নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ
প্রকাশিত : ০৯:০৯, ১৭ মে ২০২০
বাঙালির নৃত্যচর্চার নবধারার প্রবর্তক, বিশ্বমঞ্চের এক উজ্জ্বল নাম বুলবুল চৌধুরী। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী। এ দেশের নাচকে শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করেছেন বুলবুল চৌধুরী। নৃত্যশিল্পী থেকে নৃত্যাচার্য হিসেবে উন্নীত করেছেন নিজেকেও। মূলত তার হাত ধরেই এ দেশের নৃত্যশিল্প সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যায়।
বুলবুল চৌধুরীর জন্ম বগুড়ায়, ১৯১৯ সালের ১ জানুয়ারি। পিতৃপ্রদত্ত নাম রশিদ আহমেদ চৌধুরী, পারিবারিক নাম টুনু। বাবা আজমুল্লাহ চৌধুরী ও মা মাহফুজা খাতুন। পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের চুনতি গ্রামে। মানিকগঞ্জ জিলা স্কুল থেকে চার বিষয়ে লেটার মার্কসসহ ম্যাট্রিকুলেশন (১৯৩৪), প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (১৯৩৬), স্কটিশ চার্চ কলেজে স্নাতক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর (১৯৪০) ডিগ্রি লাভ করেন।
মানিকগঞ্জ স্কুলে নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে বুলবুল চৌধুরীর শিল্পজগতে প্রবেশ। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তার প্রতিভা বিকাশে সহযোগিতা করেন শিশুদের মুক্ত বায়ু সেবন সমিতির সভানেত্রী শ্রীমতি হেমলতা মিত্র। খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী সাধনা বসুর সঙ্গে যৌথভাবে পরিবেশন করেন ‘কচ ও দেবযানী’, ‘মেঘদূত’, ‘স্ট্রিট সিঙ্গার’ নৃত্যনাট্য। ১৯৩৮ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি ফার্স্ট এম্পায়ার মঞ্চে হাজার বছরের ভারতীয় নৃত্যরীতিকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করেন সুগন্ধা নৃত্যনাট্যে। সংগঠনপ্রিয় বুলবুল ছাত্রাবস্থায় গড়ে তুলেছিলেন ‘কলকাতা কালচারাল সেন্টার’। পরে ‘ওরিয়েন্টাল ফাইন আর্টস অ্যাসোসিয়েশন’ বা ওফা। এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বুলবুল। বুলবুল চৌধুরী শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন কলকাতা শহরে। তিনি সহশিল্পী বাঙালি খ্রিস্টান প্রতিভা মোদককে বিয়ে করেন। প্রতিভার নাম হয় আফরোজা বুলবুল। পরে তাদের তিনটি সন্তান হয়- শহীদ আহমেদ চৌধুরী, নার্গিস ও ফরিদ চৌধুরী।
১৯৫১ সালে বুলবুল চৌধুরী শিল্পীদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। তারা নৃত্য পরিবেশন করে ১৫ অক্টোবর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হলে।
নৃত্যনাট্য ও বৃন্দনাচসহ বুলবুল কৃতনৃত্য ৮২টি, যথা- চাতকনৃত্য, আবাহন, নৃত্যবিলাস, কবি ও বসন্ত, তিন ভবঘুরের মিলন, মরুসংগীত, অজন্তা জাগরণ, হোটেলে একরাত্রি, ইরানের পান্থশালায়, মেঘদূত, মালকোষ, যেন ভুলে না যাই, প্রেরণা, সাপুড় অভিমন্যু, চাঁদ সুলতানা, রাসলীলা, ব্রজবিলাস, কুমুদিনী, উত্তরা অভিমন্যু, হারেম নত্তর্কী, ক্ষুধিত পাষাণ, দুন্দভির আহ্বান, আগুন ও প্রজাপতি, রূপক, বসন্ত বাহার, কৃষাণ কৃষাণী, ইন্দ্রসভা, ভারত ছাড়ো, শিব ও দেবযানী, ঊষানৃত্য, সাগর সঙ্গম, রাধাকৃষ্ণ, হাফিজের স্বপ্ন উল্লেখযোগ্য। বুলবুলের নৃত্যবিন্যাসে বিশদভাবে উঠে এসেছে মুসলিম ঐতিহ্য।
১৯৫৪ এর ১৭ মে চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালে বুলবুল চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন। কলকাতায় তিনজলা কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
বুলবুল চৌধুরীর আকস্মিক প্রয়াণের পর ১৯৫৫ সালের ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় বুলবুল স্মৃতি কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫৫ সালের ১৭ মে তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে বুলবুলের বন্ধু মাহমুদ নুরুল হুদা, আফরোজা বুলবুলের উদ্যোগে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা হয় ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমি’ (বাফা)।
এসএ/