ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

টাইগারদের হতাশার বছরে উজ্জ্বল নারী ক্রিকেট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৪১, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১

চলতি দশকের প্রথম বছরটি ঘটনাবহুলই ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। কিছু গৌরবজনক কীর্তি অর্জিত হলেও মাঠের বাইরের সমস্যা এবং ধারাবাহিক হারের কারণে খেলার উন্নতি হয়েছে বাধাগ্রস্ত। অন্যদিকে স্বাভাবিকভাবেই মনোযোগ কিংবা আকর্ষণটা কম থাকলেও প্রথমবারের মতো নারী বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে নারী ক্রিকেট দল। তবে শোচনীয়ভাবেই ব্যর্থ হয়েছে সব সময় স্পটলাইটে থাকা পুরুষ ক্রিকেট। যে  বছরটিকে ভুলে যেতে চাইবে অনেকেই।

পুরুষ ক্রিকেটের সাফল্য ছিল, বিশেষভাবে ওয়ানডে ক্রিকেটে এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের নজির গড়ে টাইগাররা। তবে সব ফরম্যাটেই কিছু হার ঢেকে দিয়েছে সেই সাফল্যকে। হারের প্রতিটি গল্প বছরের শেষে একটি ব্যর্থতার মহাকাব্যে পরিণত হয়েছে। সেইসঙ্গে সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ এবং ইগো সমস্যার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। 

বিসিবির শীর্ষ কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়দের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির ঘটনা ছিল এবং কখনও কখনও সম্পর্কে ছেদ পড়েছিল বলেই মনে হয়েছিল। বছরটি হতাশার, দুঃস্বপ্নের মতো কেটে গেলেও মাঠের বাইরের বিভিন্ন সমস্যা ব্যথা এবং যন্ত্রণাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্ভবত ২০২১ সালকে মনে রাখতে চাইবে না। ঘটনাবহুল বছরটির সেইসব স্মৃতি তুলে ধরা হল ক্রীড়াপ্রেমিকদের জন্য।

একটি সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান:
এ বছর বাংলাদেশ সাতটি টেস্ট খেলেছে। জয় পেয়েছে কেবলমাত্র জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ম্যাচেই। বাকি পাঁচটিতে হেরেছে, ড্র করেছে একটি। বিপরীতে টাইগাররা এ বছর ওয়ানডে খেলেছে ১২টি। এ ফরম্যাটে সাফল্যের ধারাটা ভালোই ছিল। জিতেছে আটটি ম্যাচ। এ বছর সবচেয়ে বেশি জয় বাংলাদেশেরই। অবশ্য করোনার কারণে বেশ কিছু সিরিজ বাতিল হয়ে যাওয়ায়, অন্যান্য দলগুলো কম ম্যাচ খেলেছে।

আর টি-টোয়েন্টিতে এ বছর এক বর্ষপঞ্জিতে সর্বোচ্চ ২৭টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে তারা জিতেছে ১১টিতে, হেরেছে ১৬টি। আটটি জয় এসেছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই। বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে ঐ দু’টি সিরিজ খেলেছিল টাইগাররা।

সাকিবের প্রত্যাবর্তনের সিরিজ ও মায়ার্সের বিধ্বংসী ব্যাটিং: আইসিসি কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা শেষে এ বছরই ক্রিকেটে ফেরেন সাকিব। মাঠে ফিরে সাকিব প্রমাণ করেছেন, ক্রিকেট থেকে দূরে থাকলেও পারফরমেন্সে ছেদ পড়ে না। তিন ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করা সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হন সাকিব। সিরিজে ব্যাট হাতে ১১৩ রান ও ৬ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব।

কিন্তু সকাল সবসময় দিনের আলো দেখায় না। আশা করা হচ্ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজও জিতবে বাংলাদেশ। কিন্তু অভিষেক ম্যাচেই ব্যাট হাতে চমক দেখিয়েছেন কাইল মায়ার্স। বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেন ক্যারিবীয় এই ব্যাটার। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ৩৯৫ রানের টার্গেটে মায়ার্সের ডাবল-সেঞ্চুরিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে নাটকীয়ভাবে ৩ উইকেটে জয় তুলে নেয় ক্যারিবীয়রা। এতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টও হেরে বসে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ বনাম আইপিএল
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ শেষ হওয়ার আগে, শ্রীলঙ্কা টেস্ট বাদ দিয়ে আইপিএল খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করার কারণে আবারও শিরোনাম হয়ে ওঠেন সাকিব আল হাসান। তাঁর যুক্তি ছিল, আইপিএল খেলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। যদিও বাংলাদেশ ততক্ষণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে দুই ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে গেছে।

অবশ্য সাকিবের যুক্তিটা ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়নি। বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘আমি কাউকে খেলতে বাধ্য করব না। এই কঠিন সময়ে তাঁর উচিত ছিল দলকে সমর্থন করা এবং জয়ের পথে ফিরতে সাহায্য করা। কিন্তু সে আরেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছে।’

নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের দুঃস্বপ্ন: ক্রিকেটের যে কোনও ফরম্যাটে নিউজিল্যান্ডে বিপক্ষে প্রথম জয়ের সন্ধানে ছিল বাংলাদেশ। গেল মার্চে নিউজিল্যান্ডে তিন ওয়ানডে এবং তিন টি-টোয়েন্টি খেলতে গিয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু খালি হাতে ফিরতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সফরের একমাত্র অর্জন ছিল পেসার তাসকিন আহমেদের পারফরমেন্স। তার গতি, দুর্দান্ত লাইন এবং লেন্থ বাংলাদেশকে দারুণ এক পেসার উপহার দেয়। দীর্ঘদিন ধরে যে  পেসারের অপেক্ষায় ছিল টাইগাররা।

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্টের দেখা: কোয়ারেন্টাইন ও জৈব-সুরক্ষা বলয়ের মাঝে ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দু’টি টেস্ট ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম টেস্টটি ড্র হয়, আর দ্বিতীয়টি হেরে যায়। ১০ রানের জন্য ঐ টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি মিস করেন তামিম ইকবাল। তবে নাজমুল হোসাইন শান্ত ১৬৩ রান করেন। আর বাংলাদেশের বাইরে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান অধিনায়ক মোমিনুল হক।

দ্বিতীয় ম্যাচেও হার এড়াতে পারতো বাংলাদেশ, কিন্তু দক্ষতা ও সামর্থ্যের দিক দিয়ে বেশ পিছিয়ে ছিল টাইগাররা। ডাম্বুলায় প্রথম টেস্ট ড্র করে ৬ পয়েন্ট পেয়েছিল বাংলাদেশ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরে এটিই ছিল তাদের একমাত্র অর্জন। টেস্টটি ড্র করতে না পারলে পয়েন্ট ছাড়াই প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ করতে হতো তাদের।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানেড সিরিজ জয়:
ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে টেস্ট হারের প্রতিশোধ নেয় বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজটি আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের অর্ন্তভুক্ত ছিল। ২-১ ব্যবধানে সিরিজটি জিতে নেয় বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তবে এই সিরিজে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি সাকিব। তিন ম্যাচে মাত্র ১৯ রান ও ৩ উইকেট নেন এই অলরাউন্ডার।

মুশফিকের দুর্দান্ত অর্জন: প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি প্লেয়ার অফ দ্য মান্থ অ্যাওয়ার্ড পান মুশফিক। ২০২১ সালের মে-তে দুর্দান্ত পারফরমেন্সের জন্য সাবেক ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার এবং সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক এবং সমর্থকদের ভোটে মে মাসের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন মুশফিক।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐ সিরিজে ৬৯ গড়ে ২৩৬ রান করেন মুশফিক। দ্বিতীয় ম্যাচে ১২৫ রান করেন প্রথমবারের মত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে প্রধান ভূমিকা রাখেন তিনি। ওই মাসে মাস সেরা হওয়ার দৌঁড়ে  মুশফিকের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পাকিস্তানের হাসান আলি ও শ্রীলঙ্কার প্রবীন জয়াবিক্রমা।

নাটকে ভরা জিম্বাবুয়ে সফর: জিম্বাবুয়ে সফর দিয়েই বাংলাদেশের আসল সমস্যার শুরু হয়। বাংলাদেশ দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের একজন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে টেস্ট ক্রিকেটে পারফরমেন্স দিয়ে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে বলা হয়।

যে কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দলে সুযোগ পাননি মাহমুদুল্লাহ। তবে ইনজুরির কারণে মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজের জন্য মাহমুদুল্লাহকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে সুযোগ পেয়েই ১৫০ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন মাহমুদুল্লাহ। মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং দৃঢ়তায় ঐ ম্যাচে জয়ও পায় বাংলাদেশ। কিন্তু টেস্টের শেষ দিনে সতীর্থরা তাঁকে গার্ড অব অনার দিলে জন্ম হয় নতুন নাটকের।

টেস্ট সেরা ইনিংসের কয়েক ঘণ্টা পর ড্রেসিংরুমে সতীর্থদের তিনি জানান, টেস্ট ফরম্যাট থেকে অবসর নিবেন তিনি। কিন্তু বিসিবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেটি জানাননি। বিশেষ করে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন রিয়াদের হঠাৎ অবসরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মাহমুদুল্লাহর অবসরের গরম আলোচনার মধ্যেই বাংলাদেশ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলে এবং তামিম ইকবাল দলকে নেতৃত্ব দিতে দলে ফিরে আসেন। ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। এরপর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে বিশ্রাম নেন তামিম, আর পারিবারিক কারণে মুশফিকুর রহিম দেশে ফিরে আসেন।

বাংলাদেশের ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল তরুণ ক্রিকেটার শামীম হোসাইন পাটোয়ারি ও আফিফ হোসাইনের। তবে মাহমুদুল্লাহর অবসরে যে সমস্যা তৈরি হয় তাতেই ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সমস্যা আরও বাড়বে বলে মনে করা হয়।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়:
১৩১, ১২১, ১২৭, ১০৪ ও ১২২- বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম ইনিংসে এগুলো ছিল দলীয় স্কোর। এরপর পরের ইনিংসের রানগুলো ছিল এমন- ১০৮, ১২৩, ১১৭, ১০৫ ও ৬২।

টি-টোয়েন্টি এত কম স্কোর আগে দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। ৬২ স্কোরটি আলাদাভাবে মনে রাখবেন সবাই। ৬২ রানে অলআউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সব মিলিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে মোটে ১০৮২ রান হয়, যা টেস্ট খেলা দেশগুলোর দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সর্বনিম্ন। পাঁচ ম্যাচের সিরিজটি ৪-১ ব্যবধানে জিতে নেয় বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে নিচু ও ধীরগতির উইকেট বানিয়ে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেয় মাহমুদুল্লাহর দল। অবিশ্বাস্য সিরিজ জয়ের নায়ক ছিলেন সাকিব আল হাসান।

এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও উইকেট ছিল একই রকম। নিউজিল্যান্ড প্রথম ম্যাচে ৬০ রানে অলআউট হয়। বাংলাদেশ এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে তাদের সর্বনিম্ন স্কোর করা ট্রান্স-তাসমান প্রতিবেশীর বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিংয়ের গৌরব অর্জন করে। সেই লো-স্কোরিং সিরিজেও বাংলাদেশ ৩-২ ব্যবধানে জিতেছিল।

কিন্তু এই ফরম্যাটে এই দুই দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয় নিয়ে উঠে প্রশ্ন। সমালোচকরা যুক্তি দিয়েছিলেন, এই ফলাফলটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইতিবাচক হবে না, কারণ সেখানকার উইকেট সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে এবং সমালোচকদের মতই সঠিক প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশের কাছে হেরে যাওয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে। আর বাংলাদেশ ফেরে খালি হাতেই।

ইংল্যান্ডের সফর স্থগিত: সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে তিনটি ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি খেলার কথা ছিল ইংল্যান্ডের। কিন্তু সফরটি স্থগিত করে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস (ইসিবি) ক্রিকেট বোর্ড। তবে সিরিজটি বাতিল হয়নি। ২০২৩ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে আসবে ইংলিশরা। দুই দল তিনটি ওয়ানডে এবং বেশ কয়েকটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুই সপ্তাহে ছয়টি সীমিত ওভারের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। মূলত ইংলিশ খেলোয়াড়রা আইপিএল খেলতে আগ্রহী হওয়ায় সিরিজটি স্থগিত করা হয়েছিল।

‘তথাকথিত’ তামিম বনাম মাহমুদুল্লাহ বিবাদ:
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণার ঠিক আগে, তামিম তার নাম প্রত্যাহার করে নেন। কারণ এই ফরম্যাটে যারা নিয়মিত খেলছিলেন, তাদের সুযোগ দিতেই ওমন সিদ্ধান্ত নেন তামিম। এক ভিডিও বার্তায় তামিম বলেন, বিশ্বকাপের ইভেন্ট থেকে সরে যাবার আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাথে কথা বলেছেন তিনি। কিন্তু পরে গুঞ্জন ওঠে, টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর সাথে সমস্যার কারণে সরে দাঁড়ান তিনি। তামিম এই ফরম্যাটে অনিয়মিত ছিলেন এবং মার্চ ২০১৯ থেকে কোন ম্যাচ খেলেননি।

তাই বিশ্বকাপের জন্য দল নিয়ে আলোচনার সময় তামিমের নাম প্রস্তাব করা হলে, মাহমুদুল্লাহর যুক্তি ছিল, এই ফরম্যাটে নিয়মিত খেলা খেলোয়াড়দের বিবেচনা করা উচিত। তামিম যখন, টিম মিটিং এবং মাহমুদুল্লাহর অবস্থান সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন তখন টুর্নামেন্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে দ্বিধা বোধ করেননি। পরে বলা হয়েছিল, দুই সিনিয়র খেলোয়াাড়ের মধ্যে সমস্যা ছিল। কিন্তু তারা উভয়ই তা অস্বীকার করেছিলেন।

হতাশার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: ধীর গতির উইকেট বানিয়ে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিল। যা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। এতে ফলাফল দাঁড়ায়, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সুপার ফ্লপ। মাহমুদুল্লাহর নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে গিয়েছিল। যেখানে মাহমুদুল্লাহ-সাকিব ও মুশফিকদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাও ছিল। কিন্তু বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচেই হোচট খায় তারা। স্কটল্যান্ডের কাছে হার মানে। এরপর স্বাগতিক ওমান এবং পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ সুপার টুয়েলভে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। 

এর আগে, ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র একটি ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। এবারও রেকর্ডেও পরিবর্তন হয়নি। শ্রীলঙ্কা বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের খুব কাছে এসেছিল কিন্তু, ম্যাচটি হেরে যাওয়ায় বিপদেই পড়ে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচগুলোতে তাদের পারফমেন্স আরও খারাপ হয় এবং কোনও ম্যাচই জিততে পারেনি। পুরো আসর জুড়ে ব্যাটার-বোলারদের পারফরমেন্স মোটেও আশানুরুপ ছিল না। ফিল্ডিংয়ে ১০টি ক্যাচ ফেলে তারা।

মুশফিকের আয়নাতত্ত্ব: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে পাঁচ ম্যাচে ২৪৪টি ডট বল খেলে বাংলাদেশ। প্রতি ম্যাচে গড়ে ৪৯টি। টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সাফল্যের চাবিকাঠি হল, কম সংখ্যক ডট বল খেলা। কিন্তু বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন যখন অতিরিক্ত ডট বল খেলার জন্য খেলোয়াড়দের সমালোচনা করেন, তখন ক্রিকেটাররা এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বলে মনে করেন।

তবে স্কটল্যান্ডের কাছে হার মেনে নিতে পারেননি পাপন। খেলোয়াড়দের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিশেষ করে তিন সিনিয়র খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ধীরগতির ব্যাটিং পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি। সেই সমালোচনায় তেতে উঠেন ক্রিকেটাররা-বিশেষ করে তিন সিনিয়র ক্রিকেটারই এবং প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে এসে কড়া জবাব দেন সাকিব। মুশফিক সমালোচকদের নিজেদের আয়নায় মুখ দেখতে বলেন। তাঁর দেয়া বিবৃতিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্রভাবে ট্রোলড হয়। মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘সমালোচনা হতেই হবে। এটা কাম্য। তবে সুস্থ সমালোচনা সবার জন্য ভালো।’

বিশ্বকাপের পর মাহমুদুল্লাহর অধিনায়কত্ব, ডোমিঙ্গোর কোচিং এবং সার্বিক দল পরিকল্পনা, লক্ষ্য ও খেলোয়াড়দের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এবারের বিশ্বকাপের পারফরমেন্স স্পষ্ট করে দিয়েছে, ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা’।

কফিনে শেষ পেরেক:
হার দিয়েই শেষ হয়েছে হতাশাজনক বছরটি। ২০১৫ সালের পর পাকিস্তান প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজের জন্য বাংলাদেশ সফরে আসে। এবার দু’টি টেস্ট এবং তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য। ২০২১ সালের টাইগারদের বছরকে ভুলে যাওয়ার মতো করতে স্বাচ্ছন্দ্যে বাংলাদেশকে দুই ফরম্যাটেই হোয়াইটওয়াশ করেছে পাকিস্তান।

ঘরোয়া ক্রিকেট:
কোভিড-১৯ এর জন্য ২০২০ সালের বেশিরভাগ সময় ভেস্তে যাবার পর ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ঘরোয়া ক্রিকেট চালু করা হয়েছিল। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল), বাংলাদেশের সবচেয়ে কাঙ্খিত লিস্ট ‘এ’ টুর্নামেন্ট এক বছরের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হয় এবং আবাহনী লিমিটেড চ্যাম্পিয়ন হয়। স্থগিত হওয়া জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) নতুন করে শুরু হয় এবং আট মৌসুমের পর চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা। শেষ রাউন্ডে খুলনা বিভাগকে ১৭৯ রানে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো দেশের প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। গত বছর কোভিড-১৯ স্থগিত করার পর বিসিবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) অষ্টম আসরের জন্যও প্রস্তুত ছিল।

পরিশেষে একটি সুসংবাদ
সকল হতাশাজনক আলোচনা এবং ফলাফলের মধ্যে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জনের খবরটি উপভোগ করার মত ছিল। হারারেতে নয় দলের বাছাই পর্বের টুর্নামেন্ট বাতিল হবার পর বাংলাদেশ দল প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডে ২০২২ সালের নারী বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় কোভিডের নতুন ধরণ অমিক্রন দেখা দেয়ায় আয়োজক দেশ জিম্বাবুয়েসহ বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশ থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল টুর্নামেন্টটি স্থগিত করার ঘোষণা করে।

যাইহোক, পাকিস্তানকে ৩ উইকেটে হারিয়ে আসর শুরু করে নারী ক্রিকেট দল। এরপর যুক্তরাষ্ট্রকে ২৭০ রানে হারায় তারা। তবে বৃষ্টি আইনে থাইল্যান্ডের কাছে ১৬ রানে হারে তারা। তারপরও বি গ্রুপে শীর্ষে ছিলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পাশাপাশি পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের র‌্যাঙ্কিংয়ে ভিত্তিতে আইসিসি নারী বিশ্বকাপ ২০২২-এ খেলা যোগ্যতা অর্জন করে।

বর্ষসেরা খেলোয়াড়:
বাংলাদেশের পারফরমেন্স এতটাই হতাশাজনক ছিল যে, বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের জন্য বিশেষ করে একজনকে বেছে নেয়া কঠিন ছিল। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই মুশফিক কিছু ভালো ইনিংস খেলে ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা উজ্জ্বল ছিলেন। নাজমুল হোসাইন শান্ত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ১৬৩ রান করেছিলেন। শামীম পাটোয়ারী, আফিফ হোসাইনের মতো তরুণ খেলোয়াড়রাও দেখিয়েছেন প্রতিশ্রুতি। তবে বছরটা ছিল পেসার তাসকিন আহমেদের।

এ বছর বাধা নিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করেছিলেন তিনি। কয়েকবারের ইনজুরিতে পথও হারিয়েছিলেন। কিন্তু এই বছর তাসকিন দৃঢ়ভাবে ফিরে এসেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে গতির সাথে আপোষ না করেই দীর্ঘ স্পেলে বোলিং করেন এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, ধারাবাহিক ছিলেন তিনি। যে ধরনের বোলার বাংলাদেশে অনুপস্থিত ছিল। 

মুস্তাফিজুর মতো বোলার থাকলেও উইকেট যথেষ্ট ধীরগতির হওয়ায়, তাকে একজন সাধারণ বোলারই মনে হয়েছে। তাসকিন হলেন সেই বোলার, যিনি এ বছর একইসাথে দেশে এবং বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ম্যাচ উইনার হবার পারদর্শিতা দেখিয়েছেন।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি