সাংবাদিক বেবী মওদুদের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
প্রকাশিত : ২০:০২, ২৬ জুলাই ২০২৩
নিজেকে গৌণ আর স্বদেশ, রাজনীতি-সংস্কৃতিকে মূখ্য জ্ঞান করতেন বেবী মওদুদ। চিরন্তন এক শিখা হয়ে নির্যাতিত জনমানুষকে দিশা দেখিয়েছেন প্রগতীশীল রাজনীতির এই কাণ্ডারী। যার কেন্দ্রে ছিল কেবলই মানুষ। বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত সাহিত্যিক-সাংবাদিক ও রাজনীতিক বেবী মওদুদের নবম প্রয়াণ দিবসের স্মরণসভায় যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন বক্তারা।
দেশভাগের পর জন্ম নেয়া মানুষঘনিষ্ট, স্বাধীনচেতা মানবিক এক ব্যক্তিত্ব বেবী মওদুদ। যার লেখনি, নেতৃত্ব আর প্রজ্ঞার কাছে ঋণী বাঙালি। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই ৬৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
বেবী মওদুদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন, কলকাতায়। বাবা বিচারপতি আবদুল মওদুদ ছিলেন কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড এবং নজরুল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সংস্কৃত, ফার্সি, আরবি ও ইংরেজি ভাষায় বিস্তর দখল ছিল বিচারপতি মওদুদের। কলকাতায় ছাত্রাবস্থায় দৈনিক আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী, সওগাত ও ইত্তেহাদ পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হতো তার লেখা প্রবন্ধ। এ গুণী মানুষটির তৃতীয় সন্তান বেবী মওদুদ।
মুক্তিযুদ্ধের আগে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসাবে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন বেবী মওদুদ। ১৯৬৭-৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে আসাদ হত্যার প্রতিবাদে রাজপথে মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অসীম সাহসে। যুক্ত ছিলেন অসহযোগ আন্দোলনেও। ১৯৭১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধে কবি সুফিয়া কামালের সঙ্গে স্বাধীনতার স্বপক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় বিভিন্ন কাজে যুক্ত হন তিনি। ১৯৬৩ সালে দৈনিক সংবাদ, ইত্তেফাক এবং চিত্রালীর মাধ্যমে হাতেখড়ি হলেও শিক্ষাজীবনের শেষ দিকে ১৯৬৭ সাল থেকে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন বেবী মওদুদ।
চার দশকের বেশি সময়ের সাংবাদিকতায় তিনি সাপ্তাহিক ললনা, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক মুক্তকণ্ঠ, দৈনিক আজাদ, গণবাংলা, বিবিসি বাংলা বিভাগ, সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বাংলা বিভাগে কাজ করেছেন।
নব্বইয়ের দশকে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনেও তিনি ছিলেন নেতৃস্থানীয়, অগ্রসৈনিক। ১৯৯৬ সালে বাসসের বাংলা বিভাগ তার নেতৃত্বে চালু হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সবশেষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সামাজিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি শিশু সাহিত্য রচনায় যেমন নাম কুড়িয়েছেন, তেমনি সাংস্কৃতিক কর্মী হিসাবে অথবা নারী নেত্রী ও সচেতন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবেও পরিচিত ছিলেন।
ক্ষণজন্মা এই নারী শেষজীবনে এসে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের সদস্য হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বেবী মওদুদের স্বামী অ্যাডভোকেট হাসান আলী ১৯৮৫ সালে মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে রবিউল হাসান অভী ও শফিউল হাসান দীপ্তসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এমএম//