ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

বাঙালির স্বপ্নসারথি শেখ হাসিনা

সাইফ ইসলাম দিলাল

প্রকাশিত : ১৫:৩৫, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১০:৫৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর পশ্চিমা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশকে বলা হতো তলাবিহীন ঝুড়ি (বটমলেস বাস্কেট)। আর এখন বলা হচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নের রোল মডেল বা পথ প্রদর্শক। 

বাংলাদেশের অর্থনীতির অপার সম্ভাবনার কথাগুলো ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে বিশ্বের খ্যাতিমান গণমাধ্যমগুলোতে। 

বাংলাদেশের সবসময়কার সমালোচনাকারী আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রকাশনা ইকোনমিস্ট পত্রিকা পর্যন্ত বলেছে, ‘বাংলাদেশ একটি আনসলভড মিস্ট্রি উন্নয়নের অমীমাংসিত রহস্য।’ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক র‍্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান মুডিস বলেছে, ‘বাংলাদেশে গত এক দশক ধরে সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে স্থিতিশীলতা আছে তা দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশে নেই।’ কানাডীয় গবেষক কাটলার বলেছেন, “বালাদেশ ইজ হামিং উইদ অ্যাকটিভিস (বাংলাদেশে এখন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে।”  

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের বড় প্রশংসাপত্রটি দিয়েছে লন্ডন থেকে প্রকাশিত গার্ডিয়ান পত্রিকা। গার্ডিয়ান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা এবং অডিটিং ফার্ম প্রাইসওয়াটার হাউজ কুপারসের এক গবেষণাকর্মের বরাত দিয়ে বলেছে, আগামী পঞ্চাশ বছর পর উন্নত বিশ্ব বলতে সাতটি দেশকেই বোঝানো হবে। এগুলো এখনও উন্নয়নশীল দেশ। এর মধ্যে রয়েছে ভারত, চীন, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম, তুরস্ক এবং অবশ্যই বাংলাদেশ। তখন বিশ্ব অর্থনীতিকে এ দেশগুলোই নিয়ন্ত্রণ করবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ এখন তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই বিশ্বে অন্যতম উদীয়মান শক্তিশালী দেশ হয়ে উঠেছে।

বাঙালিকে এমন করে কে আর বুঝতে পেরেছে? পিতা মুজিব যেমন বুঝেছিলেন এ জাতির সম্পদ তার সাহস। জাগিয়ে দিতে পারলে দুর্দমনীয় হয়ে ওঠে। অগ্নি স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠে। জাগিয়ে দিলেন। মুক্তির স্বপ্নে জেগে ওঠা নিরস্ত্র বাঙালি বাঙলা থেকে চিরবিদায় দিল পরাক্রমশালী পাকিস্তানীদের । পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে জাতি পেল মুক্তির স্বাদ। 

মহাকাব্যিক ৭ই মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ কিন্তু স্বাধীন দেশে অল্পদিনে পিতা হারানোর শোকের সঙ্গে জাতি বঞ্চিত হলো মুক্তির স্বাদ থেকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথচলা মাত্রা সাড়ে তিন বছর। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে আরও একবার মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশ। থমকে যায় স্বাধীনতার চেতনা।  

দুঃসময় কাটিয়ে বিরুদ্ধ স্রোতে দাঁড়িয়ে জাতির মুক্তির সে দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিলেন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। সময়টা ১৯৮১ সাল। প্রবাসে দীর্ঘ নির্বাসন শেষে মাটি ও মানুষের টানে, ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই স্বদেশে ফিরে আসেন। স্বৈরচারের বিরুদ্ধে ভোট ও ভাতের লড়াই করতে করতে তিনি হয়ে উঠলেন বাঙালির স্বপ্নসারথি। রাজনৈতিক প্রবক্তা, বিচক্ষণতা, গতিশীল নেতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে তিনি শুধু দেশেই নন বহির্বিশ্বের অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বাঙালি জাতির জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন-সাহসে আবারো সাহসী হয়ে ওঠে বাঙালি। তিনি যখন বলেন‘বঙ্গবন্ধুর খুনি আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতেই হবে’, ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তায় তিনি তা করে দেখান। তিনি যখন উদ্যোগ নেন- সমাধান হয়ে যায় ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি সমস্যা, সীমান্ত সংকট, বঙ্গোপসাগরের সীমানা সমস্যা। পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন করে শান্তির বারতা বইয়ে দেন পার্বত্য অঞ্চলে। কেবল নিজ জাতিরই নয়, রোহিঙ্গাদেরও ত্রাণকর্তা হয়ে ওঠেন তিনি। বিশ্বের সম্পদশালী দেশগুলো যখন মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে হয়ে ওঠেন বিশ্ব মানচিত্রে ‘মাদার অব হিউমিনিটি বা মানবতার মা’। দায়িত্ব নেন বাড়তি ১০ লাখ রোহিঙ্গা ভরণপোষণের। হয়ে ওঠেন বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর। তার নাম অনিবার্যভাবে উঠে আসে বিশ্বের প্রভাবশালীয় নেতাদের তালিকায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ। গতিশীল নেতৃত্ব আর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বিগত দুই দশকের অগ্রগতি অভূতপূর্ব। এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়ন, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, নেতৃত্ব ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু মৃত্যু ও মাতৃ মৃত্যু হার হ্রাস, শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা অর্জন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্পায়ন এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ নানান অর্থনৈতিক সূচক বৃদ্ধি- শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি ও পরিশ্রমেরই ফসল।  

শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় বিশ্ব মোড়ল আর বিশ্ব ব্যাংকের অপপ্রচারে মুখে ছাই দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে দক্ষিণাঙ্গলে সংযোগ স্থাপন করতে চলেছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু। এ স্বপ্নে জড়িত আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থনীতি ও উন্নয়ন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, যা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মকাণ্ড। 

করোনা মহামারী বিশ্ব করেছে স্থবির, অদৃশ্য শক্তি মোকাবেলায় যখন হিমশিম আধুনিক ও উন্নত বিশ্ব, তখন শেখ হাসিনা এক হাতেই সামলে নিয়েছেন পরিস্থিতি। শুধু তাইই নয়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিনামূল্যে বিতরণ করে সংকট সমাধানের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। স্থবির হয়ে যাওয়া অর্থনীতির চাকা সচল করেছেন দেশের পোশাক শিল্পসহ উৎপাদনভিত্তিক কল-কারখানা চালু রেখে। জীবন-জীবিকাকে গুরুত্ব দিয়েছেন, সতর্ক দৃষ্টি রেখে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি আরোপও করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়াতে দিয়েছেন পর্যাপ্ত প্রণোদনা, যা বঙ্গবন্ধুকন্যার মানবিকতার আরেক দৃষ্টান্ত। 
 
স্বাধীনতার পর ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে যাত্রা করা দেশটির বাজেট আজ পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ছোট্ট দেশটি পরিচিতি আজ এশিয়ার ‘ইমার্জিং টাইগার’। বাজেটের আগে এখন আর অর্থমন্ত্রীকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ছুটতে হয় না ধনী দেশগুলোর দ্বারে দ্বারে। আর তাইতো প্রভাবশালী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের কথায় কথায় খবরদারির দিনও শেষ। পরাশক্তিগুলোর রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে জাতিকে শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিচ্ছেন অসীম সাহসে। বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন দৃঢ়চিত্তে। এই অগ্রযাত্রার পেছনের সুদক্ষ কারিগর শেখ হাসিনা; এ দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার শেষ ভরসাস্থল। তার স্বপ্নের পথে হেঁটে জাতি পৌঁছে যেতে চায় পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায়।

এসএ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি