শিক্ষা বিস্তারে পৃথিবীর অনন্য গ্রাম সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর
প্রকাশিত : ১৬:৫২, ১ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৭:০৯, ১ মার্চ ২০২০
এনায়েতপুরে যমুনার কোল ঘেঁষে অবস্থিত খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: একুশে টেলিভিশন
সিরাজগঞ্জের এক সময়ের অনগ্রসর এনায়েতপুর এখন শিক্ষা বিস্তারে পৃথিবীর অনন্য গ্রাম। তাঁত শিল্পে সমৃদ্ধ গ্রামটিতে প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে মানসম্মত সর্বোচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপিঠ এখানে থাকায় প্রতিদিন দেশ-বিদেশের ৮ হাজার ৪শ’ জন ছাত্র-ছাত্রীর পদভারে আলোকিত হচ্ছে এ জনপদ।
শিক্ষার বিকাশে নিজের থাকার জায়গাটুকুও দান করেন প্রয়াত ডা. এমএম আমজাদ হোসেন। তাঁরই প্রতিষ্ঠিত বিশ্বমানের অলাভজনক খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, নার্সিং কলেজ, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও কলেজ, মেহের-উন-নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় বিশেষ ভূমিকা রাখছে শিক্ষার ক্ষেত্রে।
এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বিত্তশালীদের সন্তানরা যেমন সুযোগ পেয়েছে, তেমনি অসহায় দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরাও বিনা পয়সায় মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে পেয়েছে আশ্রয়।
মানব হিতৈষী কর্মবীর আমজাদ হোসেন মনে করতেন, পুঁথিগত বিদ্যার পরিবর্তে ছাত্র-ছাত্রীদের চারিত্রিক মানবিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি করাই শিক্ষার লক্ষ্য। তাই শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদানে পৃথিবীর এক অনন্য গ্রাম এখন এনায়েতপুর। গ্রামটিতে উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কিন্ডার গার্টেন স্কুলসহ সব মিলিয়ে ১৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই গ্রামটিতে।
১৯৫২ সালে তখন পাকিস্তানের বাধা দমিয়ে মায়ের ভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠায় দেশ উত্তাল। সে সময় সিরাজগঞ্জের মুসলিম প্রধান এনায়েতপুর তথা আশপাশের এলাকায় নারী শিক্ষার দুয়ার খুলতে প্রয়াত ডা. মীর মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন এলাকার সব বাধা অতিক্রম করে শুরু করেন মেহের-উন-নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের যাত্রা।
তাঁর মায়ের নামে গড়া মেহের-উন-নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি মাত্র ১১ জন ছাত্রী নিয়ে পথচলা শুরু করলেও আজ প্রায় ৮৩০জন ছাত্রী লেখাপড়া করছে। এখান থেকে পাস করে মেয়েরা উচ্চশিক্ষা অর্জন করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ বিদেশেও চাকরি করছেন।
এনায়েতপুরে স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ। ছবি: একুশে টেলিভিশন
মীর মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন দেশের মানুষের দোড় গোড়ায় বিশ্বমানের আধুনিক চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষার বিস্তারে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক হযরত খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) কে উৎস্বর্গ করে ২০০৩ সালে নিজ গ্রাম সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে চালু করেন অলাভজনক বিভিন্ন শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান। সহস্রাদিক কোটি টাকা ব্যয়ে অনন্য স্থাপত্য শৈলী ও মনোরম পরিবেশে যমুনার কোল ঘেষে প্রায় দেড়শ’ একর জায়গায় স্থাপন করেন ৫৮৬ বেডের বিশ্বমানের খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল, খাজা ইউনুছ আলী নার্সিং কলেজ, খাজা ইউনুস আলী ল্যাবরেটারী স্কুল ও কলেজ।
স্বনামধন্য খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজে দেশের পাশাপাশি ভারত ও নেপালের শিক্ষার্থীরা পাঠদান করছে। বর্তমানে অর্ধেক শিক্ষার্থী ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের। এরপর একই ক্যাম্পাসে ২০১২ সালে চালু করেন খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৪টি বিষয়ের উপর বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাড়ে ১৪শ’ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।
শুধু শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রেই ডা. আমজাদ দেশের তাঁত শিল্পের বিকাশেও ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর বিচক্ষণতায় শিক্ষা বিস্তারে পৃথিবীর অনন্য গ্রাম হচ্ছে এনায়েতপুর।
ঐতিহ্যবাহী এনায়েতপুর ইসলামীয়া উচ্চবিদ্যালয় এবং ডা. এম এম আমজাদ হোসেনের গড়া ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এই গ্রামে রয়েছে- এনায়েতপুর ফাজিল সিনিয়র মাদ্রাসা, এনায়েতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঝগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, এনায়েতপুর কিশলয় কিন্ডার গার্টেন স্কুল, খাজা এনায়েতপুরী ক্যাডেট একাডেমী, কাবাতুন নেছা কিন্ডার গার্টেন, রংধনু ডিজিটাল স্কুল, আল মদিনা কিন্ডার গার্টেন, এনায়েতপুর প্রতিবন্ধী স্কুল।
এনায়েতপুর গ্রামে স্থাপিত ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮ হাজার ৪শ জনের মত ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারনায় থাকে মুখর। কাক ডাকা ভোর হলেই পাঠশালার নীড়ে ভেড়ে কচি-কাঁচা শিক্ষার্থীরা। স্কুল চলাকালীন সময় ব্যতিত ভোর থেকে সকাল ১০টা এবং দুপুর সাড়ে ১২টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান নিলে বইয়ে ভরা ব্যাগ কাধে নিয়ে রাস্তা জুড়ে দেখা মিলবে শুধুই ছাত্রছাত্রী।
এদিকে আমজাদ হোসেনের গড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত। আমেরিকা, জার্মানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা শিক্ষকরা এখানে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়াসহ চিকিৎসার উৎকর্ষ সাধনে কর্মরত রয়েছে। এ কারণে প্রতিবেশী দেশ ভারতের শিক্ষার্থীদের কাছে এ মেডিকেল কলেজ জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এছাড়া মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দরিদ্র মেধাবী ৫ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা টাকায় লেখাপড়া শেখানো হচ্ছে। অতি মেবাধীদেরও নানাভাবে সাড়াবছর সহযোগীতা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
এএইচ/