শেখ হাসিনা মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর
প্রকাশিত : ১৪:২৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
মাত্র সাড়ে তিন বছরের ‘শিশু রাষ্ট্রের’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশ যখন অভিভাবকহীন, তখনই ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশের মাটিতে ফিরে আসেন জীবনের হুমকি ও ঝুঁকি মাথায় নিয়ে।
জেল-জুলম ও অত্যাচার কোনোকিছুই তাকে তার পথ থেকে এক বিন্দুও টলাতে পারেনি। শত প্রতিকূলতায়ও হতোদ্যম হননি কখনো। বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনরুদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বারবার স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছেন, আবির্ভূত হয়েছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা রূপে। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাংলার মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর।
মাত্র ৩৪ বছর বয়সে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে অসীম সাহসিকতা নিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব নিলেন। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হারিয়ে নেতাকর্মীরা দিশেহারা, হাজার নেতাকর্মী জেলে এবং দলের মধ্যে বিভক্তি- এমন সংকটময় মুহূর্তে দায়িত্ব নিয়ে তিনি শুধু দলকেই বাঁচাননি, দেশ ও জাতিকে বাঁচিয়েছেন। তিনি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য জনমত তৈরি করেছেন। দীর্ঘ ২১ বছরের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত সফল হয়। তারই ফলাফল ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভ।
তবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ভোট কারচুপির মাধ্যমে আবার ক্ষমতাসীন হয়ে হত্যা, খুন ও দুর্নীতিসহ দেশকে চরম নৈরাজ্যের পথে ঠেলে দেয়। তাদের অপশাসনের বিরুদ্ধে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে ওঠে। তিনি দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের জীবনে বহুবার কারাবরণ করেছেন। এছাড়া তাকে হত্যার জন্য দীর্ঘ ১৯ বার চেষ্টা করা হয়। তারপরও তিনি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অন্যায় ও অপশাসনের কাছে নতি স্বীকার করেননি। দেশমাতৃকার সেবা, জনগণের মুখে হাসি ফোটানো এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের জন্যই আল্লাহ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সবসময় রক্ষা করেছেন এবং শক্তি ও সাহস দিয়েছেন।
পরে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবারও বিজয়ী হয়। সেই থেকে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনা করছে। তিনি তিনটি রূপকল্প- ‘ভিশন ২০২১’, ‘ভিশন ২০৪১’ এবং ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়ন করছেন। স্বাধীনতার চার দশক পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে তিনি দেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি, আশ্রয়হীন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দান, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি, সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ, ফোর-জি মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহারসহ নানা কর্মযজ্ঞ এবং দেশের আইসিটি খাতে বাস্তবমুখী ও কার্যকর বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছেন। এছাড়াও তার নেতৃত্বে শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে বাংলাদেশ।
মহামারি করোনাকালীন সময়েও শেখ হাসিনা সামনে থেকে প্রশংসনীয় সফল ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ সময়ে মানুষের জীবন-জীবিকার চাকা সচল রাখতে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনা, আম্ফান ও বন্যা মোকাবেলা করে স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান, আর মেট্রোরেলও প্রায় চলমান। এছাড়া সরকারের অন্যান্য মেগাপ্রকল্পগুলোর অগ্রগতি চলমান রয়েছে। এদিকে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্বে টিকা প্রস্ততে সক্ষম দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনার মধ্যেও ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অভাব ঘুচাতে এবং জীবনযাত্রার মান-উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। যার ফলশ্রুতিতে অতি দারিদ্র্যের হার যা কিনা ২০০৯ সালেও ছিল প্রায় ১৯.৩%, ২০২১ সালে ১০% এর নিচে নেমে এসেছে। শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
এসএ/