না বলা কিছু ভালোবাসার কথা
প্রকাশিত : ২১:২৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণকালে লেখক
ঠিক পঁচাত্তর বছর পূর্বে বঙ্গমাতার কোল জুড়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় চির লাবণ্যময়ী এক মহিয়সী নারীর জন্ম হয়েছিল। পঁচাত্তর পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর সুকন্যা-'প্রিয় হাসমনিু' আজ সারা পৃথিবীর অপার বিস্ময়! বাঙালি নারীর দ্বীপ শিখাসম। সর্বত্র তাঁর জয়জয়কার। প্রতিমুহূর্তে সাহস সঞ্চয় করি আপনার কাছ থেকে- প্রিয় জননেত্রী; আপনার হাসিমুখের অনন্য নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ।
আপনার প্লাটিনাম জুবিলি অর্থাৎ ৭৫তম জন্মদিনে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা জানবেন মা। ধৈর্যশীল-তেজদীপ্ত শতরূপা মানবী হিসেবে আপনাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। আপনার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের জয়ের আনন্দ অন্তরে অনাবিল প্রশান্তি দেয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, প্রাজ্ঞতা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী ও দূরদর্শী নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পদার্পণ।
আপনি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান। ছোট বেলায় মা বাবার মুখে, ঠাকুর মার মুখে স্কুলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের যশোরের এক গ্রামের আমার মত লাখ কোটি শাপলার প্রেরণাদায়িনী, শক্তি সঞ্চারিনী আপনি। আমি সত্যিকারের দশভূজা দুর্গতিনাশিনী রূপে শুধু আমার দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানি! আপনি আমাদের হৃদয়ে অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন।
আপনাকে খুব কাছ থেকে দেখবার আমার লালিত স্বপ্ন সত্যি হয় ২০১৮ সালে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৭’ প্রদান অনুষ্ঠানে আপনার স্নেহময় হাতের স্পর্শে আমার জীবন ধন্য হয়েছে এবং আমার শিক্ষক বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি চোখের কোণে পানি ধরে রাখতে পারিনি সেদিন, মুগ্ধ হয়ে ভাবছিলাম যাঁর গল্প শুনে বেড়ে উঠেছি সেই আপনার স্নিগ্ধ দৃষ্টির সঙ্গে কি করে দৃষ্টি মেলাই!
অনুষ্ঠানে আমাদের উদ্দেশ্যে আপনার বলা কথাগুলো সত্যি হৃদয় ছুঁয়ে যায় এবং একজন শিক্ষার্থী হিসেবে সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ভালোবাসার প্রাপ্তিস্বরূপ এ সম্মান একদিন দেশের ও দশের সেবায় ব্রতী হবই।
স্বদেশপ্রেম যে বিন্দুমাত্র মোহ নয়, সেখানে নিরেট ভালোবাসার বিমূর্ত তীব্রতা দেখেছি আপনার চোখে! যতই আপনার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জেনেছি, ততই মুগ্ধ হয়েছি। আমি সত্যিই সৌভাগ্যবতী; এমন মহিয়সী মায়ের সোনার হাতের আশীর্বাদ পেয়েছি। যতবার ভেঙে পড়ি ততবারই আপনার আদর্শ আমার অন্তরে শক্তি যোগায়। আপনি এই দেশের গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘের পুরস্কার, দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
আপনি একাধারে লেখক, মানবতাবাদী মা, আশ্রয়হীনদের আশ্রয়দাতা- সর্বোপরি অনন্য এক নারী। আপনার হৃদয় কতটা খাঁটি- তা প্রতিনিয়তই আপনার কর্মে প্রকাশ পায়। একজন শিল্পী তথা একজন বাঙালী হিসেবে যে গর্ব অনুভূত হয়, তা লিখে প্রকাশ করার ভাষা নেই আমার। এদেশের ছাত্র, শিক্ষক, লেখক, কবি, সাংবাদিক, শিল্পী, ঐতিহাসিক, নবীন প্রজন্ম আপনাকে আস্থার আর বিশ্বাসের সঙ্গেই আদর্শ মানে। আমরা কৃতজ্ঞতা স্বরূপ অন্তরের মণিকোঠায় সারাজীবন আপনাকে লালন করব।
সবে পঞ্চাশ পেরিয়ে পথচলা প্রিয় জন্মভূমিকে আপনি পৃথিবীর মানচিত্রে স্বমহিমায় দাঁড় করিয়ে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। একে একে আপনার সাহসী পদক্ষেপ ও যুগান্তকারী উন্নয়নের জন্য আজ সর্বক্ষেত্রে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। ঠিক তখনই আপনার মুকুটে একে একে পৃথিবীর তাবৎ সব পুরস্কার যুক্ত হচ্ছে, যা আক্ষরিক অর্থে বাংলাদেশের অহংকার। ১৭ কোটি বাঙালির অকৃত্রিম ভালোবাসা আর হৃদয়ের মণিকোঠায় আপনার এই অবস্থান, সন্দেহাতীতভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বয়ে চলবে।
বিদেশে পড়াশোনাকালেও অসংখ্য ভিনদেশির মুখে আপনার নেতৃত্বের প্রশংসা শুনে বাংলাদেশী হিসেবে গর্বিত হয়েছি। বাঙালী নারী হিসেবে সত্যি আনন্দ অনুভব করি আর শক্তি সঞ্চয় করি, যখন দেখি সুনীল আকাশের মতো বিশালতা আর স্নিগ্ধ প্রশান্তি মাখা হাসিমুখ নিয়ে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা কি অপার বিস্ময়ে সব বাধা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছেন।
এ পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখছে আপনি সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে কি নির্ভয়ে দুর্বার গতিতে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর এ প্রজন্মের হৃদয়ে যে স্বপ্ন বুনে দিয়েছেন তা লালন করে চলি। বাংলার মহিয়সী মানবতাবাদী প্রাণপ্রিয় মাকে শত কোটি প্রণাম জানাই।
এক বুক কষ্ট চেপে পরিবারের স্বজনদেরকে চিরদিনের জন্য নির্মমভাবে হারিয়েও নিজের জীবন বাজি রেখে নিরলসভাবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়বার এবং আধুনিক বাংলাদেশের মানোন্নয়নে পৃথিবীর ইতিহাসে আপনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। জন্মতিথিতে শ্রদ্ধাভরে হৃদয় নিংড়ানো শুভেচ্ছা জানাই। সুস্থ থেকে হাসিমুখে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিন- এই অনিঃশেষ শুভকামনা রইল।
রংতুলিতে ক্যানভাসে ছবি আঁকার সময় অন্তরে একবুক প্রশান্তি নিয়ে দেখছিলাম কি মায়াময় মুখখানি আর তাঁর আলোকিত অন্তর যেন পুরোপুরি তারুণ্যে ভরা। গভীর চোখজোড়ায় যেন এক স্বপ্নবাজের খেলা। বাবার মতই বাংলাদেশের সব মানুষের প্রতি আপনার অকৃত্রিম ভালোবাসা। আপনার ত্যাগ তিতিক্ষা অবর্ণনীয়।
অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ার এ যুগে বর্তমান প্রজন্মকে বাংলার শেকড়ের সঙ্গে আবদ্ধ রাখতে চাই এক শিল্প সংস্কৃতির বিপ্লব। আপনার উদ্যোগে সব সংকট কেটে যাবে দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে আমাদের। হাজার বাধা উপেক্ষা করেই আপনি অদম্য- পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, মেয়েদের অধিকার, শিক্ষা, বাঙালি সংস্কৃতির বৈশ্বিক বিস্তার, বেকারত্ব কমাতে, উদ্যোক্তা বৃদ্ধিতে সব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আগামী প্রজন্মের কাছে আপনি হৃদয়ের মণিকোঠায় রইবেন, সন্দেহাতীতভাবে সত্য।
আজ বাংলাদেশের একবিংশ শতাব্দীর নারীরা এগিয়ে এসেছেন সমাজ উন্নয়নের নানা ক্ষেত্রে। নারীর এসব অগ্রগতি এবং বাধাবিপত্তি সরিয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন আপনি। তাই আপনি আমাদের আশাবৃক্ষ। আমাদের মাঝে মহীরুহ হয়ে থাকুন, আমাদের প্রিয় নেত্রীর নেতৃত্বে গড়া স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবার পর, উন্নত বাংলাদেশের বুকে দাঁড়িয়ে যেন বুকভরা প্রশান্তি নিয়ে মহাসমারোহে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শতবর্ষ পালন করতে পারি- কায়মনোবাক্যে সেই প্রার্থনা করি সর্বদা।
দেশের যেকোনো সংকটে সম্মুখ পৃথিবীতে এগিয়ে রাখবার জন্য এই দেশের তরুণ প্রজন্মকে সবসময়ই পাশে পাবেন আপনি। শিক্ষাঙ্গণে আধুনিক গবেষণা নির্ভর পরিবেশ বাস্তবায়নে উদ্যোগে আপনার ভূমিকা প্রশংসনীয়। পৃথিবীর এই অতিমারীর সংকটকালীন মুহূর্ত কেটে যাক, বটবৃক্ষসম প্রশান্তির ছায়া হয়ে সবসময় আপনাকে সুস্থভাবে আমাদের মাঝে যেন শতবছর পাই; জন্মদিনের অফুরান ভালোবাসা আর নিরন্তর শুভকামনা। জয়বাংলা।
লেখক: চিত্রশিল্পী ও প্রভাষক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
এএইচএস/এনএস//