ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সেলিম প্রধানের ফ্ল্যাটে সুন্দরীদের হাট

আউয়াল চৌধুরী

প্রকাশিত : ১৯:০৭, ২ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ১৯:১২, ২ অক্টোবর ২০১৯

অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসার মূল হোতা সেলিম প্রধানের বিভিন্ন বাসায় বসতো সুন্দরীদের হাট। রাতভর চলতো আনন্দপূর্তি। প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্যতার কারণে এসব পার্টি নিয়ে তাকে কোনো চিন্তাই করতে হতো না। অনেক নামি দামি মানুষ এসব পার্টিতে সুন্দরীদের সঙ্গে অংশ নিতেন।

র‌্যাব সূত্র থেকে জানা যায়, সেলিম অনলাইনে বিশ্বের সুপরিচিত ক্যাসিনোগুলোর সঙ্গে জুয়াড়িদের যুক্ত করার কাজ করতেন। এসবে তিনি সুন্দরীমেয়েদেরও কাজে লাগাতেন। প্রধান বেশির ভাগ সময়ই বিদেশে অবস্থান করতেন। আর দেশে আসলেও তার লাইফস্টাইলের কোনো পরিবর্তন ঘটতো না। রাতের বেলা লাল নীল বাতি জ্বলে উঠতো তার ফ্ল্যাটে। নাচ গান আর মদের সঙ্গে সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে চলতো ব্যবসায়িক কাজ। সেলিম মূলত জাপানে গাড়ির ব্যবসা করতো। সেখান থেকে পাড়ি জমান থাইল্যান্ডে। এখানে এসেই মি. দো নামে একজনের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে নামেন অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়। ব্যবসার প্রসারে মনোরঞ্জনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতে থাকেন মডেল আর নায়িকাদের। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তার ব্যবসা। 

জানা গেছে, সেলিমের স্ত্রীও রয়েছে তিনটি। জাপান থাকাকালে ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য সেখানকার এক প্রভাবশালী পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন। সেখানে তার ২১ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। এরপর ঢাকার চকবাজারে করেন আরেক বিয়ে। তারপর তৃতীয় আরেকটি বিয়ে করেন রাশিয়ান এক তরুণীকে। তিন দেশের তিনজনকে নিয়ে চলছে সেলিমের অন্যরকম ব্যবসায়ীক কারবার। বর্তমানে তার রাশিয়ান স্ত্রী সন্তানসম্ভবা বলে জানা গেছে।

সেলিম প্রধান তার ব্যবসার কাজে তরুণীদের নানাভাবে ব্যবহার করতেন। সুন্দরী মডেলরাই হলো তার ব্যবসায়ীক হাতিয়ার। প্রয়োজনে তাদের তিনি ব্যবহার করতেন। বিভিন্ন জনের কাছে পাঠাতেন। যেসব মডেল, নায়িকা আর সুন্দরীরা তার কাছে যেত র‌্যাব তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। তবে র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানান, সেলিম অনেক তথ্য দিয়েছে। এখনো জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়নি। শেষ হলে জানাতে পারবো।

সেলিম ‘প্রধান গ্রুপ’-এর কর্ণধার। দেশে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড, পি২৪ ল ফার্ম, এ ইউ এন্টারটেইনমেন্ট, পি২৪ গেমিং,  প্রধান হাউস ও প্রধান ম্যাগাজিন। এর মধ্যে পি২৪ গেমিংয়ের মাধ্যমে তিনি জুয়াড়িদের ক্যাসিনোয় যুক্ত করতেন।

এছাড়া সেলিমের থাইল্যান্ডেও রয়েছে ব্যবসা। সেখানে তার রয়েছে ক্যাসিনো, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, বেশ কয়েকটি স্পা ও বিউটি স্যালুন। বাংলাদেশের অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসাও সেখান থেকে পরিচালনা করতেন সেলিম।   

ক্যাসিনো কারবারদের ধরা শুরু হলে সেলিম গোপনে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেতে চাইলে গেল সোমবার র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেমের নেতৃত্বাধীন একটি দল থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট থেকে তাকে নামিয়ে আনে। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তাকে নিয়ে অভিযান শুরু হয়। তার গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর সড়কের ১১ নম্বরের মমতাজ ভিশনে অভিযান চালানো হয়। সেখানে সেলিম তার তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। চতুর্থ তলায় রয়েছে তার প্রধান গ্রুপের কার্যালয়। র‌্যাব এ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পায়। এরপর সেলিমের বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে তার তিন কর্মচারিকে গুত্বপূর্ণ নথিসহ আটক করে। সেখানে র‌্যাব ২১ লাখ টাকা ও ক্যাসিনোর নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করে।   

জানা গেছে, সেলিম প্রধান ঋণখেলাপি। রূপালী ব্যাংক থেকে তিনি ১০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। ২০১৮ সালে ঋণটি পুনঃতফসিল করা হয়। এছাড়া তার সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারসে বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ছাপা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিসের নথিপত্রও ছাপানো হয়।    

এ বিষয়ে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার নাগরিক মি. ইয়াংসিক লির সঙ্গে সেলিম প্রধান যৌথভাবে অনলাইন ক্যাসিনো খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। আমরা এরই মধ্যে অর্থ পাচারের কিছু তথ্য পেয়েছি। একটি গেটওয়েতে গত এক মাসে ৯ কোটি টাকা উত্তোলনের প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তাদের আরও কি কি গেটওয়ে আছে সেটা নিয়ে আমরা এখন কাজ করছি।’    

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি