ঢাকা, সোমবার   ০৭ অক্টোবর ২০২৪

একজন অাফরোজা খান ও খান কিচেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:০৭, ২৬ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১৭:০৮, ২৬ জুলাই ২০১৮

সমাজে দু`ধরণের মানুষ অাছে। কেউ গতানুগতিক জীবন যাপনে বিশ্বাসী। খাওয়া, চাকরি, ঘুমে তাদের জীবন অাবদ্ধ। অাবার অার কেউ অাছেন যারা নিজে কিছু করতে চান। নিজের জায়গায় সীমিত শক্তি ও অাত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠতে চান অপরাজেয়। তেমনি একজন অাফরোজা খান। খান কিচেন এর কর্ণধার। দেশের অন্যতম এই নারী উদ্যোক্তা বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় রান্নাঘরের সত্ত্বাধিকারী। অন্য সব সফল ব্যক্তির মতো তার চলার পথও মসৃণ ছিল না। ছিল না অারাম দায়ক। তবে হার মানেননি অাফরোজা খান। লড়াই করেছেন। এখন পাচ্ছেন লড়াই করার সুফল।

প্রসঙ্গ: খান কিচেন `খান কিচেন` নামটা শুনলেই মনে হয় রান্নাঘর বা রেস্টুরেন্ট জাতীয় কিছু। হ্যাঁ, এটি একটি রান্নাঘর। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় রান্নাঘর। যেখানে নিয়মিত রান্না হয় লক্ষাধিক লোকের খাবার। সে এক মহাযজ্ঞ। অার এই মহাযজ্ঞের পেছনে কাজ করে একজন মমতাময়ী নারীর হাত। যিনি পেশাদারীত্ব বা বাণিজ্যের বাইরে এসে রান্নাকে শিল্প সুষমায় সাজিয়ে বাঙালি চাকরিজীবীদের জন্য খাবার সরবরাহ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে এই যানজটের ব্যস্ত নগরীতে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে মানুষ যখন দিশেহারা খান কিচেন তখন এই শহরেই লক্ষাধিক মানুষের জন্য হয়ে উঠেছে একটি ভরসাস্থল।

খান কিচেনে প্রতিদিন রান্না হয় প্রায় লক্ষাধিক লোকের খাবার। সাদা ভাত, ডাল, সবজি, মাছ বা মুরগী অার যে কোন একটি মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার নিয়ে একটি প্যাকেজ। এই প্যাকেজ বাজারের অন্যান্য হোটেলের তুলনায় অনেক কম দিমে পাওয়া যায়। সপ্তাহে যে কোন একদিন দেওয়া হয় বিরিয়ানী বা পোলাও বা খিচুড়ি জাতীয় খাবার। সাথে ডেজার্ট তো থাকেই। বিশেষ করে অফিসপাড়াগুলোতে চাকরিজীবীদের জন্য খাবার সরবরাহ করা খান কিচেন - এর অাসল কাজ। এছাড়া বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে, গায়েহলুদ, জন্মদিন এসব অনুষ্ঠাণেও পূর্ব নির্ধারিত অর্ডার অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করে খান কিচেন।

খান কিচেনের বিশেষত্ব কী তেল, মসলা ব্যবহারে মান ও পরিমাণের দিক থেকে দেওয়া হয় যথেষ্ঠ গুরুত্ব। একজন মানুষের প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবারের প্রয়োজন এক বেলাতে তার সবটুকুই থাকে খাবারের মেন্যুতে। এছাড়া স্পেশাল খাবারের ব্যবস্থাও থাকে খান কিচেন- এর মেন্যুতে। খান কিচেনের প্রধান বিশেষত্ব দুটি। এক. এই মুহুর্তে খান কিচেন শুধু দেশেই নয় বরং দেশের সীমানা ছাড়িয়ে দক্ষিন এশিয়ায় সবচেয়ে বড় রান্নাযজ্ঞটি অনুষ্ঠিত হয় খান কিচেন- এর কিচেনে। যে রান্নাঘরকে কেন্দ্র করে নিয়মিতভাবে তিনহাজার ও অনিয়মিত হাজার পাঁচেক লোক নানা ভাবে ব্যস্ত।

খান কিচেন- এর দ্বিতীয় বিশেষত্বটি হলো স্বাস্থ্যসম্মত, জীবাণুমুক্ত রান্নাঘরে স্বাস্থ্যসম্মতনখাবার রান্না করা হয়। অাসুন অামরা ঘুরে অাসি খান কিচেন এর কিচেন থেকে। বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়াই রান্না হয় খান কিচেন- এ। নির্বাহী পরিচালক আলিফ খানের সাথে কথা বলে জানা যায় জার্মান প্রযুক্তি ব্যবহার করছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠা খান কিচেন। উৎপাদন পদ্ধতিতে খান কিচেনই প্রথম ব্যবহার করেছে বিশ্বে খাবার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের সর্বাধুনিক পদ্ধতি ফোরজি (ফোর্থ জেনারেশন) হাই এফিসিয়েন্সি ক্লাসিফায়ার প্রযুক্তি।

এছাড়া খান কিচেন নিশ্চিত করেছে স্টিম ইনজেকশন সিস্টেম, অ্যাপেক্সি ফ্লোর এবং ইলেকট্রিক পদ্ধতিতে পরিবেশবান্ধব খাবার। আর এ খাবার তৈরিতে খান কিচেন- এ সর্বক্ষণ তদারকি করেন বিশ্ববিখ্যাত রন্ধনশিল্পী টনি খান। খান কিচেন- এর রান্নাঘরে ঢোকার আগে বাইরে জুতা খুলে আলাদা জুতা পরতে হয়। বাইরের পোশাক পাল্টে প্রতিটি বিভাগের কর্মীদের পরতে হয় রান্নাঘরে প্রবেশের জন্য নির্ধারিত পোশাক। রান্না ঘরে ব্যবহার করা হয়েছে সবুজ রঙের অ্যাপোক্সি ফ্লোর। টাইলসের মেঝেতে ময়লা জমার সুযোগ নেই। মেঝের ব্যাকটেরিয়া নিঁখুতভাবে পরিষ্কার করা হয়। সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করছে একঝাঁক পরিচ্ছন্ন কর্মী। খান কিচেন- এ রাইস স্টিমার মেশিনে আধা ঘণ্টায় ৩৮০ কেজি চাল থেকে ভাত রান্না হয়। এরকম ২০ টি মেশিনে রান্না হয় ভাত। এছাড়া চাল ধোয়া, সবজির খোসা ছাড়ানো, প্রয়োজন মতো কাটা এবং মসলা পেস্ট করার, মাছ কাটা ও মাংস কাটার মেশিন ও অাছে অালাদা অালাদা।

খাবার এমনভাবে প্যাকেট করা হয় ফলে বাইরের আর্দ্রতা থেকে খাবার থাকে সুরক্ষিত ও টাটকা। খাবার টানা ছয় ঘন্টারও বেশি সময় গরম থাকে। সরবরাহ করা হয় উন্নত কাঁচামাল। ব্যবহৃত হয় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি। রয়েছে নিজস্ব প্যাকেজিং সিস্টেম। খান কিচেন - এর রান্নাঘর কয়েকটি নিরাপদ জোনে বিভক্ত। কাঁচামাল মজুত করা, ধৌত করা, খোসা ফেলানো, টুকরো করা সব কিছু করা হয় অালাদা অালাদা ভাগে। খাবার রান্নার পর তার স্বাদ ও মান নির্ণয় করা হয়। একাজটি সরাসরি নিজ হাতে করেন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক অাফরোজা খান।

সরবরাহ পদ্ধতি নির্বাহী পরিচালক অালিফ খান একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে অারও জানান, খান কিচেন বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার অাশে পাশের এলাকায় নিয়মিত খাবার সরবরাহ করছে। এমন কোন অফিসপাড়া নেই যেখানে খান কিচেন- এর গাড়ি যায় না। গাড়ি থাকে তাপ নিয়ন্ত্রিত। ফলে অতিরিক্ত গরমে বা দীর্ঘক্ষণ জ্যামে অাটকে থাকলেও খাবার নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। খাবারের তালিকায় থাকছে ভাত, মুরগি ভুনা অথবা মাছ, ডাল, সবজি বা ভাজি। এর দাম পড়বে ৯৫ টাকা। বিভিন্ন দিন বিভিন্ন ধরনের মেন্যু থাকে। নিয়মিত গ্রাহকরা খাবার খেয়ে বক্স ফেরত দিয়ে থাকেন। অাবার কেউ চাইলে ফয়েল প্যাকেটসহ খাবার কিনতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে দাম দশ থেকে পনের টাকা বেশী গুণতে হয়। বিকাল ৫টার মধ্যে ১৬৫২০ নম্বরে ফোন করলেই গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে দুপুরের খাবার। তবে সর্বনিম্ন ৪টি খাবারের অর্ডার দিতে হবে। খাবারের বিল পরিশোধ করতে হবে খাওয়ার পর বাক্স ফেরত নেওয়ার সময়।

তবে নিয়মিত ও গ্রাহকরা সপ্তাহে বা পনের দিনেও বিল পরিশোধ করেন। অার বিশেষ কোন অনুষ্ঠাণের জন্য খাবারের অর্ডার করলে অর্ডার করার সময় কমপক্ষে ৫০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করতে হয়। বাকি টাকা খাবার হাতে পাওয়ার পর পরিশোধ করলেও চলে।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি