বেতন যেন সোনার হরিণ
প্রকাশিত : ১২:১৯, ১১ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১২:৪৫, ১১ এপ্রিল ২০২০
প্রতিদিন বাড়ি থেকে বেরনোর সময় মাহমুদ ভাবেন আজ মনে হয় বেতনের টাকাটা পাবেন। হিসেব কষেন দিন ভিত্তিতে ৪৫৫ টাকার চুক্তিতে ফ্যাক্টরি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে ৩০ দিনে ১৩ হাজার ৬৫০ টাকা হয়েছে তার। প্রায় ৪ মাস হলো কাজ করেছেন এখনো একটা টাকাও পাননি তিনি। ধার দেনা করে সংসার চলছে। অনেক আশা নিয়ে আজ ফ্যাক্টরীর সামনে গিয়ে দাঁড়ান। সারাদিন কেটে যায়। টাকা আর পাননা।
মলিন মুখে মাথা নীচু করে বিকেলে বাড়ি ফিরে যান। হাত খালি দেখে মাহমুদের বউ দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। আজও হয়নি না? মাথা নাড়েন মাহমুদ। বুড়ো বাবাটাকে কতদিন ভালো খাবার দিতে পারেননি। কোনো রকমে শাক ভাত খেয়ে চলছে জীবন। ছেলেমেয়ে দুটোর পোশাক মলিন। ঠিকমতো বেতনও দিতে পারেন না তাদের। আর কতদিন লাগবে বাবা? মেয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না মাহমুদ।
শুধু মাহমুদ নন, রংপুর সুগার মিলে (অনেকে বলে মহিমাগঞ্জ সুগার মিল) তার মতো সাড়ে ৭শ শ্রমিক কর্মচারি কর্মকর্তা বেতন পান না আজ প্রায় ৪ মাস হলো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শ্রম দিয়েও তাদের শুনতে হয় টাকা নেই, বেতন হবে না। গত মৌসুমে রংপুর সুগার মিলে চিনি বিক্রি হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। এবার চিনি উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার মেট্রিক টন।
তবু টাকা নেই? জানতে চাইলে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সনৎ কুমার পাল নাকি তাদের জানিয়েছেন সরকার না দিলে তিনি টাকা দিতে পারবেন না। মাহমুদসহ সবার দাবি তাদের শ্রমের মুল্য দেয়া হোক।
সারাবিশ্ব যখন করোনা সংক্রমণের ভয়ে আতংকিত তখন দেশের ১৫টি সুগার মিলের কর্মকর্তা কর্মচারিরা আতংকিত বেতন না পেয়ে সামনের দিনগুলো কিভাবে চালাবেন তা ভেবে।
রংপুর চিনিকল মিল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক হোসেন বলেন, আমাদের অবস্থা খুব শোচনীয়। বিশেষ করে যারা কানা-মোনা পদ্ধতিতে কাজ করছে তাদের অবস্থা আরও খারাপ। আমরা হাত পাততে পারিনা। আবার টাকা না থাকায় আমরা চলতেও পারছিনা।
মধ্যবিত্ত হওয়া বড় কষ্টের। না পারি বলতে না পারি সহ্য করতে। ম্লান কণ্ঠে তিনি বলেন, আমরা তো বাড়তি কিছু চাইনি। আমরা শধু আমাদের প্রতিদিনকার শ্রমে ঘামে অর্জিত বেতনটুকুই শুধু চাই। তাও কেন পাব না? তিনি বলেন, এতদিন চিনি বিক্রির কথা বলা হয়নি। এখন করোনার এই সময়ে বলা হচ্ছে চিনি বিক্রি করে টাকা নাও। এখন এ সময়ে চিনি কে কিনবে? তিনি জানান, বিভিন্ন ডিলার, ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হয়েছে এ মুহূর্তে তারা কেউ চিনি কিনতে রাজি না। চিনি বিক্রি না হলে টাকা আসবে না, তাহলে কি আমরা বেতন পাব না? আমরা চলবো কিভাবে? আমাদের সন্তানরা কি না খেয়ে মারা যাবে?
তার আর্তনাদ করা কথাগুলো শুনে ভাবতে বসলাম চারিদিকে কত প্রণোদনা। কত চাওয়া কত আবদার। সবই পূরণ করা হচ্ছে, হয়তবা হবেও। সেখানে সুগার মিলের শ্রমিকরা তাদের পাওনা টাকার জন্য এ দ্বারে ও দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে, হাহাকার করে মরছেন তারা। তবুও দেখার যেন কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কি এগিয়ে আসবেন তাদের সমস্যা সমাধানে?
এমবি//