বছরজুড়ে যেসব বিশিষ্টজনদের হারাল বাংলাদেশ
প্রকাশিত : ১৬:৪৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৮:৫৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯
মহাকালের অমোঘ নিয়মে বিদায়ের ঘণ্টা বাজছে ২০১৯ সালের। দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন বছর। বিদায়ী এ বছরটিতে চিরতরে বিদায় নিয়েছেন বাংলাদেশের অনেক গুণী ব্যক্তিত্ব। এ তালিকায় রাজনীতিবীদ থেকে শুরু করে রয়েছেন চলচ্চিত্র, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনে ছিল তাদের অসামান্য অবদান। প্রিয়জনদের কাঁদিয়ে চলে গেছেন তারা, তবে রেখে গেছেন তাদের অমর কৃতিত্ব। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের ত্যাগ, সংগ্রাম ও সফলতার কথা তুলে ধরা হলো।
রাজনৈতিক অঙ্গনে যাদের হারালাম:
নানান ঘটনাবহুল ২০১৯ সাল আমাদেরকে যত দিয়েছে, কেড়ে নিয়েছেও অনেক। এই বছর বিনোদন জগত থেকে শুরু করে রাজনীতির অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হারিয়েছি আমরা। ২০১৯ সালে রাজনীতি অঙ্গনে হারানোর মিছিলটা এবার অনেক চওড়া। এক নজর দেখে আসা যাক উল্লেখযোগ্য কয়েকজন রাজনীতিবিদ প্রয়াণের বিদায় ও তাদের অমর কৃতিত্ব।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রী। ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বাংলাদেশের মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আশরাফুল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন।
১৯৭৫ সালে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আশরাফুলের বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে হত্যা করার পর তিনি যুক্তরাজ্যে চলে যান। তারপর থেকেই সৈয়দ আশরাফ লন্ডনে বসবাস শুরু করেন।
১৯৯৬ এ দেশে ফিরে আসেন সৈয়দ আশরাফ। ১৯৯৬ সালেই তিনি ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এসময় তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ২০০১ সালে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মন্ত্রীসভা গঠিত হলে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পুনরায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্বরত ছিলেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর সৈয়দ আশরাফুলের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি প্রায়ই অসুস্থ হন। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। নভেম্বর ২০১৮ সালে তার ফুসফুসের ক্যান্সার ৪র্থ ধাপে পৌঁছে। ২০১৯ সালের ৩রা জানুয়ারি থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ৬ জানুয়ারি ঢাকার বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ
এ বছরেই আমরা হারিয়েছি রাজনীতি অঙ্গনের আলোচিত ব্যক্তিত্ব হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে। তিনি ১৯৩০ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি জন্ম নেন। পৈতৃক নিবাস ভারতের কোচবিহারে। পিতা মকবুল হোসেন ছিলেন আদালতের পেশকার। পিতার চাকরির সুবাদেই বাংলাদেশের রংপুরে তাদের বসতভিটা।
১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা এরশাদ ৫২ সালে কমিশন লাভ করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল এবং উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৭৮ সালে তাকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ একই বছরের ডিসেম্বরে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব বুঝে নেন।
১৯৮৩ সালে নির্বাচিত সরকারের অধীনে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সামরিক শাসন জারীর মাধ্যমে দেশ শাসন করেন। দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুন:প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ঘোষণা করে তিনি ১৯৮৬ সালে সংসদীয় সাধারণ নির্বাচন দেন।
এই নির্বাচনে তিনি স্বপ্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ভোটপ্রার্থী হিসাবে অংশ গ্রহণ করেন এবং পরে পাঁছ বছরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গণবিক্ষোভের চাপে এবং সেনাবাহিনীর সমর্থনের অভাবে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
ক্ষমতা হারানোর পর এরশাদ গ্রেফতার হন এবং ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না-আসা পর্যন্ত কারারূদ্ধ থাকেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। বিএনপি সরকার তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। তার মধ্যে কয়েকটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সাজাপ্রাপ্ত হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন।
ছয় বছর আবরুদ্ধ থাকার পর ৯ জানুয়ারি ১৯৯৭ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি ২০০০ সালে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার মধ্যে মূল ধারার তিনি চেয়ারম্যান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর জাতীয় নির্বাচনে তার সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং তার স্ত্রী রওশন এরশাদ প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা হন।
জীবনের নানা উত্থান পতন পেরিয়ে তিনি ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।
ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রথম, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা টানেলে দ্বিতীয়, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে তৃতীয় এবং রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে চতুর্থ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবার পর ১৬ জুলাই তাকে রংপুরের পল্লী নিবাসের লিচুবাগানে তার বাবার কবরের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
সাদেক হোসেন খোকা
সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী এবং বাংলাদেশের রাজধানী অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ মেয়র। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সহ-সভাপতি ছিলেন এবং অবিভক্ত ঢাকার শহর বিএনপির সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন।
১৯৫২ সালের ১২ মে তারিখ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন খোকা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানে এম.এ. সম্পন্ন করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
স্বাধীনতার পর তিনি ফুটবল নিয়ে কাজ করেন। তিনি ঢাকা মহানগর ফুটবল সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তাঁর দল সরকার গঠন করলে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন।
২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন খোকা। ২৯ নভেম্বর ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঢাকা মহানগরের মেয়র ছিলেন তিনি।
রাজনীতি অঙ্গনের প্রিয় মুখ সাদেক হোসেন খোকা ৪ নভেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ৭ নভেম্বর তাকে জুরাইন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
মঈনুদ্দিন খান বাদল
জাসদ নেতা, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মইন উদ্দীন খান বাদল গত ৭ নভেম্বর ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারায়ণ হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
ষাটের দশকে ছাত্রলীগের ‘নিউক্লিয়াসে’ যুক্ত হয়ে বাদল একাত্তরে ভারতে প্রশিক্ষণ নেন এবং পরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র বোঝাই জাহাজ সোয়াত থেকে অস্ত্র খালাস প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন মইন উদ্দীন খান বাদল।
মুক্তিযুদ্ধের পর সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন তিনি। জাসদ হয়ে বাসদ এবং পরে আবারও জাসদে ফেরেন এই রাজনীতিবিদ। এরশাদের সামরিক শাসনের সময় তাকে কারাগারে যেতে হয়। ২০১৬ সালের ১২ মার্চ জাসদের জাতীয় কাউন্সিলে আবার দুই ভাগ হয় দলটি।
হাসানুল হক ইনু ও শিরীন আখতার নেতৃত্বাধীন অংশটি ইসির স্বীকৃতি পাওয়ার পর শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান নেতৃত্বাধীন অংশটি বাংলাদেশ জাসদ নামে আলাদা দলের স্বীকৃতি চায়। তবে ইসি তাদের নিবন্ধন দেয়নি। এই অংশের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মইন উদ্দীন খান বাদল।
চট্টগ্রাম ৮ (চাঁদগাও-বোয়ালখালী) আসনের তিনবারের সাংসদ মইন উদ্দীন খান বাদল সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ মারা যান ২৩ অগাস্ট। তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একমাত্র জীবিত সদস্য ছিলেন তিনি।
মোজাফফর আহমদের জন্ম ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল, কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামে। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোজাফফর আহমদ এই আন্দোলন সংগঠনে ভূমিকা রাখেন।
ষাটের দশকের শেষ ভাগে বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলনে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নপন্থি দুই ধারা স্পষ্ট হয়। এ নিয়ে মতবিরোধ থেকে মাওলানা ভাসানী থেকে আলাদা হয়ে যান অধ্যাপক মোজাফফর। ভাসানী নেতৃত্বাধীন ন্যাপ চীনপন্থি, আর ন্যাপ মোজাফফর হয় মস্কোপন্থি।
১৯৭১ সালে তাজউদ্দীন আহমদকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলী গঠন করা হলে তাতে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকেও সদস্য করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মন্ত্রিত্ব নিতে অস্বীকার করা মোজাফফর আহমদ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারও নেননি।
খন্দকার আব্দুল বাতেন
২১ জানুয়ারি বিদায় নিয়েছেন আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনীতিবিদ খন্দকার আবদুল বাতেন। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৭২ বছর বয়সে মারা যান। আবদুল বাতেন ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতির সাথে জড়িত হন। ১৯৬৭-৬৮ মেয়াদে তিনি সরকারী সাদাত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) এবং ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে (জাসদ) যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে নাগরপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯০-এর দশকে পুনরায় আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আবদুল বাতেন ১৯৪৬ সালের ১৭ মে টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার কোনড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আবদুল বাতেন টাঙ্গাইল তার নিজের নামে ‘বাতেন বাহিনী’ নামে একটি গেরিলা বাহিনী গঠন করেন। তার ‘বাতেন বাহিনী’ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা ও ঢাকার কিছু এলাকায় যুদ্ধে অংশ নেয়।
ব্যারিস্টার আমিনুল হক
ব্যারিস্টার আমিনুল হক ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী। তিনি ২১ এপ্রিল তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি রাজশাহী-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এবং ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রীসভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আশরাফুনন্নেছা মোশারফ
এ বছরের জানুয়ারিতে সবাইকে ছেড়ে চলে যান আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং নারী সংরক্ষিত আসনে মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য আশরাফুন্নেছা মোশারফ। ১৮ জানুয়ারি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আশরাফুন্নেছা মোশাররফ ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০০৯ সালে মহিলা সংরক্ষিত আসন থেকে তিনি নির্বাচিত হন।
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের মধ্যে যাদের হারালাম:
পুরো বছরই ছিল হারানোর বেদনা। আমরা ২০১৯ সালে হারিয়েছি আমাদের কিংবদন্তীদের যারা আজীবন থাকবেন আমাদের হৃদয়ে অমর হয়ে।
স্যার ফজলে হাসান আবেদ
২০ ডিসেম্বর পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল তদানীন্তন সিলেটের হবিগঞ্জ মহকুমার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। লন্ডনে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে পড়ালেখা করেন জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে শেখানো এই মানুষটি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় চাকরি ছেড়ে লন্ডনে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ এবং ‘হেলপ বাংলাদেশ’ নামে দুটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে আসেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ভারত-প্রত্যাগত শরণার্থীদের জরুরি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। এ লক্ষ্যে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত শাল্লা এলাকায় ফিরে আসা শরণার্থীদের নিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে তিনি।
বর্তমানে এশিয়া ও আফ্রিকার ১১টি দেশে এর কার্যক্রম বিস্তৃত রয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত টানা চার বছর জেনেভাভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংস্থা ‘এনজিও অ্যাডভাইজার’ কর্তৃক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এনজিও হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে ব্র্যাক।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখায় অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতিতে ভূষিত হয়েছেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ২০১৪ ও ২০১৭ সালে ফরচুন ম্যাগাজিন কর্তৃক বিশ্বের শীর্ষ প্রভাবশালী ৫০ জন ব্যক্তিত্বের অন্যতম হিসেবে উল্লিখিত হন তিনি। এ বছর নেদারল্যান্ডের রাজা কর্তৃক নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত হন ফজলে হাসান আবেদ।
পলান সরকার
মার্চে আমরা হারিয়েছি একুশে পদকে ভূষিত একজন সমাজকর্মীকে। মার্চের ১ তারিখ রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার বাউশার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন পলান সরকার।
১৯৯০ সাল থেকে বাউসা হারুন অর রসিদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিবছর যারা মেধাতালিকায় প্রথম দশটি স্থান অর্জন করতো তাদের বই উপহার দিতেন পলান সরকার। এরপর অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও তার কাছে বইয়ের আবদার করলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তাদেরও বই দেবেন, তবে তা ফেরত দিতে হবে।
এরপর গ্রামের মানুষও তার কাছে বই চাইতে শুরু করে। এভাবেই গড়ে ওঠে বই পড়া আন্দোলনের ভিত। ১৯৯২ সালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ায় পলান সরকারকে হাঁটার অভ্যাস করতে হয়। তখনই তার মাথায় এক অভিনব চিন্তা আসে। তিনি কাঁধে ঝোলাভর্তি বই নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন।
মাইলের পর মাইল হেঁটে একেকদিন একেক গ্রামে বই পৌঁছে দিতেন। বাড়ি বাড়ি কড়া নেড়ে আগের সপ্তাহের বই ফেরত নিয়ে নতুন বই পড়তে দেন। এলাকাবাসীর কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘বইওয়ালা দাদুভাই’ হিসেবে।
অজয় রায়
এ বছরের ডিসেম্বরে একুশে পদক প্রাপ্ত একজন পদার্থবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞান লেখক এবং মানবাধিকার কর্মী অজয় রায়কে হারিয়েছি আমরা। ৯ ডিসেম্বরে ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের লীডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। অজয় রায়ের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী নৃশংস গণহত্যা শুরু করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসস্থল ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
অধ্যাপক অজয় রায় বাংলাদেশে বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার পেছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চ গড়ে তোলেন। তিনি বিজ্ঞানকে তরুণ প্রজন্মে বিজ্ঞান ছড়িয়ে দেবার প্রয়াসে তিনি বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনার এবং সভার আয়োজন করতেন।
রওশন আরা বাচ্চু
৫২ বাংলা ভাষা আন্দোলনের একজন সংগ্রামী ছিলেন রওশন আরা বাচ্চু। তিনি ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
রওশন আরা ১৭ ডিসেম্বর ১৯৩২ সালে সিলেটের মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার উছলাপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩ সালে দর্শনে অনার্স করেন। এরপর ১৯৬৫ সালে বি এড এবং ১৯৭৪ সালে ইতিহাসে এম এ করেন। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং উইম্যান স্টুডেন্টস রেসিডেন্স এর সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি গণতান্ত্রিক প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্ট এর সাথে ছাত্র রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন।
রওশন আরা বাচ্চু বায়ান্নোর উত্তাল একুশে ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় মেয়েদের যে মিছিল পুলিশের ব্যারিকেডে ভেঙেছিল, সেই মিছিলের মুখ রওশন আরা বাচ্চু মারা যান ৩ ডিসেম্বর।
একুশে ফেব্রুয়ারিতে যে ছাত্রনেতারা ১৪৪ ধারা ভাঙতে চেয়েছিলেন তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। সেদিন তার নেতৃত্বেই ইডেন মহিলা কলেজ এবং বাংলাবাজার বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমাবেশস্থলে সমবেত হয়।
মৌলভীবাজার জেলা কুলাউড়া থানার উছলাপাড়া গ্রামে ১৯৩২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর রওশন আরা বাচ্চুর জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার দিনগুলোতেই রওশন আরা গণতান্ত্রিক প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্টে যোগ দিয়ে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং উইম্যান স্টুডেন্টস রেসিডেন্সের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
এছাড়াও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ হারিয়েছে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মো. আব্দুল কাদির, সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শ্যামল কান্তি বিশ্বাসকে।
সাহিত্য অঙ্গনে যাদের হারালাম:
২০১৯ সালে সাহিত্য অঙ্গনের বেশ কয়েকটি তারকা আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছেন। প্রিয়জনদের চোখের জলে ভাসিয়ে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেছেন তারা। রেখে গেছেন কাজ আর স্মৃতিমুখর দিন। এক নজর দেখে আসা যাক, আমারা যাদের হারালাম এই বছর।
আল মাহমুদ
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদকে আমরা হারিয়েছি। ৯ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কবি দীর্ঘদিন ধরে নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌড়াইল গ্রামের মোল্লাবাড়িতে ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে আল মাহমুদের প্রথম কবিতার বই ‘লোক লোকান্তর’ প্রকাশিত হয়। এরপর প্রকাশিত হয়, ‘কালের কলস’ ও ‘সোনালী কাবিন’। কবিতা ছাড়াও আল মাহমুদ লিখেছেন উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ ও আত্মজীবনী।
সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় তিনি অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, শিশু একাডেমী (অগ্রণী ব্যাংক) পুরস্কার ও কলকাতার ভানুসিংহ সম্মাননা এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
রিজিয়া রহমান
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের অগ্রজ কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমান মারা যান গত ১৬ অগাস্ট। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ১৯৩৯ সালে কলকাতার ভবানীপুরে রিজিয়া রহমানের জন্ম। দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে তিনি এপার বাংলায় চলে আসেন।
শৈশব থেকে জীবনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা আর নানা জায়গায় দেখা নিম্নবর্গের মানুষের জীবনের গল্প উঠে এসেছে রিজিয়া রহমানের লেখায়। বস্তিবাসীর ক্লেদাক্ত জীবন আর যৌনপল্লীর যন্ত্রণাকাতর প্রাত্যহিকতা যেমন তার উপন্যাসে এসেছে, তেমনি চট্টগ্রামে পর্তুগিজ জলদস্যুদের উৎপাত আর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের বীরত্বও তার লেখায় প্রেরণা যুগিয়েছে।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান রিজিয়া রহমান। আর সরকার এ বছরই তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। রিজিয়া রহমান বেশ কিছুদিন একটি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কার্যপরিচালক এবং জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা বোর্ডের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রবিউল হুসাইন
একুশে পদকজয়ী কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন রাজধানীর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ২৬ নভেম্বর। ৭৬ বছর রবিউল হুসাইন রক্তের জটিলতায় ভুগছিলেন। ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক পাওয়া রবিউল হুসাইন কাজ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের জন্যও। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্রের ট্রাস্টি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য।
স্থপতি রবিউলের ঝোঁক ছিল ইটের কাজের দিকে। তার নকশায় বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ কাউন্সিল (বিএআরসি) ভবনটি ছিল তার প্রিয় একটি কাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তি ও স্বাধীনতা তোরণ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট, ভাসানী হল, বঙ্গবন্ধু হল, শেখ হাসিনা হল, খালেদা জিয়া হল, ওয়াজেদ মিয়া সায়েন্স কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম ও একাডেমিক ভবন কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে রবিউল হুসাইনের নকশায়।
একুশে পদক ছাড়াও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ও সার্চ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই কবি।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে যাদের হারালাম:
অনেক স্বপ্ন, অর্জনের পাশাপাশি ২০১৯ আমাদের দিয়েছে কিছু হারানোর ক্ষত। সংস্কৃতি অঙ্গন হারিয়েছে অবদান রাখা বেশ কজন কৃতি ব্যক্তিত্বকে। একসময় যারা তাদের প্রতিভার আলোয় আলোকিত করেছে শিল্পাঙ্গন। তারা আজ চিরদিনের জন্য পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। বছর শেষে ফিরে দেখার এই আয়োজন শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি তাদের।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল
২০১৯ সালের শুরুতেই জানুয়ারিতে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বীর মুক্তিযোদ্ধা ষাটের দশকের সিনেমার প্রখ্যাত প্রযোজক গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ইফতেখারুল আলম। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হানের পরিচালনায় তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি ‘সঙ্গম’ নির্মিত হয় তার প্রযোজনায়। চলচ্চিত্র জগতের মানুষদের কাছে ইফতেখারুল আলম কিসলু নামে পরিচিত ছিলেন তিনি।
১৯৬৬ সালে তার প্রযোজনায় নির্মিত হয় রাজ্জাক-সুচন্দা জুটির প্রথম ছবি ‘বেহুলা । স্বাধীনতার পর প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘ওরা ১১ জন’ও প্রযোজনা করেন তিনি। এছাড়া ‘আনোয়ারা’, ‘আলিবাবা’ ও ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সংসার’র মতো অসংখ্য ছবি প্রযোজনা করেছেন।৭০ দশকের শেষ লগ্ন থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পসহ সংগীতশিল্পে সক্রিয় ছিলেন বুলবুল। অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুরকার ছিলেন তিনি।
শাহনাজ রহমতউল্লাহ
মার্চ মাসে সবাইকে ছেড়ে চলে যান কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ। ২৩ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাসায় মারা যান তিনি।সংগীতে অবদানের জন্য একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের সংগীতজীবনে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে, এবার বল’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে মারা গেছেন বেশ ক’জন গুণীজন।
সুবীর নন্দী
মে মাসে পৃথিবী থেকে চিরকালের জন্য হারিয়ে গেছেন আরও এক গুণীজন। তিনি সবার প্রিয় কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী।৭ মে দেহত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের এমআইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ৬৬ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। দীর্ঘ ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে আড়াই হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন সুবীর নন্দী। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। সেইসঙ্গে কোটি মানুষের ভালোবাসা ও অনেক স্বীকৃতি পেয়েছেন এই গুনী কণ্ঠশিল্পী।
খ্যাতিমান অভিনেতা টেলি সামাদ
গুণী অভিনেতা টেলি সামাদ ৬ এপ্রিল রাজধানীর একটি বেসরকারী মারা গেছেন। সত্তর ও আশির দশকের শক্তিমান এ অভিনেতার প্রকৃত নাম আবদুস সামাদ। অভিনয়ের জন্যই ‘টেলি’ উপাধি পান তিনি। শুধু অভিনয় নয়, গান ও ছবি আঁকাতেও সমান পারদর্শি ছিলেন টেলি সামাদ।
হুমায়ূন সাধু
তরুণ নাট্য নির্মাতা ও অভিনেতা হুমায়ূন সাধু। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ অক্টোবর তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সিনেমা নির্মাণের স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। কিন্তু তার আগেই বিদায় নিতে হলো তাকে।
মমতাজউদদীন আহমদ
বিশিষ্ট নাট্যকার অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক মমতাজউদ্দীন আহমদকে এ বছরেই আমরা হারিয়েছি। ২ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
মমতাজউদদীন ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত মালদহ জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বি.এ (অনার্স) ও এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
তিনি ভারতের দিল্লী, জয়পুর এবং কলকাতায় নাট্যদলের নেতা হিসাবে ভ্রমণ ও নাট্য মঞ্চায়ন করেন। তার লেখা নাটক ‘কি চাহ শঙ্খ চিল’ এবং ‘রাজা অনুস্বরের পালা’ রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে নিয়মিত কলামও লিখে থাকেন। এছাড়াও তার বেশ কিছু নাটক, বাংলাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
খালিদ হোসেন
মে মাসে সবাইকে ছেড়ে চির বিদায় নিয়েছেন বরেণ্য নজরুলসংগীত শিল্পী খালিদ হোসেন। গত ২২ মে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। দীর্ঘদিন হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। খালিদ হোসেনের গাওয়া নজরুলসংগীতের ছয়টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২০০০ সালে একুশে পদক পেয়েছেন। আরো পেয়েছেন নজরুল একাডেমি পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদক, কলকাতা থেকে চুরুলিয়া পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা।
মায়া ঘোষ
গত ১৯ মে মারা গেলেন অভিনেত্রী মায়া ঘোষ। ২০০০ সালে মায়া ঘোষের ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার হাসপাতালে তার চিকিৎসা শুরু হয়। ২০০৯ সালের দিকে অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর কিডনি, লিভার ও হাঁটুর সমস্যা দেখা দেয়। এতসব সমস্যার সঙ্গে পেরে উঠেননি এই অভিনেত্রী। পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে নিজেকে নিয়ে গেলেন অদেখা ভুবনে।
এছাড়াও মে মাসে মারা গেছেন মঞ্চ ও ছোট পর্দার অভিনয়শিল্পী তমা খান। গত ৮ মে রাজধানীর মিরপুরে তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। মিরপুরের ভাড়া বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়।
মিডিয়া অঙ্গনে যাদের হারালাম:
মিডিয়া অঙ্গনে শূন্যস্থান বেড়েই চলেছে। যাদেরকে ঘিরে এক সময় পত্রিকার পাতা আলোকিত হয়ে থাকতো তাদের অনেকেই হারিয়ে যাচ্ছেন একে একে। চলতি বছরেও শোকের মিছিল ছিল এ অঙ্গনে। একঝাঁক গুণী মানুষ হারিয়ে গেলেন। সহকর্মী আর প্রিয়জনদের চোখের জলে ভাসিয়ে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেছেন তারা। রেখে গেছেন কাজ আর স্মৃতিমুখর দিন। এক নজর দেখে আসা যাক, আমারা যাদের হারালাম এই বছর।
শাহ আলমগীর
ফেব্রুয়ারিতে মারা গেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহ আলমগীর। তিনি ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন।
প্রথম আলো প্রকাশের সময় থেকেই তিনি পত্রিকাটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৮ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত যুগ্ম বার্তা-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর তিনি টেলিভিশনে কাজ শুরু করেন। তিনি চ্যানেল আই এর প্রধান বার্তা সম্পাদক, একুশে টেলিভিশনের বার্তা প্রধান, যমুনা টেলিভিশনে পরিচালক (বার্তা) এবং মাছরাঙা টেলিভিশনে বার্তা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মাহফুজ উল্লাহ
একজন লেখক, সাংবাদিক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও পরিবেশবিদ মাহফুজ উল্লাহ। তিনি প্রথম বাংলাদেশে পরিবেশ সাংবাদিকতার সূচনা করেন। মাহফুজ উল্লাহ ২৭ এপ্রিল ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় ১০টা ৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন।
মাহফুজ উল্লাহ ১৯৫০ সালের ১০ মার্চ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের গোপালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হিসেবে ঊনসত্তরের ১১ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মাহফুজ উল্লাহ বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৫০-এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। যার মধ্যে বেশ কিছু পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে সংগ্রহীত আছে।
গোলাম সারওয়ার
গোলাম সারওয়ার (১ এপ্রিল ১৯৪৩ - ১৩ আগস্ট ২০১৮) একজন স্বনামধন্য বাংলাদেশী সাংবাদিক ও কলাম লেখক। তার সাংবাদিকতার জীবন শুরু হয় ১৯৬৩ সালে দৈনিক পয়গম দিয়ে। এরপর তিনি যুক্ত ছিলেন দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক সমকাল এর মত শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার দেশের সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি ২০১৬ সালে কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (সিজেএফবি) আজীবন সম্মাননা এবং ২০১৭ সালে আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন।
গোলাম সারওয়ারের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১ এপ্রিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বরিশাল জেলার বানারীপাড়ায়। তার পরিবার ছিল এলাকার সম্ভ্রান্ত মুসলিম। ছোটবেলা থেকেই তার লেখালেখির প্রতি আগ্রহ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি লেখালেখিতে সুনাম অর্জন করেছেন। তার প্রকাশিত গন্থের মধ্যে ছড়াগ্রন্থ রঙিন বেলুন এবং প্রবন্ধ সংকলন সম্পাদকের জবানবন্দি, অমিয় গরল, আমার যত কথা, স্বপ্ন বেঁচে থাক উল্লেখযোগ্য। সাংবাদিকতা ছাড়াও তিনি সেন্সর বোর্ডের আপিল বিভাগের সদস্য এবং সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি একাধিকবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আমানুল্লাহ কবীর
সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর চিরবিদায় নেন ১৬ জানুয়ারি, ৭২ বছর বয়সে। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি ডায়াবেটিস ও লিভারের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের পাশাপাশি এরশাদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনেও পেশাজীবীদের মধ্যে নেতৃত্বের কাতারে ছিলেন আমানুল্লাহ কবীর।
১৯৪৭ সালের ২৪ জানুয়ারি জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন আমানুল্লাহ কবীর। দীর্ঘ পেশাজীবনে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষার সংবাদপত্রেই তিনি কাজ করেছেন। ১৯৯১ সালে এস এম আলীর সম্পাদনায় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার প্রকাশিত হলে তার প্রথম বার্তা সম্পাদক ছিলেন আমানুল্লাহ কবীর। ওই বছরের শেষ দিকে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফে যোগ দেন তিনি।
বেক্সিমকোর মালিকানায় দৈনিক ইনডিপেনডেন্টের প্রতিষ্ঠাকালীন নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন আমানুল্লাহ কবীর। পরে বিএনপি সরকারের সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যম বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। আমানুল্লাহ কবীরের সম্পাদনায় ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় বাংলা দৈনিক আমার দেশ। প্রায় পাঁচ দশকের পেশা জীবনের শেষ সময়ে, শেষ পাঁচটি বছর আমানুল্লাহ কবীর ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে।
১৯৮০ আর ৯০ এর দশকে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর নেতৃত্বের পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন আমানুল্লাহ কবীর। সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো তখনও দলীয় মেরুকরণে বিভক্ত হয়নি। অবিভক্ত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নে দুই মেয়াদে মহাসচিব এবং পরে সভাপতি ছিলেন তিনি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এমবি/