ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪

২২ বলে ৫৫! অবিশ্বাস্য জয় কোহলিদের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:০৭, ১৭ অক্টোবর ২০২০

এক কথায় দুরন্ত, দুর্বার এবি ডি ভিলিয়ার্স। অসাধারণ দক্ষতায় প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে জয় ছিনিয়ে আনলেন শেষ ওভারে। যাতে ২ বল বাকি থাকতেই রাজস্থান রয়্যালসকে (১৭৭-৬) ৭ উইকেটে হারালো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (১৭৯-৩)। ২২ বলে আক্রমণাত্মক ৫৫ রানের ইনিংসে তফাৎ গড়ে দিলেন ভিলিয়ার্স। তাঁর ইনিংসে ছিল ৬টি ছক্কার সঙ্গে ১টি মাত্র চারের মার।

১৭৮ রানের জয়ের লক্ষ্য তাড়ায় এক সময় প্রবল চাপে ছিল ব্যাঙ্গালোর। পর পর দুই বলে ফিরেছিলেন দুই সেট ব্যাটসম্যান দেবদত্ত পাড়িকল ও বিরাট কোহলি। ১৩তম ওভারের শেষ বলে রাহুল তেওয়াটিয়াকে মারতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন পাড়িকল (৩৭ বলে ৩৫)। তার পর ১৪তম ওভারের প্রথম বলে কার্তিক ত্যাগীকে মারতে গিয়ে আউট হন বিরাট (৩২ বলে ৪৩)। 

অধিনায়কের ক্যাচটি দুর্দান্তভাবেই ধরেছিলেন তেওয়াটিয়া। ডিপ মিড উইকেটে মেরেছিলেন কোহলি। বল ধরে পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে শূন্যে ছুড়ে দিয়েছিলেন ওই ফিল্ডার। ভারসাম্য ফিরে আসার পর তা আবার ধরলেন পুনঃরায়। পাড়িকল ও বিরাট, দু’জনকে ফেরানোর ক্ষেত্রেই অবদান রাখলেন তেওয়াটিয়া।

ওই রান তাড়া করতে নেমে শুরুটাও ভালো হয়নি ব্যাঙ্গালোরের। চতুর্থ ওভারে শ্রেয়াস গোপালের বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন অ্যারন ফিঞ্চ (১১ বলে ১৪)। ২৩ রানে পড়েছিল প্রথম উইকেট। ৪ ওভারের শেষে বোর্ডে উঠেছিল ২৭ রান। পাওয়ারপ্লে-র ৬ ওভারের পর তা দাঁড়িয়েছিল ৪৭-এ। ৯ ওভারে সেটাই হয়েছিল ৬৪। এই সময়ে অবশ্য রাজস্থান তুলেছিল ৩ উইকেটে ৭৬ রান।

দেবদত্ত পাড়িকল ও বিরাট কোহলি এই সময়ে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বড় শট আসছিল না। চাপে পড়ে রাহুল তেওয়াটিয়াকে মারতে গিয়ে ফিরেছিলেন পাড়িকল। যাতে ১০২ রানেই পড়ে যায় তৃতীয় উইকেট। এরপর আগের ম্যাচের মতো ছয়ে নয়, এদিন চার নম্বরে এসেছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু, তাঁর সামনে ছিল কঠিন লক্ষ্য। শেষ ৬ ওভারে দরকার ছিল ৭৪ রান। সেটাই ক্রমশ দাঁড়ালো ৩ ওভারে ৪৫ এবং শেষ ১২ বলে ৩৫ রানে।

আর এমন সময়েই ফের নিজেকে চেনালেন এবি ডি। কেন তাঁকে ‘৩৬০ ডিগ্রি’ ব্যাটসম্য়ান বলা হয়, তা বোঝালেন আবারো। জয়দেব উনাদকাটকে মিড উইকেট, লং অন ও স্কোয়ার লেগে পর পর মারলেন তিন ছক্কা। গুরকিরাতও মারলেন বাউন্ডারি। যাতে ওই ওভারেই উঠল ২৫ রান। ফলে, শেয ওভারে ব্যাঙ্গালোরের দরকার ছিল মাত্র ১০ রান।

যদিও জোফ্রা আর্চারের করা প্রথম তিন বলে এসেছিল মাত্র ৫ রান। তবে চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে ম্যাচে দাঁড়ি টানলেন ডি ভিলিয়ার্স। 

তার আগে প্রথমার্ধের শেষে দুরন্ত ক্যাচ নিয়েছিলেন শাহবাজ আহমেদ। বাংলার অলরাউন্ডারের অবিশ্বাস্য ক্যাচে শেষ ওভারে ফিরেছিলেন রাজস্থান অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। প্রধানত তাঁর ৫৭ রানের ইনিংসের সুবাদেই টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে রাজস্থান তুলেছিল ১৭৭।

৩০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা স্টিভ স্মিথ শেষ পর্যন্ত থাকলে রাজস্থানের রান নিশ্চিতভাবে বাড়ত। কিন্তু ক্রিস মরিসের বলে সুইপার কভারে থাকা শাহবাজ যে দক্ষতায় স্মিথের ক্যাচ ধরেছিলেন তা প্রশংসা কাড়ল ক্রিকেটমহলের। ঠিকভাবে ক্যাচ নেওয়া হয়েছে কি না, তা পরে রিপ্লেতে দেখেও নেওয়া হয়। যাতে দেখা যায়, বল কোনওভাবেই জমিন স্পর্শ করেনি।

এদিন রাজস্থানে দেখা গিয়েছিল নতুন ওপেনিং জুটি। জস বাটলারকে ব্যাটিং অর্ডারে নিচে নামিয়ে শুরুতে বেন স্টোকসের সঙ্গে এসেছিলেন রবিন উথাপ্পা। পছন্দের ওপেনিংয়ে ফিরে এসে পুরনো মেজাজে ব্যাট করেছিলেন তিনি। তৃতীয় ওভারে ওয়াশিংটন সুন্দরকে চার বার সীমানার বাইরে পাঠিয়েছিলেন রবিন। চতুর্থ ওভারে ইসুরু উদানার বলেও চার-ছয় হাঁকিয়েছিলেন। আইপিএলে ৪৫০০ রানও পূর্ণ করেছিলেন তাঁর। মূলত, উথাপ্পার দাপটেই ৫ ওভার শেষে ৪৭ তুলেছিল রাজস্থান। ৩২ বলে এসেছিল পঞ্চাশ।

তার পরই পড়েছিল প্রথম উইকেট। বেন স্টোকস (১৯ বলে ১৫) ফিরেছিলেন ক্রিস মরিসের বলে। পাওয়ারপ্লে-র ছয় ওভারে এক উইকেটে ৫২ তুলেছিল রাজস্থান।

এই পরিস্থিতি থেকে হঠাৎই ৬৯ রানে তিন উইকেট হারিয়েছিল রাজস্থান। ম্যাচের অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসেই দু’উইকেট নিয়েছিলেন লেগস্পিনার যুজভেন্দ্র চাহাল। প্রথমে ফিরেছিলেন উথাপ্পা (২২ বলে ৪১)। উথাপ্পার ইনিংসে ছিল সাতটা চার ও একটা ছয়। পরের বলেই চাহাল ফিরিয়েছিলেন তিনে নামা সঞ্জু স্যামসনকে (৬ বলে ৯)।

রাজস্থানের ১০০ এসেছিল ৭৬ বলে। তিন উইকেট পড়ার পর দলকে টেনেছিলেন অধিনায়ক স্মিথ ও বাটলার। যখন মনে হচ্ছিল- এই জুটি বড় রানের দিকে নিয়ে চলেছে, তখনই ঘটেছিল ছন্দপতন। সেই মরিসের ঝালে পুড়লো রাজস্থান। চাহালকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন বাটলার (২৫ বলে ২৪)। চতুর্থ উইকেটে দু’জনের জুটিতে যোগ হয়েছিল ৫৮ রান। 

ধীরে শুরু করে ক্রমশ গতি বাড়িয়েছিলেন স্মিথ। প্রতিযোগিতায় এটা তাঁর তৃতীয় পঞ্চাশ। কঠিন অবস্থা থেকে তিনি ভরসা দিয়েছিলেন দলকে। অধিনায়কোচিত ইনিংসে রাজস্থান রয়্যালসকে পৌঁছে দিয়েছিলেন স্বস্তির অবস্থানে। দুরন্ত ক্যাচে শাহবাজ আহমেদ তাঁকে না ফেরালে আরও ভাল জায়গায় থাকত তারা। স্মিথের ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ১টি ছয়। রাহুল তেওয়াটিয়ার সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৪৬ রান যোগ করেছিলেন তিনি। তেওয়াটিয়া ১১ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকলেন। ব্যাঙ্গালোরের সেরা বোলার ছিলেন মরিস। ২৬ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। চহাল ৩৪ রানের বিনিময়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট।

এদিকে আজ শনিবারই আইপিএলে অভিষেক হয়েছিল বাংলার অলরাউন্ডার শাহবাজ আহমেদের। এদিন ব্যাঙ্গালোরের হয়ে কোটিপতি লিগে প্রথমবার নেমেছিলেন তিনি। টস হেরে দল ঘোষণার সময় আরসিবি অধিনায়ক বিরাট কোহলি তাঁকে আকর্ষণীয় প্রতিভা বলে চিহ্নিত করেছিলেন। তবে বাঁ-হাতি স্পিনে বিশেষ সাফল্য পেলেন না। দুই ওভারে দিলেন ১৮ রান। যদিও নিলেন দুরন্ত ক্যাচ।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি