নেতাকর্মীরা দেখা পাচ্ছেন না খালেদার
প্রকাশিত : ১৮:৫৯, ২৭ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৯:০০, ২৭ মার্চ ২০২০
ফাইল ছবি
গত বুধবার ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’র (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপরই তিনি বাসায় কোয়ারেন্টিনে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। নেতাকর্মীরা দেখা করতে চাইলেও এই মুহূর্তে কারও সঙ্গে দেখা করছেন না। তবে তিনি সস্তিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার গুলশানের বাসায় (ফিরোজা) তাকে দেখতে যান ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মামুন। তার স্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখভালে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে ছয় সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ড সদস্যরা তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসার জন্য একটি নতুন লাইনআপ তৈরি করেছেন। তবে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি পুরোপুরি দেখভাল করছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান।
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে ‘ফিরোজা’র দোতলায় ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন খালেদা জিয়া। এতে তার সঙ্গে পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখছেন। বৃহস্পতিবার রান্না করা খাবার নিয়ে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা তাকে দেখতে যান।
গত বুধবার মুক্তি পাওয়ার পর গুলশানে নিজের বাসা ফিরোজায় উঠেছেন খালেদা জিয়া। ঐ বিকেল সোয়া চারটায় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন। ২৫ মাস পর তিনি দুইটি শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তির পর ভাই শামীম এস্কান্দার বাসভবন ফিরোজায় খালেদা জিয়াকে পৌঁছে দেন।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে তার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, বাড়ি ফেরার পরে সে (খালেদা জিয়া) মানসিকভাবে ভালো থাকলেও সুস্থ নেই। শ্বাসকষ্ট আছে। হাত নাড়াতে পারছেন না। আপাতত বাড়িতে যতটা সম্ভব চিকিৎসা দেয়া হবে। একটু সুস্থ হয়ে উঠলে, তার পছন্দমতো হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা দেয়া হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ড্যাবের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আপাতত কোয়ারেন্টিনের মধ্য থেকেই যতটুকু সম্ভব তার চিকিৎসা করা হচ্ছে। কারণ এই মুহূর্তে আমাদের কাছে সবচেয়ে আতঙ্ক করোনাভাইরাস। সেটি বিবেচনা নিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে আমরা তার সঙ্গে কথা বলছি। প্রয়োজন ছাড়া কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না।’
প্রায় আড়াই বছর পর কারামুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না পারলেও মুক্ত জীবনে খালেদা জিয়া স্বস্তিতে আছেন বলে তার একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানিয়েছেন।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিমের সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘কোয়ারেন্টিনে ম্যাডামের চিকিৎসা চলছে। উনি শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হলেও ঘরোয়া পরিবেশে এখন স্বস্তি বোধ করছেন। উনার মানসিক বলটা বেড়ে গেছে। আগে যে বিপর্যস্ত চেহারা ছিল সেটাও অনেকটা কমে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম প্রিয়জনদের সাথে মোবাইলে কথা-বার্তা বলতে পারছেন, ডাক্তারদের সাথে কথা বলছেন যেটা সমস্যা যেটা জানাচ্ছেন। সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে তিনি সময় কাটাচ্ছেন। কখনও শুয়ে, কখনও বসে, কখনও বই-পত্র পড়ে সময় কাটাচ্ছেন তিনি।’ বিএসএমএমইউর মেডিকেল বোর্ডের দেওয়া ওষুধগুলোতে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুর্নীতির মামলায় সাজা ভোগ করছেন। জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তিনি ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের (মোট ১৭ বছর) কারাদণ্ড ভোগ করছেন। শারীরিক নানা সমস্যা নিয়ে তিনি প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার এই সাজা এখন ছয় মাস স্থগিত থাকবে। তবে বিএসএমএমইউর উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ শুনছেন না।’
এমএস/এসি