ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ফরমায়েসি কাজে ব্যস্ত শিক্ষক, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা (ভিডিও)

মুশফিকা নাজনীন, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:০৪, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩

পাঠদানের পাশাপাশি শত কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় প্রাইমারি শিক্ষকদের। ল্যাট্রিন গণনা থেকে শুরু করে চাল বিক্রির তদারকির ভারও সইতে হয় তাদের। হুটহাট ভোটগ্রহণ, তালিকা হালনাগাদ, আদমশুমারি ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত কাজ তো আছেই। শিক্ষা ছেড়ে ফরমায়েসি কাজের কারণে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে পড়ালেখার মান। 

শিক্ষকেরা থাকবেন ক্লাসে। প্রতিষ্ঠানের উঠোন সাজবে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার নান্দনিক পরিবেশে। কিন্তু বছরের পর বছর এ ঘটনার ব্যত্যয় ঘটছে।

ক্লাসের বাইরে অধিকাংশ শিক্ষককে নানামুখি কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। কখনও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কখনও কৃষি মন্ত্রণালয়, কখনও বন-পরিবেশ কিংবা নারী শিশুর পরিসংখ্যান কষতে হয় তাদের। ত্রাণ দুর্যোগ, সমাজকল্যাণ, খাদ্য, স্বরাষ্ট্র কিংবা তথ্যের কাজ করতে প্রায়শই গ্রামের পর গ্রাম ঘুরতে হয় শিক্ষকদের। অথচ ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে স্পষ্ট করে বলাই আছে, ক্লাসের বাইরে অন্য কোনো কাজে যোগ দিতে পারবেন না শিক্ষকেরা।

শিক্ষকরা জানান, স্কুলেরও অনেক কার্যক্রম আছে যেগুলো স্কুল টাইমের বাইরে আমাদের করতে হয়। স্কুলে স্যানিটেশন কাজের জন্য আলাদা কোনো লোক নেই।

 যেসব কাজের নির্দেশ আসে প্রাইমারি শিক্ষকদের: আদমশুমারি, কৃষিশুমারি, ভোটগ্রহণ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও হালনাগাদ করা, শিশু জরিপ, খোলাবাজারে চাল বিক্রি তদারকি, কাঁচা-পাকা ল্যাট্রিনের শুমারি, কৃমির ট্যাবলেট, ভিটামিন-এ ক্যাপসুলসহ স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সব কাজ।

এছাড়া উপবৃত্তির তালিকা প্রণয়ন ও প্রাপ্তিতে সহযোগিতা, শিশুদের বিস্কুট খাওয়ানো, হিসাব সংরক্ষণসহ, মন্ত্রী-এমপি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সংবর্ধনা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দর্শকসারি পূরণসহ আরও আছে অনেক ধরণের ফরমায়েসি কাজ।

শিক্ষকরা বলেন, “এমনেই আমাদের অনেক কাজ করতে হয়। পাশাপাশি যদি ওইসব কাজ করতে হয় সেটা বড় রেসপনসিবল হয় উঠে আমাদের জন্য। এসব কাজের জন্য সরকার ইচ্ছা করলে নতুন বিভাগ স্থাপন করতে পারে। যখন যে কাজ বলে তখন সেটা করা লাগে। কিন্তু আমাদের কোনো মূল্যায়ন নেই।”

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেরানির কাজটি বহুদিন ধরেই করে আসছেন শিক্ষকেরা। আর শ্রেণিকক্ষের বাইরে এতো এতো কাজ করতে গিয়ে পড়ানোর ধারাবাহিকতা হারিয়ে ফেলেন তারা। অধিক শ্রমঘণ্টার ফলে অনেক শিক্ষক শারীরিক ও মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েন। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে শিশুশিক্ষার মানের ওপর। 

এক শিক্ষক বলেন, “ডিগ্রি পাস হচ্ছেন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক, তার ৯ হাজার ৩শ’ টাকা বেতন স্কেল। সে সবমিলে বেতন পায় ১৭ হাজার টাকা। এ টাকা দিয়ে এই আমলে চলা খুব কঠিন।”

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের মর্যাদা ও সম্মান অনন্য দৃষ্টান্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এদেশে প্রাইমারি শিক্ষকদের মূল্যায়ন করা হয় তৃতীয় শ্রেণীর গ্রেডে।

তারা জানান, শিক্ষক হিসাবে যদি আমাদের মর্যাদাটা যদি আরেকটু বাড়ানো হয় তাহলে হয়তো শিক্ষকদের সম্মানটা বাড়বে। যে সামাজিকতা বর্তমানে বিদ্যমান, এই সামাজিকতা বজায় রাখতে পারছেন না শিক্ষকরা।

পাঠদানের বাইরে শিক্ষকদের কেনো এতো কাজ করানো হচ্ছে? এমন প্রশ্নে নিরুত্তর থাকেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত। বলেন, এটি নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের ব্যাপার। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি