ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

তার উৎসাহই আমাদের প্রেরণা

মাশরাফি বিন মুর্তজা

প্রকাশিত : ১১:৫৪, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

জীবনের বিশাল অভিজ্ঞতা দিয়ে জাতিকে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭৪তম জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা। সুস্থ ও নিরাপদ দীর্ঘায়ু কামনা করি তার। মহান আল্লাহর কাছে আমার প্রার্থনা প্রধানমন্ত্রীকে যেন সুস্থ ও সবল রাখেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে।

তখন আমি কিশোর, অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলি। সাবের ভাই (সাবের হোসেন চৌধুরী) বিসিবি সভাপতি। ওই বয়সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি দেখলে রোমাঞ্চ কাজ করে। আমিও প্রধানমন্ত্রীকে দেখে রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম।

আমার মধ্যে কৌতূহল এবং জিজ্ঞাসু ছিল প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষ কিনা। এরপর ২০০১ সালে নির্বাচন হলো তখন অন্য সরকার ক্ষমতায়। আলী আসগার লবি ভাই ছিলেন বোর্ড সভাপতি। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে আবার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। কালের আবর্তে দূর থেকে দেখা প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়। ক্রিকেটের সাফল্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার সুযোগ এনে দেয়। তার আশীর্বাদে আজ আমি নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি একজন ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে। ক্রিকেটার ও আওয়ামী লীগের সাংসদ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ।

জাতীয় দলে খেলার সময় তাকে প্রথম দেখার পর কাছে যাওয়ার সাহস হয়নি। নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলাম। ইচ্ছা করত কাছে গিয়ে কথা বলতে, কিন্তু যাওয়া হয়নি কেমন আছেন বলার পর আর কিছু বলতে পারব না ভেবে। তার সঙ্গে প্রথম কথা হয় অনেক পরে মাঠে একটা আবদার জানিয়েছিলম। পরে গণভবনে গেলে অনেক কথা বলেছিলেন, ছোটবেলায় কী করতেন, ঢাকা শহর কেমন ছিল, দেশের সংস্কৃতি কেমন ছিল এসব। সময়টা ২০১১ বা ২০১২ সাল হবে হয়তো। 

আমি যেটা বুঝি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হলেন 'স্পোর্টি'। তিনি কোনো খেলাকে আলাদা করে দেখেন না। বাংলাদেশে ক্রিকেট অনেক বেশি প্রচার পায়। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী মাঠে এলে বা ক্রিকেটারদের গণভবনে ডাকলে খবরের শিরোনাম হয়। অথচ ফুটবলে মেয়েদের কত উদ্দীপ্ত করেন তিনি। গণভবনে ডাকেন এবং নিজের মতো করে আপ্যায়ন করেন। পুরো 'স্টাইলটা' তার নিজস্ব। ব্যক্তিগত বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করেন, প্রেরণা দেন। আমাদের যেবার গণভবনে ডাকলেন, আমি খুব অবাক হয়েছিলাম, যখন দেখলাম নাসির, তাসকিনরা সেলফি তুলছে আপার সঙ্গে। তখন তাকে আরও কাছ থেকে জানার সুযোগ হয়। বড় মানুষকে যতবার কাছ থেকে দেখা যায় তত নতুন অভিজ্ঞতা হয়।

আমি অধিনায়ক থাকার সময় প্রতিটি ম্যাচের আগে বা পরে আপার ফোন পেয়েছি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে হেরে যাওয়ার পরও ফোন দিতেন তিনি। খেলোয়াড় হিসেবে বা পেশাদার মানুষ হিসেবে আপনি যখন ব্যর্থ হবেন তখন যাকে পাশে পাবেন তার কথাই মনে থাকবে। সফল হওয়ার পর সবাই সঙ্গে থাকে। ব্যর্থ হওয়ার পর যাকে কাছে পাবেন তার কথা সারা জীবন মনে থাকবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তেমনই একজন ব্যতিক্রমী মানুষ। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালের আগের দিন আমেরিকায় জাতিসংঘের অধিবেশন থেকে ফোনে সাহস দেন, ‘মাশরাফি ভারত অনেক শক্ত দল বুঝতে পারি। তোমরা মন ছোট করো না। সব খেলোয়াড়কে বলো উৎফুল্লতার সঙ্গে খেলতে। জিততে পারলে আলহামদুলিল্লাহ, না জিতলে তোমরা যতটুকু করেছ, এটাও কম কিছু না। তোমরা ফাইনাল খেলছ, এটাও অনেক। মন খারাপ করবে না। উৎফুল্লতার সঙ্গে খেল, সাহস নিয়ে খেল।’ খেলোয়াড়দের মধ্যে তখন প্রচণ্ড চাপ- টুর্নামেন্ট জিতে আসতে হবে। আপার এক ফোনে আমাদের কাজটা সহজ করে দেয়।

ক্রীড়াবিদ ও শিল্পীদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেন তিনি। তামিম দুবাই থেকে হাত ভেঙে দেশে ফিরলে প্রধানমন্ত্রী ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ভালো জায়গায় চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সাকিবের ডেঙ্গু হলে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। তামিম ও সাকিব সারাজীবন মনে রাখবে এ ঘটনা। আমার করোনা হওয়ার পর ফোন করে পাঁচ মিনিট কথা বলে পরামর্শ দিয়েছেন- কীভাবে থাকতে হবে, খেতে হবে, চলতে হবে। এগুলো পারিবারিক শিক্ষা, যা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে পেয়েছেন তিনি। যখনই তার সামনে পড়েছি, দেখা হলে ইনজুরি এবং শারীরিক কুশল জানতে চেয়েছেন। এমন একজন প্রধানমন্ত্রীকে পাওয়া ক্রীড়াবিদদের জন্য সৌভাগ্যের।

খেলাধুলা হলো এমন একটা জিনিস যেখানে ভালোবাসা থাকে, ভেদাভেদ থাকে না। ক্রীড়া হলো প্রাণের দোলা যেখানে আনন্দ, উৎফুল্লতা থাকে। হিংসা-বিদ্বেষ থাকে না। শত্রুকেও আপন করে নেওয়া শেখায়। হেরে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলাতে হয়। মাঠে কত কিছু ঘটে খেলার পর সব ভুলে যেতে হয়। বিজয়ীদের পরাজিতরা অভিনন্দন জানায়। যার কারণে খেলাধুলা বিশ্বের মানুষ উপভোগ করে। বাংলাদেশে অনেক কিংবদন্তি আছেন। যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে সবাই একবাক্যে প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করবেন। ক্রীড়াঙ্গনের জন্য তিনি অতুলনীয়।

আমি প্রান্তিক পর্যায় থেকে রাজনীতি করে সাংসদ হইনি। খেলার মাঠের মানুষ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী আমাকে সুযোগটা দিয়েছেন নড়াইল-২ আসনে। জনগণ ভোটের মাধ্যমে আমাকে নির্বাচিত করেছেন উনার সম্মানে। তিনি প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে সহযোগিতা করেন এবং আমাদের কাছ থেকে ভালো কাজ আশা করেন। আমিও যথাসম্ভব চেষ্টা করছি প্রধানমন্ত্রী যে জিনিসগুলো চান সেটা করতে। আমরা বিশ্বাস করি নড়াইলের এমপি শেখ হাসিনা। কারণ নড়াইলের দুটি আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। নড়াইলের প্রত্যেক মানুষ বিশ্বাস করেন, 'নড়াইলের এমপি শেখ হাসিনা'।

শেষ করার আগে প্রধানমন্ত্রীকে দেশের খেলোয়াড় সমাজের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আমরা যেন প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও প্রতিষ্ঠিত করতে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তার একজন প্রতিনিধি হিসেবে যেন সেই কাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সততার সঙ্গে এবং বিচক্ষণতা দিয়ে।

লেখক: জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য।

এমবি//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি