ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

নির্বাচনে আলোচিত নারী প্রার্থীদের পরাজয়, শুধু জিতলেন...

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৪৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৪:১৪, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ভোটারদের সঙ্গে সাহানা আক্তার- সংগৃহীত

ভোটারদের সঙ্গে সাহানা আক্তার- সংগৃহীত

বর্তমানে একুশে টেলিভিশন’র নিজস্ব প্রতিবেদক। তিনি দৈনিক ইত্তেফাক, ডেইলি নিউএইজ, এনটিভি’র কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ছিলেন ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি’র নেতৃত্ব দিয়েছেন। একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৭’তে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘আসমত আলীর অনশন’ প্রকাশিত হয়। তার বহু গবেষণা প্রবন্ধ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থাপিত হয়েছে।

গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশরন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে দুই সিটির মোট ১২৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৫৮৬ জন প্রার্থী সাধারণ কাউন্সিল পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ১২৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে মাত্র দুই নারীকে সমর্থন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি সমর্থন দিয়েছিল চার নারী প্রার্থীকে। বড় দুই দলের প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ১৮ নারী। অথচ এই ২৪ নারীর মধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র একজন। 

আলোচিত বা সমালোচিত কোন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীই এ নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। তবে পাশ কাটিয়ে সকল প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে কাউন্সিলর পদে জিতেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সাহানা আক্তার।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ১২৯টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলরের মধ্যে তিনিই এক মাত্র নারী কাউন্সিলর। নির্বাচনে পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে জয়লাভ করা সাধারণ মানুষের জয় বলেই মনে করছেন সাহানা আক্তার। 

এ সিটি নির্বাচনে বড় দুই দল থেকে মাত্র ৬ নারীকে কাউন্সিলর পদে সমর্থন দেওয়াকে নারীর সমতা ও অধিকারকে গুরুত্ব সহকারে সম্মান করা হয়েছে বলে মনে করছেন না নারী অধিকার কর্মীরা। তারা বলছেন, ‘বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বিষয়টি মুখে মুখেই রয়েছে এখনও। কার্যত কোনো প্রয়োগ নেই। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো এখনও নারী প্রার্থীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না। ফলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও জয়লাভ করতে পারে না তারা। এসব কারণেই নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় দিন দিন কমছে।’

ডিএনসিসি’র নির্বাচনে ৩১ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের হয়ে সাধারণ কাউন্সিলর প্রদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ডেইজী আলেয়া সারোয়ার ডেইজী- সংগৃহীত

এ নির্বাচনে নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিলেন উত্তর সিটির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের আলোচিত প্রার্থী আলেয়া সারোয়ার ডেইজী। তিনি লাটিম প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আগে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে থেকে জনগণের অনেক ভালোবাসা অর্জন করলেও দলের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় হেরে গেছেন এবার বলে জানান তিনি। 

২০১৮ সালের মার্চে ঢাকার দুই সিটিতে মশা মারতে ‘কামান ব্যবহার’ করার ঘটনা। ঐ সময় তার মশা নিধনের ডেইজীর একটি ‘ফিল্মি’ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ৩১ ওয়ার্ডে এ ভিডিও’র কারণে অনেক আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে পড়েন ডেইজী। 

            ২০১৮ সালের মার্চে মশা নিধনের এমন ‘ফিল্মি’ ভঙ্গির কারনে আলোচনায় আসেন ডেইজী- সংগৃহীত

জানা যায়, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ হাজার ৩১ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টি (জাপা) সমর্থিত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম সেন্টু। আর নিকটতম প্রার্থী হিসেবে আলেয়া সারোয়ার ডেইজী পেয়েছেন ২ হাজার ৯১ ভোট। ডেইজী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি। এই ওয়ার্ডে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ইমতিয়াজ খানকে হারিয়ে জয়লাভ করেছিলেন শফিকুল ইসলাম সেন্টু।

নারী প্রার্থীদের হেরে যাওয়ার প্রধান দুটি কারণ এমনটি বলছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি মনে করেন, প্রথম কারণ দলীয়ভাবে মনোনয়ন না পাওয়া। আর এবার তুলনামূলকভাবে ভোটারের সংখ্যা কম ছিল। সে অনুযায়ী নারী ভোটারের সংখ্যা ছিল আরও কম। এ কারণে নারী প্রার্থীরা হেরে যান। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, পেশিশক্তি ও অর্থশক্তি। এ দুইয়ের কোনোটাই তেমন ছিল না নারী প্রার্থীদের। ফলে নির্বাচনের কঠিন পরীক্ষায় নারীরা হেরে গেছেন। আর এ পরাজয়ের কারণে ভবিষ্যতে নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ কমে যাবে। কারণ তার পরিবার তাকে আর সাপোর্ট দেবে না। ফলে নতুন মুখ আসবে। আর এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। 

জানা যায়, রেডিও প্রতীকে ৩ হাজার ৯৬২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সাহানা আক্তার। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নাসির আহম্মদ ভুইয়া (টিফিন ক্যারিয়ার মার্কা) পেয়েছেন ২ হাজার ২৫০ ভোট। সাহানা আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী। এর আগে তিনি ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে এলএলএম সম্পন্ন করেছেন। এ এলাকায় ২৫ বছর কমিশনার ছিলেন তার বাবা সাইদুর রহমান সহিদ। 

উপরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাজেদা আলী হেলেন; নিচে  দক্ষিণের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডেন শাহিদা মোর্শেদ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেহেরুন্নেছা- সংগৃহীত

উল্লেখ্য, ১২৯ পদের বিপরীতে মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রত্যাহারের পর চূড়ান্ত লড়াইয়ে ছিলেন মোট ৫৮৬ জন। এর মধ্যে দক্ষিণে ৩৩৫ জন এবং উত্তরে ২৫১ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। উত্তর সিটির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে আলেয়া সারোয়ার ডেইজী ও ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে হেলেন আক্তার সাধারণ কাউন্সিলর পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন। অন্যদিকে বিএনপির সমর্থন নিয়ে ভোট করেন উত্তরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে সাজেদা আলী হেলেন, দক্ষিণের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে শাহিদা মোর্শেদ, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে মেহেরুন্নেছা।

এমএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি