ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে...’র নেপথ্যকথা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:১৭, ২৪ মে ২০২০ | আপডেট: ১৬:২৯, ২৪ মে ২০২০

কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও মওলানা আকরম খাঁ।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও মওলানা আকরম খাঁ।

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ- মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় ও আনন্দের উৎসব ঈদ-উল-ফিতর নিয়ে বাঙ্গালি কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কালজয়ী গান। বাঙ্গালি মুসলমানের ঈদ উৎসবের আবশ্যকীয় অংশ। 

কালজ্বয়ী এ গানের শুরুর কথা বলতে গিয়ে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ জনাব ফকির আশরাফ তাঁর আত্মজীবনী গ্রন্থ 'কত কথা কত স্মৃতি'র ২য় খন্ডে লিখেছেন- "আমি ১৯৬৬ সালে জুন মাসে সাব-এডিটর হিসাবে মওলানা আকরম খাঁর দৈনিক আজাদ পত্রিকায় যোগদান করি। মওলানা আকরম খাঁর কাগজে কাজ করি অথচ তাঁকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি তখন পর্যন্ত। 

হঠাৎ একদিন মহররমের তাৎপর্য নিয়ে একটি সম্পাদকীয় লেখার ডিকটেশনের জন্য ডাক পড়লো আমার। তিনি ডিকটেশন দিলেন। কাজ শেষে উঠে আসতে চাইলাম, তিনি হুকুম দিয়ে বললেন, "একটু বসো, তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে বেশ। এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করলেন, নজরুলের কবিতা পড়ো? বললাম জ্বি পড়ি স্যার। তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভবঘুরে জীবনের কথা বলতে গিয়ে এসময় বললেন, জানো অধিকাংশ কবিতা বিশেষ করে ইসলামী কবিতাগুলো নজরুল লিখেছে আমার ফরমায়েশে। তার পকেটে যখন পয়সা থাকতো না তখন উদভ্রান্তের মতো ছুটে আসতো আমার কাছে। এ সুযোগে আমি ওকে বলতাম, একটা কবিতা লিখে দিয়ে যাও দুখু। অমনি আমার সামনে খাতা-কলম নিয়ে বসে যেতো কবিতা লিখতে। সম্মানী হিসেবে সঙ্গে সঙ্গে তাকে দিতাম কখনোও দু'অনা, কখনোওবা তিন আনা। সর্বোচ্চ দিতাম চার আনা। 

একদিনের কথা সুস্পষ্টভাবে এখনো মনে আছে আমার। তখনো রমজানের রোজা শুরু হয়নি। কিন্তু শুরু হয়েছে  মাসিক মোহাম্মদী'র ঈদ সংখ্যা প্রকাশের প্রস্তুতি। সম্ভবত বিকেল চারটা। নজরুল এলো আমার কাছে কোলকাতার অফিসে। এসেই বললো, চার আনা পয়সা দেন চাচা দুপুরে খাইনি। পকেটে হাত দিয়ে একটা সিকি বের করে দিয়ে  বললাম, এই নাও চার আনা পয়সা, বাইরে থেকে খেয়ে এসো। তারপর একটা কবিতা দিয়ে যাবে মাসিক মোহাম্মদী'র ঈদ সংখ্যার জন্য। খেতে গেল না নজরুল। কলম হাতে নিয়ে খসখস করে লিখতে বসে গেলো সে। আধ ঘন্টার মধ্যে  লেখা শেষ করে আমার হাতে খাতাটি ধরিয়ে  দিয়ে বললো - কবিতাটি পড়েন চাচা, আমি খেয়ে হাসি। এটাই সেই বিখ্যাত কবিতা, ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।" (সূত্র- ফকির আশরাফ, কত কথা কত স্মৃতি, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১০৫)। 

১৯৩১ সালে লেখার চারদিন পর কবির শিষ্য শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের গলায় গানটি রেকর্ড করা হয়। রেকর্ড করার দুই মাস পরে ঈদের ঠিক আগে আগে এই রেকর্ড প্রকাশ করা হয়। গ্রামাফোন কোম্পানি-এর রেকর্ড প্রকাশ করে। রেকর্ডের অপর গান ছিল কবির ‘ইসলামের ওই সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর, বদনসীন আয়, আয় গুনাহগার নতুন করে সওদা কর। হিজ মাস্টার্স কোম্পানির রেক রেকর্ড নম্বর এন‌- ৪১১১। প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি