ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

১৯৭১ গণহত্যা: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ভবনের সামনে বিক্ষোভ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:১৮, ১৮ মার্চ ২০২৩

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে গণহত্যা চালানোর প্রতিবাদে জাতিসংঘ ভবনের সামনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর সেক্যুলার বাংলাদেশ এর সুইজারল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। 

শুক্রবার জেনেভায় জাতিসংঘ ভবনের সামনের ব্রোকেন চেয়ার স্কোয়ারে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশিদের উপর পাকিস্তানিদের অকথ্য অত্যাচার এবং বিশ্বের নৃশংসতম গণহত্যার বিচার চাইতে এবং একই সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতির দাবিতে জাতিসংঘের কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হন সুইজারল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশিরা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যার শিকার হয় বাংলাদেশিরা। এ ঘটনার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহলের স্বীকৃতি লাভ করতে পারে নি। এ ঘটনারই প্রতিবাদস্বরূপ এ বিক্ষোভের আয়োজন করে বাংলাদেশিরা। 

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, পাকিস্তানি জেনারেলরা ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এ দিন আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামক এক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু হওয়া এ যুদ্ধ প্রায় ৯ মাস ধরে চলেছিল এবং এ যুদ্ধে প্রায় ৩০ লক্ষ বাংলাদেশি শহীদ হন।

যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর যে নৃশংস হামলা, ধর্ষণ চালায় এতে প্রতি মাসে গড়ে ৩,৭৫,০০০ লোক নিহত হন। অনেক লোককেই নিজের দেশ, ভিটেমাটি ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয় ভারতে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের মাত্র এক বছর পরেই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মারা যান। ফলে পাকিস্তান জন্মের মূল যে উদ্দেশ্যগুলো ছিল তা আর পূরণ করা সম্ভব হয়ে উঠে নি।

জাতিগত পাঞ্জাবিরা নতুন রাজ্যে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে এবং দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে একচেটিয়া ক্ষমতা বিস্তারের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে, পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণ স্পষ্ট হয়ে উঠে। মূলত পাকিস্তানিদের এই বৈষম্যমূলক আচরণই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে নিরস্ত্র নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর দেরি না করে তৎক্ষনাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

তবে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের বলেছিলেন অন্ততপক্ষে ৩০ লক্ষ বাঙালিদের হত্যা করতে যাতে বাকিরা খুব সহজেই পাকিস্তানের কাছে নিজেদের হার স্বীকার করতে বাধ্য হয়।

ব্রোকেন চেয়ার ভাস্কর্যটি একদিকে যেমন ভঙ্গুরতার প্রতীক, অপরদিকে তেমনই শক্তির প্রতীক। এটি একইসাথে ভারসাম্যহীনতা ও স্থিতিশীলতা এবং সহিংসতা ও মর্যাদার প্রতীক।

পূর্বে হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল নামে পরিচিত, হিউম্যানিটি এন্ড ইনক্লুশন এর অনুরোধে ১৯৯৭ সালে প্রখ্যাত ভাস্কর ড্যানিয়েল বেরসেট এই ব্রোকেন চেয়ার হল ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে প্লেস ডেস নেশনসে ৩৯ ফুট দৈর্ঘ্যের এই ভাস্কর্যটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ ভাস্কর্যটি ভাঙা চেয়ারের তিনটি পায়ের উপর ভারসাম্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং চেয়ারের চতুর্থ পা টি যেন কোন হামলায় নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

এই চতুর্থ পা, যুদ্ধে আহত যোদ্ধাদের প্রতিচ্ছবি। নষ্ট হয়ে যাওয়া চতুর্থ পা যেমন অন্য তিন পায়ের সাথে ভাস্কর্যে সমান গুরুত্ব পেয়েছে, ঠিক তেমনি যুদ্ধাহত যোদ্ধারাও পদমর্যাদায় বাকি সবার সমান, এই ভাস্কর্যটি আমাদের এই শিক্ষাই প্রদান করে।

এসবি/ 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি