ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

বাবা-মাকে হত্যা করা ঐশী কেমন আছেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:২৫, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

মনে আছে- রাজধানীর চামেলীবাগে নিজ বাসায় বাবা পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও মা স্বপ্না রহমানকে নিজ হাতে হত্যাকরা ঐশী রহমানের কথা! হয়ত অনেকেই ভুলে গেছেন? সেই ২০১৩ সালের কথা। ওই বছর ১৬ আগস্ট সকালে ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমানের ঘরে নেমে আসে অন্ধকার। তারপরের ঘটনা সবারই জানা। এরপর দেশে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনার চাপে চাপা পড়ে গেছে ঐশীর গল্প। কিন্তু কেমন আছেন ঐশী?

একটা সময় ছিল যখন রাজধানীর বুকে নামিদামি রেস্টুরেন্টে আড্ডা দেয়া, বন্ধুবান্ধব নিয়ে সময় কাটানো ছিল ঐশীর নিত্য দিনের রুটিন। কিন্তু অসৎ সঙ্গ তাকে পৃথিবীর সব চেয়ে নোংরা কাজটি করতে প্রেরণা জুগিয়েছে।

বাবা-মা পরিবারের অন্যদের নিয়ে যার এখন মেতে থাকার কথা ছিল, সেই ঐশী এখন কারাগারে বন্দী। যেখানে একাকী সময় কাটছে তার?

কারা কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, গত রমজানে নিয়মিত রোজা রেখেছেন একসময়ের উশৃঙ্খল ঐশী। নামাজও পড়েছেন নিয়মিত।

ঐশী যখন তার বাবা-মাকে হত্যা করে তখন সে নেশাসক্ত ছিল। নির্বিবাদে নেশা করার জন্যই কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে এবং পরে কুপিয়ে হত্যা করে বাবা-মাকে। সেই নেশা এখন আর নেই ঐশীর মধ্যে। স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে সে। তবে এখন সে অনেক চুপচাপ থাকে। বিশেষ করে ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর থেকে ঐশী আর আগের মতো আচরণ করে না।

বাবা-মাকে হত্যার দায়ে ২০১৫ সালে ঐশীকে ফাঁসির আদেশ দেন বিচারিক আদালত। তার বন্ধু রনির সাজা হয় দুই বছরের কারাদণ্ড। পরে আপিলে ২০১৭ সালের ৬ জুন উচ্চ আদালত ঐশীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন। সেই থেকে ঐশী স্থায়ীভাবে কাশিমপুর মহিলা কারাগারের বাসিন্দা।

কারা সূত্রে জানা যায়, নেশাসক্তি কেটে যাওয়ার পর থেকেই অনুশোচনা চলছে ঐশীর ভেতর। এখন প্রায়ই অনুশোচনায় নিস্তব্ধ হয়ে থাকে সে। মাঝে মাঝে একা একা ফুপিয়ে কাঁদে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট সকালে চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগেই তাদের মেয়ে ঐশী বাসা থেকে পালিয়ে যায়।

পরদিন ১৭ আগস্ট মাহফুজুর রহমানের ভাই মশিউর রহমান এ ঘটনায় পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই ঐশী পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করে তার বাবা-মাকে খুন করার কথা জানায়। পরে ২৪ আগস্ট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয় ঐশী। তবে পরে ওই জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু সাক্ষ্য, আলামত ও অন্যান্য যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তা নাকচ হয়ে যায়।

২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর আলোচিত এ মামলার রায়ে ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডে সহায়তার দায়ে তার বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে আরেক বন্ধু আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস দেওয়া হয়।

নিম্ন আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে জানায়, সাক্ষ্য-প্রমাণ অনুযায়ী, ঘটনার সময় আসামি ঐশী প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। আর হত্যাকাণ্ডটিও ছিল পরিকল্পিত ও নৃশংস।

তবে ঐশী রহমানের অপরাধ মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য হলেও তার বয়স ও মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন উচ্চ আদালত।

পর্যবেক্ষণে ওই সময় আদালত বলেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ডকে নিরুৎসাহিত করা হলেও আমাদের দেশে এ বিষয়ে কোনো গাইডলাইন নেই। পরিবেশও এখনো আসেনি। শিক্ষার হার যেমন বেড়েছে তেমনি জনসংখ্যাও বেড়েছে। এ কারণে অপরাধের প্রবণতাও বাড়ছে। এ অবস্থায় মৃত্যুদণ্ড রহিত করা যুক্তিসঙ্গত নয়।

তবে মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নয় জানিয়ে আদালত রায়ে বলেছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলেই সমাজ থেকে অপরাধ দূর হয় তা বলা যায় না। লঘু দণ্ডও অনেক সময় সমাজ থেকে অপরাধ কমাতে সাহায্য করে।

বাবা-মা ও অভিভাবকদের সন্তানদের জন্য ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সন্তানদের উপযুক্ত সময় দেওয়া উচিত বলেও উল্লেখ করেছে আদালত।
এসএ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি