ঈশ্বর নিরূপিত তার মহাজীবন
প্রকাশিত : ১৩:১১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১৮:১২, ১০ অক্টোবর ২০২১
আজ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার জন্মবার্ষিকী। এ শুভ দিনে তাকে অশেষ শ্রদ্ধা ও অভিন্দন জানাই। এ শুভ দিনে পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনার অর্ঘ নিবেদন করি, যেন তিনি তাকে সুদীর্ঘকাল সুস্বাস্থ্যে বাঁচিয়ে রাখেন, যেন তিনি আমাদের দেশ ও সকল মানুষের কল্যাণের জন্য আরও অনেক সেবা দিতে পারেন; সেই সাথে যেন তিনি আমাদের দেশের জন্যই নয়, বিশ্বের অসংখ্য দরীদ্র ও নিপীড়িত মানুষের অবস্থার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য পথ প্রদর্শকের কাজ করে যেতে পারেন।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেবার এক মহা ও পবিত্র তীর্থযাত্রায় অনেক চড়াই-উৎড়াইয়ের কঠিন পথ পেরিয়ে স্বমহিমায় আমাদের প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে চলেছেন।
সীমাহীন দেশপ্রেম, দরীদ্র ও দুর্বল মানুষের প্রতি তার দরদী মন ও সেবার আদর্শে তিনি আমাদের মাঝে এক জীবন্ত কিংবদন্তী। তার তুলনা তিনি নিজেই। ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণিভেদে আমরা সবাই মহান স্রষ্টার কাছে এদিনে তার এ মহাজীবন ও কাজের জন্য অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে পারি।
১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্টে সংঘটিত বর্ণনাতীত সেই নারকীয় নিধনযজ্ঞ থেকে ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার বেঁচে যাওয়ার ব্যাপারটিকে আমি ঈশ্বর-নিরূপিত ঘটনা বলেই বিশ্বাস করি।
তারপরে কমপক্ষে বিশ বার তার জীবননাশের হুমকি ও ঘটনা ঘটেছে। পৃথিবীর সাম্প্রতিক ইতিহাসে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জীবননাশের উদ্দেশ্যে এত বেশিবারের চক্রান্ত ও হামলা বিরল। ওইসব ঘটনার বিবরণ দেয়া এ ক্ষুদ্র রচনার উদ্দেশ্য নয়।
আমার বিশ্বাস, বারংবার পবিত্র বাইবেলে ব্যবহৃত শব্দালঙ্কার, ‘মৃত্যুচ্ছায়ার উপত্যকার’ সেই পথ দিয়ে তিনি তার সহজাত সৎসাহস ও চারিত্রিক দৃঢ়তা, মানব উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভিমুখে চলার পথে সকল বাধা-বিপত্তিকে তুচ্ছজ্ঞান করে এগিয়ে চলছেন। এখানেই আছে তার বড় এক পরিচয়।
আমার মূল বক্তব্য এই যে, বিধাতা আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে নির্ঘাত মৃত্যুর হাত থেকে বারবার বাঁচিয়ে রেখেছেন যেন জাতির জনকের সেই সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন, যেখানে ধর্ম-বর্ণ-দল-শ্রেণি নির্বিশেষে এদেশের প্রতিটি মানুষ মানবীয় মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে এক শান্তিময় ও সুখী সমাজে বাস করতে পারবে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার পথ তিনি রচনা করতে পারেন।
মানুষের জীবনের উন্নতিকল্পে তিনি তার জীবন ও সকল কর্মপ্রচেষ্টার জন্য সারা বিশ্বেই আজ প্রশংসিত ও নন্দিত। তার জন্যই বাংলাদেশ ভূষিত হয়েছে ‘উন্নয়নের রোল মডেলের’ বিশেষণে, মানবতার সেবার জন্য তাকে দেয়া হয়েছে ‘মাদার অফ হিউম্যানিটি’সহ অনেক উপাধি।
এইত ক’দিন আগে জাতিসংঘ তাকে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সফলতার পথে এগিয়ে যাবার জন্য ‘এসডিজি প্রগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ প্রদানের মাধ্যমে তার দর্শন ও কাজের বিরল এক স্বীকৃতি দান করেছেন। একই দিনে বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন তাকে আখ্যায়িত করেছে ‘ক্রাউন জুয়েল’ অভিধায়।
বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত একটি দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। এর পেছনে আছে প্রধানমন্ত্রীর অক্লান্ত শ্রম, মেধা ও অকৃত্রিম দেশপ্রেম ও দরীদ্র মানুষের প্রতি তার দরদী মন-প্রাণ। মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালবাসা ও সেবাব্রতই তার নেতৃত্বের বড় চালিকাশক্তি। কেবল বর্তমানকে নয়, দেশের চলমান উন্নয়নের গতিধারা ভবিষ্যতে দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে, সে বিষয়ে আছে তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আছে নির্ভরযোগ্য রূপরেখা। তার নেতৃত্বে এখন যেভাবে উন্নয়নের গতিধারা এগিয়ে চলছে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে আমাদের দেশ আগামী ২০ বৎসরের মধ্যে একটি উন্নত দেশের পরিচয় লাভ করবে বলে আশা আছে।
বৈষয়িক অর্থে আমাদের যে প্রভূত উন্নতি হয়েছে- এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তবে একটা কথাও বলা আবশ্যক যে দেশে বড় এক প্রয়োজন সুশানের ও দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ। আমাদের সামগ্রীক উন্নয়নের পথে, দেশনেত্রীর সকল মঙ্গল চিন্তা ও তার সকল মেধাবী উদ্যোগ ও কর্মযজ্ঞের পথে এগুলো বড় অন্তরায়। বিশেষ করে সরকারী অফিসে অনেক দুর্নীতি; ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। রাজনীতি পরিণত হয়েছে একটি শিল্প বাণিজ্যে। এদেশে তথাকথিত শিক্ষিত লোকের অভাব নাই; প্রকৃত শিক্ষিত ও আলোকিত মানুষের বই অভাব।
জাতির জনক দুঃখের সঙ্গে একবার তার বক্তৃতায় বলেছিলেন- লেখাপড়া জানা লোকেরাই দুর্নীতি করে, সাধারণ শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষরা ঘুষ খায় না, দুনীতি করে না। এদেশে পর্বতপ্রমাণ দুর্নীতির কারণে প্রকৃত উন্নতি সম্ভব হয় না। দুর্নীতির এক ভয়াবহ ক্যান্সার আমাদের সমাজদেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পরেছে। এর কুলে গরীব গরীবই থাকে; আর ধনী আরো ধনী হয় সেই গরীবের ঘাড়ে পা রেখে।
এ জন্য তো জাতির জনকের স্বপ্ন ছিল না!
প্রসঙ্গত: মনে পড়ে বিখ্যাত নৃবিজ্ঞানী অধ্যাপক Dr. Paul Farner’i এ উক্তিটি- ÒThe idea that some lives matter less is the root of all that is wrong with the world.Ó আমাদের দেশ ও সমাজ আরোও অনেক উন্নত হবে যদি এখানে ‘দুষ্টের দমন হয়, আর শিষ্টের পালন হয়।’
নানা প্রকারের বঞ্চনা ও নিপীড়নের একটি শিকার এবং হতদরিদ্র জনসমাজের স্বাধীনতা ও মুক্তি এবং তাদের উন্নত জীবনের পথে নিয়ে যাবার লক্ষ্যেই বাংলাদেশের অভ্যুদয়। এদেশে আজ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের দৃশ্যমান চর্চা যার মাধ্যমে প্রতিটি ব্যক্তি-মানুষের মানবীয় মূল্য দেবে সরকার ও সকল প্রতিষ্ঠান। অর্থনৈতিক ও বস্তুগত উন্নয়নই সব নয়। তার সংগে সংগে প্রয়োজন সামাজিক ও মানবিক উন্নয়ন। ‘মানুষ কেবল রুটিতেই বাঁচে না’।
আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সামনে সব সময়ই অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ অতীতে যেমন ছিল এখনও আছে। কিন্তু তার দৃঢ় মনোবল, আত্মবিশ্বাস, মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাকে উত্তরোত্তর খ্যাতি ও স্বার্থকতার সুউচ্চ শিখরে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি এদেশের কোটি কোটি মানুষের সেন্হময়ী মায়ের মত, অনেকের কাছে তিনি বড় বোন। সর্বোপরি তিনি দেশসেবার জন্য আমাদের আদর্শ, তিনি মহামানব। আজ এ বিশেষ দিনে আমাদের অন্তরের প্রার্থনা- তিনি শতায়ু হোন।
লেখক : খ্রিষ্টীয় ঈশতত্ত্বের শিক্ষক, চার্চ নেতা এবং সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য।
এএইচএস/এসএ/