ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৪ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ক্রান্তিকালের সফল কান্ডারি

 ড. এম এ মাননান 

প্রকাশিত : ১৬:৫৬, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

আজ যদি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বেঁচে থাকতেন, দেখতে পেতেন তারই কন্যা তারই যোগ্যতার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়ে অন্যতম বিশ্বশ্রেষ্ঠ সফল রাষ্ট্রনায়কের মর্যাদাপূর্ণ আসনে নিজকে স্থিত করে রক্ষা করছেন দেশটাকে, যে দেশকে তিনি মুক্ত করেছিলেন হানাদারদের কবল থেকে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে, শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে, বৈষম্যহীন সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে। ৭৭তম জ ন্ম দিনে তার জনকল্যাণকামী কন্যা জনমানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরের উপরে টেনে এনে প্রমাণ করেছেন, লক্ষ্য যদি সঠিক হয় আর নেতৃত্ব যদি সৎ হয়, রাষ্ট্র তার গতিপথ হারায় না। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষা করেছেন, জনগণের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। চলি­শ বছরের রাজনৈতিক জীবনে স্বাধীনতাবিরোধীদের অব্যাহত চক্রান্ত-সহিংসতায় উনিশ বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে বাবার নেতৃত্বে পাওয়া নতুন দেশটাকে অসীম সাহসে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন একচলি­শের দিকে, যখন দেশটা শামিল হবে উন্নত দেশের কাতারে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে, নতুন বাংলাদেশের রূপকারকে, দু’হাজার তেইশে তার ৭৭তম জ ন্ম দিনে সশ্রদ্ধ শুভেচ্ছা।

প্রথম জীবনে তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে না থেকেও একাশির সতেরো মে বাধ্যতামূলক প্রবাসজীবন ত্যাগ করে গৃহবধূ থেকে হয়ে উঠেন চৌকশ রাজনীতিবিদ। উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন দেশ আর দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। স্বাধীনতা-উত্তর মাত্র সাড়ে তিন বছর জাতির পিতা-হয়ে-যাওয়া বাবার সান্নিধ্যে কাটাতে পারলেও পারেননি কাটাতে বাকি জীবন। বাবা-মা হারানোর দুঃসহ স্মৃতি বুকে নিয়ে ঘুরছেন দেশের মাটিতে, মাটি-মানুষের সঙ্গে, যাদেরকে তার বাবা মমতা দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন সারা জীবন। বাংলার বাস্তবতার সঙ্গে একাÍ হয়ে, সম্পৃক্ত হয়ে, আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অবস্থা হৃ দয়ঙ্গম করে লাজনম্র গৃহবধূ থেকে হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত রাষ্ট্রনায়ক।

শেখ হাসিনা দ্বীপান্তর থেকে ফিরে এসেছিলেন ১৯৮১ সালে সামরিক স্বৈরাচার কবলিত বাংলাদেশে। যেখানে নিষিদ্ধ ছিল জাতির পিতার নাম মুখে নেওয়া, তার হত্যাকারীদের বিচার চাওয়া, ক্ষমতাসীন ঘাতকদের শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, ইনডেমনিটির বিরুদ্ধে কথা বলা, রাজাকার পুনর্বাসন নিয়ে প্রশ্ন তোলা, ইতিহাস বিকৃতির মহাযজ্ঞ বন্ধ করা নিয়ে আন্দোলন করা। তবে তিনি ফিরে এসেই নামলেন কঠিন জটিল-কুটিল-সংঘাতময় রাজনীতির ময়দানে, অনেক অবিশ্বাস্য প্রতিক‚লতার বিরুদ্ধে অলিখিত যুদ্ধে। হাতে তুলে নিলেন বিধ্বস্ত করে দেওয়া আওয়ামী লীগের নৌকার বৈঠা, দিলেন নিরপেক্ষ নির্দলীয় ত ত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, গর্জে উঠলেন রাজপথে জাতির পিতার হত্যার বিচার চেয়ে আর লুণ্ঠিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিতে নামলেন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারী সেনাশাসকদের বিরুদ্ধে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে হয়ে উঠলেন প্রতিবাদী।

সমগ্র জাতি যখন পতিত অমানিশার অন্ধকারে, তখনই তিনি দৃঢ়চিত্তে অকুতোভয়ে স্বাধীন বাংলার মানুষকে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে শুরু করলেন ভাত-ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি, নির্বাসিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর নিষিদ্ধ গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম। সামরিক স্বৈরাচার, স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্ত আর দেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সারা দেশে সৃষ্টি করলেন গণজোয়ার। পরবর্তীতে রয়েসয়ে বুঝেশুনে ধীরে ধীরে শুরু করলেন তার অনুপম রাজনৈতিক কৌশলের প্রয়োগ। এক মঞ্চে এনে একত্রিত করলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে। আন্দোলনের ধারায় টেনে আনলেন দক্ষিণপন্থিদের। ছিয়াশিতে ভোট ডাকাতি হওয়ার পরও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা খাটিয়ে সংসদ বয়কট না করে বরং সংসদে বিরোধী দলের নেত্রী হয়ে অংশগ্রহণ করলেন সংসদের অধিবেশনে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সংঘটিত মিডিয়া-অভ্যুত্থানের নির্বাচনে হতবিহ্বল না হয়ে যুগপৎ শুরু করলেন সংসদের ভেতরে-বাইরে আন্দোলন, যার ফলে এক জেনারেলের অশুভ ছায়ার উত্তরসূরি আরেক সামরিক সরকারকে সংসদ ভেঙে দিতে হলো মাত্র এক বছরের মাথায়। সেই দশকের শেষ দিকে এসে আবার অনুষ্ঠিত প্রহসনমূলক নির্বাচনে গঠিত সংসদও টিকতে পারেনি জননেত্রীর তীব্র আন্দোলনের মুখে। গণঅভ্যুত্থানে ভেসে গেল জাতির বুকে জগদ্দল পাথরের মতো গেড়ে বসা গণতন্ত্রের মুখোশ পরা সামরিক সরকার। বিদায় নিতে হলো নব্বই-এর শেষ মাসের প্রথম সপ্তাহে। এরপরও জননেত্রীকে শান্তিতে থাকতে দেওয়া হয়নি। একানব্বই-এর নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা জোট সরকার আবারও গণতন্ত্রকে পদদলিত করল। জাতির এমন দুঃসময়ে এগিয়ে এলেন শেখ হাসিনা পিতারই মতো নির্ভীকচিত্তে, অনিশ্চয়তার তিমিরে হারিয়ে যাওয়া দেশকে বাঁচানোর জন্য ডাক দিলেন অসহযোগ আন্দোলনের, আর তারই নেতৃত্বে তীব্র গণআন্দোলনের মুখে জাতি ফিরে পেল ভোটের অধিকার। গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা গণতান্ত্রিক সরকারের দিলেন নতুন অভিধা-ঐকমত্যের সরকার গঠন করে সৃষ্টি করলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের শাসনের পরিবর্তে ‘নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বের শাসন’ যা ছিল বাংলাদেশে জাতীয় ঐকমত্যের নতুন ধারণা। তিনি প্রমাণ করেছেন, জনতার ঐক্যই তার রাজনীতির অস্ত্র, যে অস্ত্র দিয়ে তিনি স্বৈরাচারী শাসনের মৃত্যু ঘটিয়েছেন; গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছেন; জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন; বঙ্গবন্ধু আর জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন; দেশবিরোধীদের আস্ফালন স্তিমিত করে দিয়েছেন; জঙ্গিবাদের মুখে অগ্নিশিখা জ্বালিয়েছেন; নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্ববাসীর চোখে ধাঁধা লাগানো অবিশ্বাস্য পদ্মা সেতু, প্রথম মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ইংলিশ চ্যানেলের টানেলের অনুরূপ চোখ-জুড়ানো কর্ণফুলী টানেল, প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি নজরকাড়া উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্ব পরিমণ্ডলে দেশকে এনে দিয়েছেন মর্যাদার আসন; গড়ে তুলছেন একটি আধুনিক বাংলাদেশ এবং সর্বোপরি বিশ্বের বুকে নিজকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সফল রাষ্ট্রনায়ক আর মানবতার প্রতীক হিসাবে।

তিনি ফিরে এসেছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত বিপ্লব বাস্তবায়নে আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশাল অগ্রগতি। শেখ হাসিনার কৌশলিক নেতৃত্ব বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে বহুদূর। জনগণের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন এবং এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। রাজনীতি যার রক্তে মেশানো তিনি কী করে জনগণ থেকে দূরে থাকতে পারেন? উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর জননেত্রী এগিয়ে চলেছেন দৃপ্ত পদক্ষেপে। করোনা অতিমারি আর ইউক্রেন যুদ্ধে দিশেহারা বিশ্বে সাহস হারাননি তিনি একটুও।

অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশটাকে তিনি এনে দিয়েছেন আÍনির্ভরতার মর্যাদা। আগের সরকারগুলোর কাছে অকল্পনীয় অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, যে জাতি নতুন দেশ সৃষ্টি করতে পারে সে জাতি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে অসম্ভবকে জয় করার প্রত্যয়ও রাখে। বারবার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েও যিনি অসীম সাহসে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন, তেমনি সারা জাতিকেও শির উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস তিনি জুগিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বারবার তিনি প্রমাণ করেছেন, তিনিই আমাদের ক্রান্তিকালের সফল কান্ডারি।

উন্নয়নের আলোকবর্তিকা হিসাবে আবির্ভূত, সারা বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক জননন্দিত জননেত্রী শেখ হাসিনার জ ন্ম দিনে একমাত্র কামনা ‘বেঁচে থাকুন হাজারও বছর’ বাংলাদেশের জন্য, বাংলার মানুষের জন্য। আপনি বেঁচে থাকুন জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরি হিসাবে, আপন মমতায় গড়ে তুলুন দেশটাকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আলোকে, লক্ষ্যে অবিচল থেকে। মেরুজ্যোতির উদ্ভাস ছড়িয়ে পড়–ক আপনার চারপাশে আর তারই উজ্জ্বল শিখায় আলোকিত হোক সারা বাংলাদেশ-আপনার প্রিয় পিতার কাক্সিক্ষত সোনার বাংলাদেশ, আপনার স্বপ্নের আধুনিক ডিজিটাল-স্মার্ট বাংলাদেশ।

ড. এম এ মাননান : কলামিস্ট; সাবেক উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

এসবি/ 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি