দেওয়াটা কষ্ট কর, মাননীয় মন্ত্রী (বিমান ও পর্যটন) মো মাহবুব আলী আপনি সবিনয় বিষয়টা দেখবেন প্লিজ।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বাসিন্দা মো. শাখাওয়াত হোসেন কাজ করেন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের একটি রেস্তোরায়। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে আর্থিক সংকটের কারণে বেশ কয়েক বছর দেশে যেতে পারেন না। এখন দেশে যেতে কোম্পানি থেকে ছুটি ম্যানেজ করলেও প্লেনের টিকিট কাটতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি।
মো. শাখাওয়াত হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, “দেড় মাসের ছুটিতে দেশে যাবো এ জন্য আমার কাছে একজন ট্রাভেল এজেন্ট মালয়েশিয়া থেকে সাম্প্রতিক সময়ে কম দামে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না বলে টিকিট সংগ্রহ করে দেওয়ার কথা বলে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা চেয়েছেন। পরিবারের লোকজন পথ চেয়ে বসে থাকে বিদেশ থেকে হয়তো কিছু কিনে আনবে। কিন্তু টিকিটের যে দামে তাতে দেশে গেলে নিজের হাত খরচ, তারপর শপিং করবো কি আর টিকিট করবো কি দিয়ে। এ জন্য টিকিট কেনা সম্ভব হচ্ছে না, আর দেশেও যেতে পারছি না।”
শাখাওয়াত হোসেনের যাওয়া না হলেও মালয়েশিয়া থেকে গত বছরের নভেম্বর মাসে সিঙ্গেল টিকিট কেটে ছুটিতে গেছেন বগুড়ার মামুন। তবে আসার টিকিট এখন ৪/৫ গুণ বেশি দামে তাকে কিনতে হচ্ছে ধার দেনা করে।
শাখাওয়াত ও মামুনদের মতো কয়েক লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশি কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য গত কয়েক বছর দেশে যেতে পারেনি। এখন যখন যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন দেশে যেতে উড়োজাহাজের টিকেট নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন।
মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, টিকিট সিন্ডিকেটের কারণে একদিকে যেমন প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন অন্যদিকে কলিংয়ে মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশি শ্রমিকদের আসতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। টিকিটের উচ্চ মূল্যের কারণে দেখা দিয়েছে বাড়তি খরচও। ফলে আঙুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন টিকিট সিন্ডিকেটগুলো যেন দেখার কেউ নাই।
এদিকে, ছুটিতে দেশে যাওয়া প্রবাসীদের টিকিট সিন্ডিকেটের হাত থেকে রক্ষা পেতে বিকল্প পথ অনুস্মরণ করার কথা বলছেন কেউ কেউ।
তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়ার ভিসা খুব সহজে পাওয়া যায়। আর বর্তমানে কলকাতা থেকে সরাসরি ও কানেক্টিং দুই ধরণের ফ্লাইট চালু রয়েছে। ইচ্ছা করলে কলকাতা থেকে খুব স্বল্প খরচে মালয়েশিয়ায় আসা সম্ভব। সে জন্য টিকিট সিন্ডিকেটকে শিক্ষা দিতে এই পথ অবলম্বন করতে পারেন। (চলবে)
এসি