ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

শিশুদের মানসিক বিকাশে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে কার্টুন (ভিডিও)

মুশফিকা নাজনীন

প্রকাশিত : ১১:০৯, ২ জুন ২০২৩

কার্টুন- শিশুদের বিনোদনের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। টম এ্যান্ড জেরি, ডোরেমন, ডিজনী, হানি-বানি, নন্টে ফন্টে, মটু পাতলু, ছোটা ভীম সিনচ্যান, বাংলা কার্টুনসহ এমন আরও কতো সব নাম। বেশিরভাগ কার্টুনের প্রতিপাদ্য প্রতিহিংসা, ধর্ষণ, একাধিক বিয়ে কিংবা লিভ টুগেদার। শিশুদের মানসিক বিকাশে এসব কার্টুন ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। 

লুল্লু ভুত, জনপ্রিয় কার্টুনের অন্যতম। এর প্রতিটি পর্ব ইউটিউবে দেখেছে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ লাখ দর্শক। সাবস্ক্রাইব করেছেন ৪৭ লাখ মানুষ। চলুন দেখে আসি কার্টুনের প্রতিপাদ্য বিষয় কী? 

এটি গরিব মেয়ে ধনী ছেলের গল্প । ইউটিউবে শোভা পাচ্ছে এ্যানিমেটেড কার্টুন।  

বাংলা কার্টুন লিখে সার্চ দিলেই অন্তর্জালে চলে আসবে গরীব রাখি ওয়ালীর ভাগ্য, আর্মি ছেলের ভালোবাসা, জলপরী ও জেলের প্রেম, রতনের ডাইনী মা, অসহায় গর্ভবতী বউ ইত্যাদি এমন গল্পের পর্বগুলো। যেখানে অপরিণত বয়সে প্রেম, বিয়ে, ধর্ষণ আর প্রতারণা বিদ্যমান। এখানে নারী চরিত্রকেও দেখানো হয় নেতিবাচকভাবে।  

বর্ষা, বয়স ৯। ইউটিউবে কার্টুন দেখেই সময় কাটে ওর। বর্ষা জানে না এসব কার্টুন তার জন্য একেবারেই বেমানান। 

সেগুনবাগিচার মুনসাত আর মার্জিয়া। কিংবা কুষ্টিয়ার নুসরাত আর রাতসান। ওদের সবারই গভীর মনোযোগ কার্টুনে। 

কার্টুনে কি দেখানো হচ্ছে তা জানেন না অনেক অভিভাবকই। অনেক অভিভাবক জানেনই না ঠাকুরমার ঝুলির গল্পে নৈতিক শিক্ষা দেয়া হলেও তা বানানো হয় বড়দের উপযোগী করে। 

এক অভিভাবক জানান, কি দেখছে তা আমরা বুঝতেও পারিনা। অনেক সময় আমরা যখন দেখতে যাই তখন ওরা বিরক্ত হয় যে সন্দেহ কেন করা হচ্ছে।

ডিজনি-পিক্সার নির্মিত এনিমেটেড মুভিগুলো ৯০ ভাগই স্রেফ প্রেম-ভালোবাসার গল্প। জনপ্রিয় টম এন্ড জেরিতেও টম তার মেয়ে বন্ধু টুডলস বা পাশের বাড়ির অন্য কোন মেয়ে বিড়ালকে আকৃষ্ট করার জন্য নানা আচরণ করে। ডোরেমনেও নবিতার বান্ধবী সিজুকার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চলে। প্রশ্ন এসব কার্টুন কি শিশু কিশোরদের জন্য যৌন ইঙ্গিতবাহী নয়? 

অভিভাবকরা জানান, এসব কার্টুন বাচ্চাদের বয়সটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে আসে।

চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার বলেন, ইউটিউবে যে সকল কার্টুন রয়েছে তার বেশিরভাগই শিশুবান্ধব নয়।

বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, “কার্টুন মানেই বাচ্চাদের। কিন্তু তা তো দেখছিনা, খুবই খারাপ অবস্থা কার্টুনের।”

এসব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, “এখন যারা টেলিভিশন পরিচালনা করছেন তারাও কিন্তু দেখছেন না। এটা শিশুদের প্রোগ্রাম, যা হবার হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের সময়ে দারুনভাবে যত্ন নিয়েছি এবং শিশু সুলভ করেছি।”

মনোবিজ্ঞানী ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদের অভিমত, নেতিবাচক কার্টুন শিশু মনে দ্রুততম সময়ে প্রভাব ফেলে। 

তিনি বলেন, “কার্টুন কনটেনের ভেতরে আগ্রাসি আচরণ দেখানো হয়, হিংসা দেখানো হয়, যৌনতা দেখানো হয়, তখন শিশুর মনে আরেকটি হরমোন নিঃসরন হয়। এটাকে নিরো ট্রান্সমিটার বলি। এটার প্রভাবে এক ধরনের অ্যাডেকটিভ আচরণ অর্থাৎ আসক্তির মতো অবস্থা তার মধ্যে তৈরি হয়।”

ভালো-মন্দ কার্টুনের বিষয়ে অভিভাবকদের এখনই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। 

মনোবিজ্ঞানী ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত সেন্সরশীপের জায়গাটিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি