ওয়াজেদ মিয়ার ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী
প্রকাশিত : ১১:২৯, ৯ মে ২০২২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ জামাতা দেশের বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী ৯ মে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০০৯ সালের এ দিনে তার মৃত্যু হয়।
উপমহাদেশের খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়া ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জের লালদীঘি ফতেপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৬১-’৬২ শিক্ষা বছরের জন্য হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তারবরণ করেন। ১৯৬৩ সালের ১ এপ্রিল তিনি তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৬৩-’৬৪ শিক্ষা বছরে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ‘ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স’ কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের ‘ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলে তাকে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকার আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে পদায়ন করা হয়।
আজন্ম সৎ, নির্লোভ ও নিখাদ দেশ্রপ্রমিক এই পরমাণু বিজ্ঞানী ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
তাদের এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। ১৯৬৯ সালে ইতালির ট্রিয়েস্টের আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তাকে এসোসিয়েটশিপ প্রদান করে। তিনি ওই গবেষণা কেন্দ্রে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬৯ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের ড্যারেসবেরি নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির কার্লসরবয়ে শহরের ‘আণবিক গবেষণা কেন্দ্রে’ আণবিক রিঅ্যাক্টর বিজ্ঞানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লির ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি অনেক জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। তার অনেক গবেষণামূলক ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় এবং সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সাত বছর নির্বাসিত জীবন কাটান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পদার্থ বিজ্ঞান, ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্রদের জন্য দু’টি গ্রন্থ রচনা করেন।
তার লেখা ৪৬৪ পৃষ্ঠার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে এবং ৩২০ পৃষ্ঠার ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়।
১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালের জন্য তিনি পর পর দু’বার বাংলাদেশ আণবিক শক্তি বিজ্ঞানী সংঘের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৩, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে তিনি পর পর তিনবার ওই বিজ্ঞানী সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চার বছর তিনি বাংলাদেশ পদার্থ বিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৭ সালে দু’বছর মেয়াদের জন্য ওই বিজ্ঞান সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। তাছাড়া তিনি ওই বিজ্ঞান সমিতির আজীবন সদস্য। ১৯৮৯ সালে দু’বছর মেয়াদের জন্য ওই বিজ্ঞান সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। তাছাড়া তিনি ওই বিজ্ঞান সমিতির আজীবন সদস্য।
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত পরপর দু’টি দু’বছর মেয়াদকালের জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি পর পর দুই দু’বছর মেয়াদকালের জন্য ওই বিজ্ঞান সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। বিজ্ঞানে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্যার জগদীশচন্দ্র বসু সোসাইটি তাকে ‘স্যার জগদীশচন্দ্র বসু স্বর্ণপদকে ভূষিত করে।
এছাড়া তিনি ওই সমিতির একজন আজীবন সদস্য। ১৯৯১-১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশ আণবিক শক্তি বিজ্ঞানী সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত পরপর তিনবার দু’বছর মেয়াদকালের জন্য তিনি ‘বাংলাদেশ বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানজীবী সমিতি’র সভাপতি নির্বাচিত হন এবং তিনি ওই সমিতির একজন আজীবন সদস্য। তিনি ঢাকার রংপুর জেলা সমিতির আজীবন সদস্য এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত দু’বছর মেয়াদকালের জন্য এই সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এবং ঢাকার বৃহত্তম রংপুর কল্যাণ সমিতি, উত্তরবঙ্গ জনকল্যাণ সমিতি, রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন ফোরাম, বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদ এবং রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার মির্জাপুর বছির উদ্দিন মহাবিদ্যালয়ের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।
মৃত্যুর পর তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বাণীতে বলেন, “বিজ্ঞান শিক্ষা, গবেষণা ও রাজনীতিতে ড. ওয়াজেদ মিয়ার অবদান বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।”
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলার পীরগঞ্জে উপজেলা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
দিনটি উপলক্ষে সোমবার পীরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা আওয়ামী লীগ, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ফাউন্ডেশন এবং আওয়ামী লীগের সহযোগি সংগঠনগুলো শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও কবর জিয়ারত, স্মৃতিচারণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূিচ গ্রহণ করেছে।
প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ভাতিজা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম জানান, সোমবার সকালে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগি সংগঠনসমূহ, বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং সুশীলসমাজের পক্ষ থেকে লালদীঘির ফতেহপুরে জয়সদনে প্রয়াত পরমানু বিজ্ঞানীর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচী শুরু হবে। এ সময় জয়সদন প্রাঙ্গনে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের পর দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে।
পীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায় জানান, প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী পরমাণু বিজ্ঞানী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
দিবসটি উপলক্ষে সোমবার সকালে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন, দুপুরে উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে স্মৃতিচারণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। প্রয়াত পামানু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণে এ আলোচনাসভায় তার নিকট আত্মীয়রা উপস্থিত থাকবেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জুম কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র: বাসস
এসএ/