শেখ হাসিনা- বজ্র কঠিন অথচ কত কোমল
প্রকাশিত : ২০:২০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ২০:২১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘সভ্যতার সংকট’-এ লিখেছিলেন, ‘‘আজ আশা করে আছি, পরিত্রাণকর্তার জন্মদিন আসছে আমাদের এই দারিদ্র্যলাঞ্ছিত কুটিরের মধ্যে; অপেক্ষা করে থাকব, সভ্যতার দৈববাণী সে নিয়ে আসবে, মানুষের চরম আশ্বাসের কথা মানুষকে এসে শোনাবে এই পূর্বদিগন্ত থেকেই।’’
একুশ শতকের এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে যেখানে গোটা বিশ্ব কোভিড মহামারির সঙ্গে লড়াই করছে, নানা রকম বৈশ্বিক ও অর্থনৈতিক সংকটে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের একজন বুদ্ধিদীপ্ত সৈনিক যে সুদূর প্রসারী চিন্তাভাবনা নিয়ে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই পরিত্রাণকর্তার গল্প যেন একেবারেই রূপকথা নয়। আমি বলছি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে।
শেখ হাসিনা বোধহয় একমাত্র নেতা, যিনি জীবনবোধের কথা বলতে গিয়ে অকপটে নিজেকে ও নিজের জীবনবোধকে প্রকাশ করেছেন। এ জীবনবোধ অবশ্য উঠে এসেছে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ত্যাগের মধ্য দিয়ে। “সব হারিয়ে আমার শুধু দেবার পালা। মানুষের জন্য করে যাচ্ছি। দেশের মানুষের জন্য যে ত্যাগ করার করবো, আমি জীবন দিতেও প্রস্তুত।”
তার এ কথাগুলোই বলে দেয় সত্যনিষ্ঠ সেবার ব্রত কতটা দৃঢ় হতে পারে। সত্যিই অবাক হতে হয়, কি করে তিনি সব হারিয়ে সেবার ব্রত নিয়ে একজন প্রান্তিক মানুষের নেতা হয়ে ওঠেন। কোনো বাঁধাধরা তত্ত্বে বা বিশ্লেষণে এমন একজন নেত্রীকে বেঁধে ফেলা যায় না। কারণ তিনি নিজেও নিজেকে আটকে রাখেননি কনো নিদিষ্ট তত্ত্বে। প্রতিনিয়ত আধুনিক চিন্তা-ভাবনার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রহণ করছেন রাষ্ট্রের জন্য উপযোগী রাষ্ট্রনীতি। খোলামনে খোলাচোখে শক্ত মাটিতে দাঁড়িয়ে সবকিছু যাচাই করে দেখেছেন। আর সেই সঙ্গে পুরানোকে ছাড়িয়ে নতুনের দিকে বাড়িয়েছেন হাত।
বিশেষত, বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশ কাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়বে বা কীভাবে এগিয়ে যাবে- তা একমাত্র তিনিই বুঝেছেন। তাঁর পারদর্শিতায় দেশের সাধারণ মানুষের অগ্রগতি হয়েছে। তিনি সাধারণ মানুষের ভালোবাসাও তাই পেয়েছেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিমুহূর্তে ঝুঁকির মধ্যে থাকা শেখ হাসিনার পদক্ষেপগুলোর সমালোচনা অনেকেই করেন, কিন্তু তিনি প্রতিবারেই তাঁর নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় গুণ তার সুদূরপ্রসারী ভাবনা যা দেশের ভবিষ্যতকে উপকৃত করবে, তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বকে এগিয়ে নেয়ার আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার পরামর্শও এখন গ্রহণযোগ্য এবং প্রশংসনীয়। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেছেন, শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটেছে। কানাডার আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী মেরি ক্লদ বিবেউ বলেছেন, শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ার স্তম্ভ।
এসব কথার সত্যতা একজন নারী হিসেবে দেখতে পাই চারিদিকে। তিনি নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। ব্রিটিশ মিডিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বর্ণনা করেছে, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে।
ধর্মীয় উগ্রতা ও যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময় জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলেছেন। শেখ হাসিনা একইসঙ্গে বজ্রের মতো কঠিন-কঠোর ও ফুলের মতো কোমল নেত্রী। তিনি পিতৃ-মাতৃহীন শিশু, বঞ্চিত শিশুকে কোলে তুলে নিয়ে কেঁদে আকুল হন, সাধারণ মানুষের মতো নাতী-নাতনীদের নিয়ে ভ্যানে ঘুরে বেড়ান। তেমনি মানবতাবিরোধী গণহত্যাকারীরা, তাঁর চেনামানুষ হলেও, তারা যখন তাদের কৃত-অপরাধের জন্য যোগ্য শাস্তি পায়, তখন তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ে তা অনুমোদন করেন।
বাংলাদেশে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত ও মধ্যম আয়ের আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে। দেশবাসীর মতোই আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোও ক্রমান্বয়ে তাঁর ওপর আস্থাশীল হয়ে উঠছে।
শেখ হাসিনা আজ জাতিসংঘ তথা বিশ্ব পরিমণ্ডলে শান্তি ও ন্যায়ের এক মূর্ত প্রতীক। তিনি শুধু দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, বিশ্বের অন্যতম প্রধাননেতা হিসাবে নিজের দেশ ও জনগণকে তুলে ধরেছেন সবার ওপরে। তার এত এত অর্জনের পরেও তাঁকে যখন একটি ইন্টারভিউয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী না হতেন তিনি কি হতে চাইতেন, তিনি অকপটে বলেছিলেন তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতেন। কারণ তার ছোট শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে খুব ভালো লাগে।
জয় হোক শিশুর মত কোমল ও বজ্রের মত দৃঢ় জননেত্রীর, জয় হোক নন্দিত নেত্রী শেখ হাসিনার; ৭৫তম জন্মদিনে এ প্রজন্মের বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে তাকে জানাই- স্যালুট।
লেখক: চিত্রশিল্পী ও শিক্ষক, সহজপাঠ বিদ্যালয়।
এএইচএস/এনএস//