পরোয়ানা জারিতে ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত’ লামিছানে
প্রকাশিত : ১৬:৩৩, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
তারকা স্পিনার সন্দিপ লামিছানে
এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর এখনও নেপালে ফেরেননি দেশটির জাতীয় দলের তারকা স্পিনার সন্দিপ লামিছানে। সহসা ফেরার সম্ভাবনাও নেই। পরোয়ানা জারিতে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে দাবি তার। নিজের অবস্থার উন্নতি হলে দ্রুতই দেশে ফিরবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই নেপালি তারকা।
সপ্তাহ তিনেক আগে লামিছানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন তারই দেশের এক কিশোরী। দ্রুতই অভিযোগের তদন্ত শুরু করে নেপাল পুলিশ। পরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয় লামিছানের বিরুদ্ধে। জরুরি সভা ডেকে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব নেপাল নিষিদ্ধ ঘোষণাও করে দেশটির ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকাকে।
২২ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনার তখন সিপিএল খেলার জন্য ছিলেন ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জে। অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করে তখন এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, দ্রুতই দেশে ফিরে পরিস্থিতির মোকাবেলা করবেন তিনি।
কিন্তু সোমবার সামাজিক মাধ্যমে তার লেখা থেকে জানা যায়, এখনও দেশে ফেরেননি লামিছানে। নেপালি ভাষায় নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে এই ক্রিকেটার জানান, আপাতত দেশে ফেরার অবস্থা তার নেই।
লামিছানে লেখেন, “সত্যিটা না জেনেই সংবাদমাধ্যমে ও সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা অভিযোগে আমাকে দায়ী করে একপাক্ষিক খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আমার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে এবং এসব অপপ্রচার আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও অসুস্থ করে তুলেছে। কী করব না করব বুঝে উঠতে পারছি না।”
তিনি আরও লেখেন, “একদিকে এসব যেমন মানসিকভাবে আমাকে প্রভাবিত করেছে, আরেক দিকে মানসিক চাপ ও স্বাস্থ্যগত সমস্যায় নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছি আমি। মিথ্যা অভিযোগে আমাকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করায় আমার মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় তা প্রভাব ফেলছে। চিকিৎসকের পরামর্শে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি। স্বাস্থ্যের ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে ওঠা মিথ্যা অভিযোগের মোকাবেলা করতে যত দ্রুত সম্ভব নেপালে ফেরার অপেক্ষায় আছি।”
নেপালের হয়ে এ পর্যন্ত ৩০টি ওয়ানডে ও ৪৪টি টি-টোয়েন্টি খেলা এই ক্রিকেটারের দাবি, তিনি গভীর চক্রান্তের শিকার।
সন্দ্বীপ লামিছানে বলেন, “ছেলেবেলা থেকেই আমি ক্রিকেটে আচ্ছন্ন, খুব সাধারণ পরিবারের মানুষ। ক্রিকেট ও দেশ আমার জীবনে সবকিছুর ওপরে। নেপালের ক্রিকেটকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পরিচিত করে তুলতে আমারও ভূমিকা আছে, সেটা খেলোয়াড় হিসেবে হোক বা অধিনায়ক হিসেবে। আমি একজন সৎ ক্রিকেটার, সবটুকু দিয়ে এই দেশের জন্য খেলেছি, কিন্তু আজ নিজেকে গুরুতর ষড়যন্ত্রের শিকার মনে হচ্ছে।”
“অভিযোগ প্রমাণের আগ পর্যন্ত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা উচিত নয়”- মনে করিয়ে দিয়ে ডানহাতি এই লেগ স্পিনার বলেন, তার অধিকার আছে মাথা উঁচু করে বাঁচার।
লামিছানে বলেন, “আমাকে দোষী প্রমাণের অপপ্রচারে বিরুদ্ধে আমার অনুপস্থিতিতেও আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। নেপালের সংবিধান অনুযায়ী যতটা বুঝি, অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত আমি নির্দোষ। সংবিধানেই আমার অধিকার আছে সম্মান নিয়ে বাঁচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে থাকার, গোপনীয়তা রক্ষা করার, স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখার ও নিজের মতো থাকার। আমার আইনী পরামর্শকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এসব অধিকার আমার আছে এখনও।”
তিনি আরও বলেন, “আমার শ্রদ্ধেয় বাবা-মা, ভাই, বন্ধু এবং ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং সবাইকে অনুরোধ করছি, আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়াবেন না।”
নিষিদ্ধ হওয়ার সময় নেপাল জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন লামিছানে। বিশ্ব ক্রিকেটে গত কয়েক বছরে নিজেকে পরিচিত করেছেন নেপাল ক্রিকেটের পোস্টার বয় হিসেবেই। নেপালের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে খেলছিলেন দেশের বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে। আইপিএল থেকে শুরু করে বিগ ব্যাশ, সিপিএল, বিপিএল, এলপিএলে খেলেছেন এই লেগ স্পিনার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তার পারফরম্যান্স দুর্দান্ত। ওয়ানডেতে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে দ্রুততম ৫০ উইকেট ও তৃতীয় দ্রুততম বোলার হিসেবে ৫০টি টি-টোয়েন্টি উইকেট নেয়ার কীর্তি আছে তার।
নেপালের হয়ে সর্বশেষ তিনি মাঠে নামেন কেনিয়ার বিপক্ষে নাইরোবিতে, গত ৩০ অগাস্ট। এরপর সিপিএলে জ্যামাইকা তালাওয়াশের হয়ে খেলার কথা থাকলেও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় আর খেলা হয়ে ওঠেনি লামিছানের।
এনএস//