ইফতার-সেহরী : রেস্তোরাঁ নির্ভরতা বাড়ছে নগরবাসীর
প্রকাশিত : ১৭:১৩, ৩০ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৪:৩০, ২ জুন ২০১৮
পবিত্র মাহে রমজানে ইফতার ও সেহরিকে কেন্দ্র করে হোটেল-রেস্তোরাঁ নির্ভরতা বাড়ছে নগরবাসীর। একসময় পরিবার পরিজন নিয়ে মানুষ বাসা-বাড়িতে ইফতার-সেহরি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। সময়ের বিবর্তনে সে রীতিতে অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। এখন নগরবাসী আয়েশ করে মুখোরোচক খাবার খেতে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভিড় জমান। এটি এক ধরনের বিনোদনেও পরিণত হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকজন কখনও বন্ধুরা মিলে কখনও পরিবারের সঙ্গে সেহরির স্বাদের বৈচিত্র্য আনতে শেষ রাতে ছুটে যাচ্ছেন নগরীর নামকরা হোটেল-রেস্তোরাঁয়। ভোজনপিপাসু মানুষের এমন চাহিদার কথা মাথায় রেখে পুরান ঢাকাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকার হোটেল-রেস্তোরাঁয় ইফতার-সেহরির সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুরান ঢাকায় ২০০ থেকে ২৫০ হোটেল রেস্তোরাঁয় ইফতার-সাহরি পরিবেশন করা হচ্ছে। রোজা যত বাড়ছে রাতে সাহরিতে জনতার ভিড় তত বাড়ছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকে রেস্তোরাঁ মালিক গলাকাটা দাম রাখছেন বলেও অভিযোগ উঠছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলিফ্যান্ট রোডের ধানমন্ডি স্টার কাবাবের সহযোগী ম্যানেজার মো. রিপন একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, নগরবাসীর চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমরা প্রতিবছর ইফতার-সাহরি পরিবেশন করি। গত বছরের তুলনায় এবার সেহরিতে রোজাদারদের খানাপিনা বেড়েছে। প্রতিনিয়ত আমাদের এখানে ১৫০ জনের উপর সেহরি খায়। এছাড়া বাসায় ছেলে-মেয়েরা খেতে চাইলেও এখান থেকে পার্সেল নিয়ে যায়। গরুর মাংস বাদে সাহরিতে স্টারের নিয়মিত মিলবে সব খাবার। জনপ্রতি মাছ-ভাত খেলে খরচ ২৩০ টাকা, মাংস-ভাত ১৫০ টাকায়।
বুধবার নগরীর বিভিন্ন এলাকার হোটেল-রেস্তোরাঁয় সেহেরির আয়োজনের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরান ঢাকার অধিকাংশ হোটেল-রেঁস্তোরায় ইফতার-সাহরি খেতে আসা মানুষের ঢল নামে। এ ব্যাপারে কথা হয় পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের আফতাব রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আফতাবের সঙ্গে। একুশে টিভি অনলাইনের এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেল, ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালের কাছে তাদের রেস্তোরাঁ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভিড় বেশি। এছাড়া ২০ রমজানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অধিকাংশ হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখানে সেহরি খেতে আসেন।
এ হোটেলে সারা বছরই প্রতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে (১৭ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত) উটের মাংসের ভুনা খিচুড়ির ব্যবস্থা থাকে। তাদের এখানে সাহরিতে বিরিয়ানি, তেহারি, মোরগ পোলাও কাচ্চি বিরিয়ানি আর চিকেন বিরিয়ানি নগরবাসীর সব শ্রেণীর মানুষের কাছে অতি পরিচিত। তেহারির সর্বনিম্ন দাম ৭০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা। খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি ১ প্লেট ঊর্ধ্বে ২২০ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ১৭০ টাকা। চিকেন বিরিয়ানি ১ প্লেট ২০০ টাকা, মোরগ পোলাও ১ প্লেট ২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া উটের মাংসও মিলে এখানে। তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর ইফতার ও সেহরিতে ভিড় বেশি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমজান উপলক্ষে রাজধানীর বেশকিছু হোটেল-রেস্তোরাঁ সেহরির ও মজাদার ইফতারের ব্যবস্থা করেছে। এর মধ্যে স্টার হোটেল অ্যান্ড কাবাবের বনানী, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, জয়কালী মন্দির, এলিফ্যান্ট রোড, জনসন রোড, ধানমন্ডি-২, মগবাজার ও গুলিস্তান শাখায় আছে সেহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা। এছাড়া সেহরির আয়োজনে আলাউদ্দিন রোড, ঠাটারিবাজার, রায়সাহেব বাজার, চানখাঁরপুল, নাজিরাবাজার ও বংশাল এলাকার আল-ইসলাম, কালামস কিচেন, ঘরোয়া, ক্যাফে ইউসুফ, কামাল হোটেল, মামুন বিরিয়ানি, নাজিরিয়া, রাজধানী ও সোহাগ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের বেশ নামডাক আছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী আতিক জানান, পরিবারের সবাই একসঙ্গে সেহেরী খাওয়া অন্য রকম স্বাদ। আর এখন রেস্টুরেন্ট একটু সময় ঘুরাঘুরি হলো। আতিকের স্ত্রী সুমিও যোগ করেন, বছরে এক মাস রোজা। এই মাসে একটা দিন পরিবারের সবাইকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় সেহরি করার স্বাধ-ই আলাদা।
সেহরির আয়োজন নিয়ে লালবাগের রয়েল হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্ট ব্যবস্থাপক আমিন বলেন, সেহরিতে আমরা মানসম্পন্ন খাবার পরিবেশন করছি। স্বাদ একই আছে। সেহরির খাবারে ভারী মসলার ব্যবহার কমানো হয়েছে। খাবার স্বাস্থ্যকর করতে আমরা বিশেষ খেয়াল রাখছি। নতুন ঢাকার অনেক রেস্তোরাঁও আছে সেহরির ব্যবস্থা। কম টাকায় মানসম্মত খাবার পাওয়া যায়। এর মধ্যে গ্লোরিয়া জিনসের গুলশান-১, ২ ও ধানমন্ডি শাখায় পাবেন মাটন রেজালা, আচারি বিফ এবং ফিশেন মাস্টার। সঙ্গে ভাত আর সবজি। জনপ্রতি খরচ ৬৩২ টাকা।
বনানীর হোটেল সেরিনায় তাদের তৈরি করা খাবারের পাশাপাশি পছন্দের খাবারের ফরমায়েশও দেওয়া যাবে। জনপ্রতি খরচ ১ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া রাজধানীর নামি-দামি হোটেলের মধ্যে ওয়েস্টিন খাজানা পান্থশালালা মেরিডিয়ান ৫ শত থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা মধ্যে সেহেরির ব্যবস্থা করেছে|
এদিকে কেউ কেউ আবার সেহরি খেতে চলে যাচ্ছেন পদ্মা নদীর মাওয়া ঘাটে। সাদা ভাত, ভর্তা, ইলিশসহ নদীর অন্যান্য মাছ ও মাংস দিয়ে সারছেন সেহরির আহার। সেখানকার একটি রেস্তারাঁয় সেহেরি খেয়ে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজিব হাসান জানান, বন্ধুদের নিয়ে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেহরি খেতে পদ্মা নদীর মাওয়া ঘাটে খেতে যাই। এবারও গিয়েছিলাম ইলিশ ভাজা দিয়ে সেহরি খাওয়ার স্বাদ নিতে।
/ এআর /