শুভ জন্মদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত : ১২:০২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১২:০৫, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
শুভ জন্মদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন, কারণ এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার নেতৃত্বে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। ঠিক তেমনিভাবে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এমন একজন মহীয়সী নারীর জন্ম হয়েছিল যার নেতৃত্বে দিকভ্রান্ত আওয়ামী লীগ যেমন শক্ত ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
১৯৭৫ পরবর্তী প্রায় সকল সরকার আওয়ামী লীগকে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু এবং এই দলের অবদানকে মুছে ফেলার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল। আশির দশকের শুরুতে যখন আওয়ামী লীগ বিধ্বস্ত প্রায় এবং বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হওয়ার মতো অবস্থায়, ঠিক সেই সময় ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু তনয়া আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে দেশে ফিরে ভঙ্গুর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পরে দলকে যেমন তিনি শক্তিশালী করার চেষ্টা করেন, ঠিক তেমনিভাবে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অগ্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। সেই আন্দোলনের ফসল হিসেবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৯০ সালে জেনারেল এরশাদের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে।
অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা বেশ কিছু দৃষ্টান্তমূলক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছিলেন। দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। যখন দেশ শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেইসময় ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রায় মুখ থুবরে পড়ে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে পুনরায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে দেশের অর্থনীতিকেই শুধু অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়নি, সামাজিক ও অন্যান্য সূচকেও ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে।
শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার পর থেকে তার পিতার ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার অসম্পূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। তিনি তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য সঠিক পথে এগিয়ে চলেছেন। তবে তার এই যাত্রাপথ নিষ্কণ্টক ছিলনা। তাকে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অত্যাচার ও ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এমনকি রাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী বহুবার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নৃশংস ঘটনার কথা আমরা আজও ভুলতে পারিনি। সেদিন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য জনসভায় গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ বেশ কিছু নেতা-নেত্রী সেদিন মৃত্যুবরণ করেছিলে। কয়েকশ নেতা-নেত্রীদের স্প্লিন্টারের অসহ্য বেদনা নিয়ে আজও বেঁচে আছে। ঘাতকেরা বিভিন্নভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করলেও ঈশ্বরের আশীর্বাদে তিনি সকল বাধাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছেন বাংলাদেশ গড়ার কাজে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বের যে বিষয়টি আমাকে সবসময় আকৃষ্ট করে সেটি হল তার দূরদর্শিতা। নেতা হিসেবে সফল হতে হলে একজন নেতাকে জনগণের ভাষা বুঝতে হয়। বুঝতে হয় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা। যে কাজটি শেখ হাসিনা খুব ভালো করতে পারেন। তার নেতৃত্বের দূরদর্শিতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি যখন পদ্মা সেতু থেকে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, ঠিক সেই সময়। পদ্মা সেতুতে কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের সিদ্ধান্তের ফলে দেশের বেশির ভাগ জনগণ স্বপ্নেও ভাবেনি যে বাংলাদেশে পদ্মা সেতু নির্মিত হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি সব সময় তার সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন তিনি হলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি এটি বাস্তবে করে দেখিয়েছেন এবং প্রমাণ করেছেন যে, আমরা বাংলাদেশিরা যদি চেষ্টা করি তাহলে দেশের কল্যাণের জন্য অনেক কিছুই করতে পারি। পদ্মা সেতু আজকে কোনো স্বপ্ন নয়, একটি বাস্তবতা। সেতুর উপর ৪২তম স্প্যান বসানোর সাথে সাথে পূর্ণাঙ্গ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। পদ্মা সেতুর উপরে রাস্তা এবং রেলপথের কাজ একসাথে এগিয়ে চলেছে।
২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্য সম্পাদন করেছেন। সাথে সাথে তিনি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আসামিদের বিচার কার্য সম্পন্ন করেছেন এবং বিচারের রায় কার্যকর করেছেন। এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য যে ধরনের মানসিক শক্তি প্রয়োজন তা সকল নেতার মধ্যে থাকে না। আমরা বাংলাদেশে গত ৫০ বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতার শাসন প্রত্যক্ষ করেছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পূর্বে নেতৃত্বের মাধ্যমে নিজেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অগ্রনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সাড়ে তিন বছর সময়ের ক্ষমতাকালে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য যে সমস্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন সেই পরিকল্পনাগুলো প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু করেছিলেন। ঠিক তেমনিভাবে শেখ হাসিনা তার পিতার আজন্ম লালিত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য যে সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন। তার নিরলস প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
তার নেতৃত্বর দৃঢ়তার কারণে বাংলাদেশ শতাব্দীর সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ সময়েও বিভিন্ন উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। আমরা জানি গত দেড় বছর সময়ের উপরে পৃথিবীব্যাপী কোভিড-১৯ ভাইরাসের তাণ্ডবে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য খাতসহ প্রায় সকল খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সকলেই জানি নেতা হিসেবে সফল হতে হলে একজন নেতাকে সংকটকালীন সময়ে সংকটের প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ নাগরিকদের চেয়ে অনেক আগে থেকেই যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দৃঢ়তার কারণে অনেক আগেই তিনি অতিমারীর বিপর্যয়মূলক প্রভাব সম্পর্কে বুঝতে পেরেছিলেন এবং এ বিপর্যয় থেকে নাগরিকদের রক্ষা করতে এবং অর্থনীতির গতিপথ চলমান রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তিনি একদিকে যেমন লকডাউন কার্যকর করেছেন, অন্যদিকে সঠিক সময়ে অফিস-আদালত-কলকারখানা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা করেছেন।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এখন পর্যন্ত তিনি নাগরিকদের জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সফলকাম হয়েছেন।
আমরা সকলেই জানি, শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ সময়ে বাংলাদেশের মতো অর্থনীতির ক্ষেত্রে জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করে লকডাউন বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ আমাদের দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ খেটে খাওয়া মানুষ। একদিন কাজ না করতে পারলে পরবর্তী দিন কিভাবে সংসার চলবে সে চিন্তায় তারা ব্যস্ত থাকে। তারপরেও সরকারের তরফ থেকে চেষ্টা করা হয়েছে যতটা সম্ভব দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদানের জন্য। এমনকি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য এক লক্ষ কোটি টাকার ওপরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্যাকেজ বাস্তবায়ন করেছে।
তিনি সঠিক সময়ে বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছিলেন বিধায় ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হওয়ার পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যখন ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে বাংলাদেশে ভ্যাকসিন প্রদানের কার্যক্রম বেশ দ্রুততার সাথে এগিয়ে চলেছে। এর মাঝে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন না পাওয়ার কারণে ভ্যাকসিন কার্যক্রম কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের সাফল্যের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বের অন্য যে বিষয়টি আমাকে আকৃষ্ট করে, সেটি হলো তার সততা। আমরা গত ৫০ বছরে দেশে বিভিন্ন সরকারের শাসন প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা আরও প্রত্যক্ষ করেছি সরকারের প্রধান ও তার পরিবারের সদস্যদের অর্থ উপার্জনের জন্য দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা। দেশের সর্বোচ্চ পদে থেকে যদি কেউ দুর্নীতিবাজ হয়ে পড়েন, তা দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয়। তবে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এমনকি শেখ হাসিনা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীরাও দাবি করতে সক্ষম হবে না যে, তিনি বা তার নিকটতম পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন।
ব্যক্তি ও নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের তৃতীয় যে বৈশিষ্ট্য আমাকে আকৃষ্ট করে তা হল, মানুষের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালবাসা। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তার রয়েছে বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ। আর এই শ্রদ্ধাবোধের কারণেই তিনি সবসময় চেষ্টা করে গেছেন কিভাবে বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানো যায়।
পরিশেষে একথা স্পষ্টভাবে বলা যায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনা নিজেকে এমন একটি উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের গুণাবলী পরিলক্ষিত হয়। তিনি সব সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দৃঢ় থেকেছেন।
তিনি জানেন, দেশ পরিচালনার জন্য কোনটি ভালো আর কোনটি খারাপ সিদ্ধান্ত। তিনি সবার কথা শোনেন, তবে সিদ্ধান্ত নেন নিজের মতো করে। এটি নেতৃত্বের একটি সর্বশ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য, যা একজন নেতাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহস ও দূরদর্শীতা তাকে অন্যান্য সমসাময়িক নেতা-নেত্রীদের থেকে আলাদা করে তুলেছে।
তার জন্মদিনে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, তিনি যেন সুস্থ থাকেন এবং যে ধারায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন সে ধারা অব্যাহত থাকুক। আমরা চাই তার যোগ্য নেতৃত্বে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে পদার্পণ করুক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বাঙ্গালী জাতির শেষ ভরসা। আবারো আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। শুভ জন্মদিন।
লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক।
এএইচএস/এসএ/