ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

‘বেলী ফুলের মালা দিয়ে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়েছিল’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:১৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ০৯:৫৯, ৩ অক্টোবর ২০১৮

আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি প্রথম আমি চিনি এবং জানি যখন তিনি বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের (তখন সেটা ছিল ইন্টারমিডিয়েট গভ: গার্লস কলেজ) ছাত্রী। তখন তাঁকে দেখেছি। কিন্তু কোনো কথা তখনো হয়নি। মুখোমুখি আলাপ হওয়ার প্রয়োজনও হয়নি। 

ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তিনি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ভিপি প্রার্থী ছিলেন এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। তখন আমিও নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু কখনো আলাপ হয়ে উঠেনি।

শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ ১৯৬৭ সালে। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হই। তিনিও বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। অন্য অনেক সহপাঠীর সঙ্গে যেমন পরিচয় হয় তাঁর সঙ্গেও সেভাবে পরিচয় হয়েছিল।

তবে আমাদের এই পরিচয়টা ঘনিষ্ট হয় বিভাগীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময়। বিভাগীয় ছাত্র সংসদ নামে তখন একটা নির্বাচন হতো। বাংলা বিভাগ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগও প্যানেল দেয়। ছাত্র ইউনিয়নও প্যানেল দেয়।

ভিপি ও জিএসসহ ১৯টি পদে নির্বাচন হয়। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। শেখ হাসিনা নিজে প্রার্থী না হলেও ছাত্রলীগের প্যানেলকে তিনিই গাইড করেছিলেন। আমি নিজেও প্রার্থী ছিলাম না। তবে ছাত্রইউনিয়ন যাতে জিতে আসে সেজন্য কাজ করেছিলাম। সেই নির্বাচনে জিএসসহ ১১ টি পদে ছাত্র ইউনিয়ন জয়ী হয়। আর ভিপিসহ বাকি আটটি পদে জয় পায় ছাত্রলীগ।

আমার স্মৃতিতে এই নির্বাচনটা হচ্ছে একটা মধুর নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের সবার সঙ্গে সবার পরিচয়, যোগাযোগ, ঘনিষ্টতা সবই হয়েছে। কিন্তু কোনো ধরনের বিদ্বেষ, প্রতিহিংসা বা অসৌজন্য আচরণের কথা আমরা কেউ ভাবতেও পারতাম না। নির্বিচনের ক্যাম্পিং করে এসে উভয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এক সঙ্গে চা খেয়েছি, আড্ডা দিয়েছি, দুষ্টুমী করেছি। সেই নির্বাচনের ভেতর দিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার ঘনিষ্টতা বাড়ে।


নির্বাচনের পরে কোনো এক সময় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেসা মুজিব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে ভর্তি করা হয়েছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। একদিন আমি, বেবী মওদূদ (তিনি তখন বাংলা বিভাগের জিএস), আরো কয়েকজন মিলে বেগম মুজিবকে দেখতে গেলাম। বেগম মুজিবকে আমরা অনেকেই খালাম্মা ডাকতাম। তাকে ঢাকা মেডিকেলে কোনো কেবিন বা ওয়ার্ডে রাখা হয়নি। রাখা হয়েছিল ` ডক্টরস কেবিন` নামক একটা কেবিনে। ডক্টরস কেবিনে মূলত ডাক্তাররা অসুস্থ হলে থাকতো। ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের অনুসারী ডাক্তাররা তাকে ডক্টরস কেবিনে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। পরে আমরা বুঝেছিলাম, ডক্টরস কেবিনে ভর্তি হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে জেলখানার সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধা হওয়া।


বঙ্গবন্ধু তখন জেলখানায় ছিলেন। জেলখানার পলিটিক্যাল প্রিজনাররা রেগুলার জেলখানায় আসত এবং আসার সময় বঙ্গবন্ধু`র চিরকুট নিয়ে আসত। যাওয়ার সময় বেগম মুজিবও চিরকুট পাঠাতেন।
আমরা যখন যাই তখন বেগম মুজিব শোয়া অবস্থায় ছিলেন। আমরা যাওয়ার পর তিনি উঠে বসলেন। সবার সঙ্গে কথা বললেন। সেখানে শেখ হাসিনাও উপস্থিত ছিলেন। তিনি আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমরা যারা তার সহপাঠী তাদেরকেও আলাদা ভাবে পরিচয় করিয়ে দিলেন।


বেগম মুজিব তার জন্য আনা আপেল কমলা আমাদেরকে কেটে খাওয়ালেন। আমরা চা খাব কিনা জিজ্ঞেস করলেন। পরে আরেকবার বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়েছিলাম কোনো একটা কাজে। তখন শেখ হাসিনার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। আমরা আবদার করে বসলাম, মিষ্টি খাওয়ান। খালাম্মা আমাদেরকে নানান খাবার খাওয়ালেন। আমরা দুষ্টুমী, হাসি ঠাট্টা করে চলে আসলাম। শেখ হাসিনার বিয়ে খুব সাধারণ অনাড়ম্বরভাবে হয়েছিল। ঘরোয়া পরিসরে আত্মীয় স্বজন ছাড়া বাইরের কেউ ছিলেন না। ফলে বিয়েতে অংশগ্রহণের সুযোগ আমার ছিলো না। ১৯৬৭ সালের নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। এরপর যোগাযোগ খুব কম হতো। একেপর্যায়ে দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। দেশ স্বাধীন হলো। স্বাধীন বাংলাদেশে বা ৭৫ পরবর্তী সময়ে অনেক দিন শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে উঠেনি।


পরবর্তীতে শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার দেখা হয় আশির দশকে। তখন তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ১৫ দলীয় জোটের নেত্রী। আমি তখন সিপিবি করি। সেই হিসেবে সভায় যেতাম। তবে তখনো জোট সংক্রান্ত কথা ছাড়া অন্য আলাপের সুযোগ হয় নাই। তাঁর সাথে আমার দীর্ঘক্ষণ আলাপের সুযোগ হয় ৯০ দশকে। তখন তিনি বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে মিন্টো রোডে থাকেন। আমি নিজেই আগে থেকে শিডিউল নিয়ে গিয়েছিলাম। সেটাকে আসলে রাজনৈতিক বৈঠক বলা যায় না।

একজন সহপাঠী হিসেবে অনেক স্মৃতিচারণ, কে কোথায় আছে, কে কী করছে ইত্যাদি আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক কথাও টুকটাক ছিল। তবে তারপর থেকে তার সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়। আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া পর্যন্ত আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হতো। আমরা যারা সিপিবি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি- পুরো নেগোসিয়েশনটা আমিই ওনার সঙ্গে করেছি। আমরা আওয়ামী লীগে যোগ দিই ১৯৯৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি।

এর কিছুদিন পরে আমাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ড. মালেককে গবেষণা, প্রকাশনাসহ নানা লেখালেখিতে সহযোগিতা করার জন্য নিয়োগ করেন। এর পরপরই আওয়ামী লীগের সম্মেলন আসে। আমাকে সেই সম্মেলনে ওয়ার্কিং কমিটির মেম্বার করা হয়। পরের সম্মেলনে তিনি আমাকে তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, এর পরে প্রচার সম্পাদক, সর্বশেষে প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। একটি পিছিয়ে থাকা জাতিকে শক্ত হাতে নেতৃত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে অবস্থানে নিয়ে এসেছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। আজকের বাংলাদেশে তাঁর কোনো বিকল্প থাকতে পারে বলে মনে করি না। তাই মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের স্বার্থে তার দীর্ঘজীবন ও সুস্থতা প্রত্যাশা করছি।
প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।


**লেখক: সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
শ্রুতি লেখক: আলী আদনান।
/ আআ / এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি