ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

নিজেদের ফাঁদেই ধরা পড়ল টাইগাররা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:১৩, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করা প্যাটেলের উদযাপন

ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করা প্যাটেলের উদযাপন

স্পিনিং ও স্লো উইকেটের সুবিধা নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ধরাশায়ী করার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রথম দুই ম্যাচে জয় পায় বাংলাদেশ। তবে তৃতীয় ম্যাচে এসে নিজেদের পাতা সেই ফাঁদে নিজেরাই ধরা পড়ল টাইগাররা। দুই কিউয়ি স্পিনার আজাজ প্যাটেল ও কোল ম্যাককঞ্চির ঘূর্ণিতে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে কুপোকাত হলো স্বাগতিকরা। 

রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৫২ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে রিয়াদের দল। ৪ ওভার করে হাত ঘুরিয়ে প্যাটেল ১৬ রানে ৪টি ও ম্যাককঞ্চি ১৫ রানে ৩টি উইকেট নেন। এদিনই ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন প্যাটেল।

এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১২৮ রান করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৭৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এই জয়ে সিরিজে ব্যবধান কমালো নিউজিল্যান্ড। তবে এখনো ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস করতে নেমেই অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এটি ছিলো তার শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তবে এমন ম্যাচে টস ভাগ্যে জিততে পারেননি মাহমুদুল্লাহ। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড।

করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে এ ম্যাচে সফরকারীদের হয়ে ইনিংস শুরু করেন ফিন অ্যালেন। উদ্বোধনী জুটিতে অ্যালেনের সঙ্গী ছিলেন রাচিন রবীন্দ্র। ইনিংসের প্রথম ওভার করতে আসেন বাংলাদেশের স্পিনার মাহেদি হাসান। অ্যালেনের দুই বাউন্ডারিতে প্রথম ওভারে ১১ রান পায় নিউজিল্যান্ড।

স্পিনার নাসুম আহমেদের করা দ্বিতীয় ওভারে আরও একটি চার মারেন অ্যালেন। প্রথম দুই ওভারে মাহেদি ও নাসুমকে স্বাচ্ছেন্দ্যে খেলায়, তৃতীয় ওভারেই পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। অধিনায়কের সিদ্বান্তকে সঠিক প্রমাণ করেন মুস্তাফিজ। প্রথম বলেই অ্যালেনকে বিদায় করেন ফিজ। মিড-অনে মাহমুদুল্লাহকে ক্যাচ দেন ১০ বলে ১৫ রান করা অ্যালেন। মুস্তাফিজের ওভারটি ছিল ওই উইকেটসহ মেডেন।

অ্যালেন ফিরে গেলেও রানের চাকা সচল রাখেন রবীন্দ্র ও উইল ইয়ং। সাকিবের প্রথম ওভারে দু’টি বাউন্ডারি হাঁকান ইয়ং। পাওয়ার-প্লেতে স্বাচ্ছেন্দ্যে ব্যাট করে দলের স্কোর ৪০-এ নেন তারা। ইনিংসের সপ্তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমণে এসে চমক দেখান মিডিয়াম পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। চতুর্থ বলে ইয়ংকে ও শেষ বলে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে শিকার করেন তিনি। দু’জনই শিকার হন লেগ বিফোরের। 

ইয়ং ২০ বলে ২০ ও গ্র্যান্ডহোম খালি হাতে ফিরেন। এরপর উইকেটে সেট হয়ে থাকা রবীন্দ্রকে বিদায় করেন মাহমুদুল্লাহ। প্রতিপক্ষ অধিনায়কের বলে বোল্ড হবার আগে ২০ বলে ২টি চারে ২০ রান করেন রবীন্দ্রও। আর নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক টম ল্যাথামকে নিজের বলেই ক্যাচ নিয়ে দলকে বড়সড় ব্রেক-থ্রু এনে দেন মাহেদি। 

আগের ম্যাচে অপরাজিত ৬৫ রান করে দলকে দারুণভাবে লড়াইয়ে রেখেছিলেন ল্যাথাম। কিন্তু এবার তাকে ৯ বলের বেশি টিকতে দেননি মাহেদি। এতে ১১তম ওভারে ৬২ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। 

এ অবস্থায় দলের হাল ধরেন হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল। উইকেট বাঁচিয়ে খেলে ধীরলয়ে এগোতে থাকেন তারা। জুটিতে প্রথম ৩৬ বলে কোনো বাউন্ডারিই মারতে পারেননি তারা। ১৭তম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি আসে ব্লান্ডেলের ব্যাট থেকে। ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছিলো ৫ উইকেটে ৯৫ রান। রান রেট ছিলো ৬-এর নিচে।

তবে মুস্তাফিজের করা ১৮তম ওভারে নিকোলসের ২টি চারে ১৩ রান পায় নিউজিল্যান্ড। পরের ওভারে ১টি চার হাঁকান ব্লান্ডেল। ওই ওভারে আসে ৯ রান। আর মুস্তাফিজের করা শেষ ওভার থেকে ১১ রান তোলেন এই দুজনে। ১টি করে বাউন্ডারি মারেন দুই ব্যাটসম্যান। তবে এই ওভারে সাকিবের হাতে জীবন পান ব্লান্ডেল। শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্নই থাকেন নিকোলস ও ব্লানডেল। ষষ্ঠ উইকেটে ৫৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬৬ রান যোগ করেন তারা। এতে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১২৮ রানের লড়াই করার  পুঁজি পায় নিউজিল্যান্ড। 

নিকোলস ২৯ বলে ৩৬ এবং ব্লান্ডেল ৩০ বলে ৩০ রান করেন। ৩টি করে চার মারেন দুই ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের সাইফুদ্দিন ২টি, মাহেদি-মুস্তাফিজ-মাহমুদুল্লাহ ১টি করে উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ১২৯ রানের সহজ লক্ষ্যে নেমে শুরুটা ভালো ছিলো বাংলাদেশের। ২৩ বলে ২৩ রান যোগ করেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম ও লিটন দাস। প্রথম ওভারেই দু’টি চার আদায় করেন নাঈম। পরের ওভারে লিটনও বাউন্ডারি মারেন। তৃতীয় ওভারে ম্যাককঞ্চিতে পরপর দু’বলে চার মেরে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন লিটন। 

কিন্তু ঐ ওভারের পঞ্চম বলে নাঈম-লিটনের স্বাচ্ছন্দ্যময় ব্যাটিংয়ে ছেদ ঘটান স্পিনার ম্যাককঞ্চি। ১১ বলে ৩টি চারে ১৫ রান করা লিটনকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন তিনি। লিটনের বিদায়ে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পান মাহেদি। পিঞ্চ হিটার হিসেবে খেলতে নেমে ১ রানেই শিকার হন প্যাটেলের। 

মাহেদির পর বাংলাদেশ মিডল-অর্ডারকে দুমড়েমুচড়ে ফেলেন আজাজ প্যাটেল। আরও ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি। সাকিবকে শুন্য রানে, মাহমুদুল্লাহকে ৩ রানে ও আফিফ হোসেনকে শুন্য রানে বিদায় দেন প্যাটেল। তার  ঘূর্ণিতে ৪৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে কাঁপতে শুরু করে বাংলাদেশ। দুই ওপেনারের ২৩ রানের জুটির পর ২০ রানে মধ্যে ৬ উইকেট পতনে মহাবিপদে পড়ে স্বাগতিকরা।

সেখান থেকে দলকে খেলায় ফেরাতে সপ্তম উইকেটে সাবধানী লড়াই শুরু করেন মুশফিকুর রহিম ও উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান। ধীরলয়ে এগোচ্ছিলেন তারা। এই জুটি বড় হবার আগে নিউজিল্যান্ডকে সময়পযোগী ব্রেক-থ্রু এনে দেন ম্যাককঞ্চি। ৮ রান করা নুরুলকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান তিনি। জুটিতে ২২ বলে এসেছিলো ১৪ রান। 

নয় নম্বরে নামা সাইফুদ্দিনকেও ৮ রানে বন্দি করে ফেলেন ম্যাককঞ্চি। এতে ৬৬ রানে অষ্টম উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে চলে যায় টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত ইনিংসে ২ বল বাকী থাকতে ৭৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটি টাইগারদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান। প্রথমটিও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ৭০ রান। ম্যাচে মুশফিকের অপরাজিত ২০ রান, দলের পক্ষে সর্বোচ্চ। ইনিংসে ছিলনা কোনো ওভার বাউন্ডারি।

আগামী ৮ সেপ্টেম্বর একই ভেন্যুতে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে, বিকেল ৪টায়।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি