প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্ণাঢ্য জীবনী
প্রকাশিত : ১১:১৭, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১২:৫৩, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা, জাতির জনক ও বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তার মাতার নাম বেগম ফজিলাতুন্নেছা।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় তিনি। বাল্যশিক্ষা সেখানেই নেন।
১৯৫৪ সাল থেকে তিনি ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে মোগলটুলির রজনীবোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে উঠেন।
১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে থাকা শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ও রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ওয়াজেদ মিয়া ২০০৯ সালের ৯ মে মৃত্যুবরণ করেন।
তাদের সংসারে সজীব ওয়াজেদ জয় (পুত্র) ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (কন্যা) নামে দুই সন্তান রয়েছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, ওই সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
পরের ৬ বছর লন্ডন ও দিল্লিতে তাদের নির্বাসিত জীবন কাটে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। পাঁচ বছরের মাথায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
১৯৮১ সালে থেকে টানা প্রায় ৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।
১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনা তিনটি সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ওই নির্বাচনের পরই দেশ থেকে সামরিক আইন প্রত্যাহার করে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলে শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বিজয়ী হলে ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বার শপথগ্রহণ করেন তিনি।
এছাড়া ২০১৯ সালে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন নজির স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এর আগে বাংলাদেশে যারা সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কেউই চারবারের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পাননি।
এছাড়া বাংলাদেশের তিনটি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত, ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০১৮ সালে তার অবস্থান ছিল ২৬তম এবং ২০১৭ সালে ৩০তম।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ফরেইন পলিসি নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদদের তালিকায় শেখ হাসিনা জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি বিশ্ব নারী নেত্রী পরিষদ-এর একজন সদস্য, যা বর্তমান ও প্রাক্তন নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক।
বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতির পাশাপাশি শেখ হাসিনার ঝুলিতে জমেছে অনেকগুলো অর্জন। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক অনেক সম্মাননা পদক। এ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে দেওয়া আন্তর্জাতিক পুরস্কারের সংখ্যা প্রায় ৪০টি।
১৯৯৬ সালে প্রথমবার যখন বাংলাদেশের হাল ধরেন, সে সময় ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো থেকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার লাভের মাধ্যমে জাতিসংঘের সম্মাননা অর্জনের পর প্রথম আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে প্রায় দুই দশকের বেশি পুরানো সংঘাত অবসানের একবছর পরে তিনি এই সম্মাননা লাভ করেন।
এছাড়া, বাংলাদেশে নারী শিক্ষা এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে অসামান্য নেতৃত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী গত বছরের ২৭ এপ্রিল গ্লোবাল উইমেন’স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
চলতি বছরের মার্চে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে ইনস্টিটিউট অব সাউফ এশিয়ান উইমেন। বার্লিনে ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এ পদক গ্রহণ করেন সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ‘ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯’ পেয়েছেন শেখ হাসিনা। খ্যাতনামা বিজ্ঞানী, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আব্দুল কালামের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এ পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।
জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে যোগ দিয়ে গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)।
আর গত ২৬ সেপ্টেম্বর তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে শেখ হাসিনাকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ শীর্ষক পুরস্কারে ভূষিত করেছে ইউনিসেফ। এছাড়া, বিভিন্ন দেশ থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
এছাড়া শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষভাবে প্রশংসিত হন মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ফরেন পলিসি ‘প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা’ বিভাগে সেরা ১০ চিন্তাবিদের তালিকায় রাখা হয়েছে তাকে।